শরীর এবং মন এ দুই নিয়ে হচ্ছে মানুষ। শরীরবিহীন যেমন মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, তেমনি মনবিহীন মানুষও অসম্ভব। সুস্থ-সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে গেলে সুস্থ শরীর এবং সুস্থ মন সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা যাতে আরও ছড়িয়ে পড়ে তার জন্য সারা পৃথিবী জুড়ে ১০ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। সেই থেকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালিত হয়। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হলো পৃথিবীর সকলের মানসিক স্বাস্থ্যশিক্ষা, সচেতনতার দিন। এটি ১৯৯২ সালে প্রথম পালন করা হয়। তবে কিছু দেশে একে মানসিক রোগ সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে কেউ না কেউ আত্মহত্যার মাধ্যমে প্রাণ হারান। আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। অধিকাংশ ব্যক্তিই আত্মহত্যার সময় কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকেন। সাধারণত সেটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না বা মানসিক রোগ নিশ্চিত হলেও যথাযথ চিকিৎসা করা হয় না বলেই আত্মহত্যা বেড়ে যাচ্ছে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মহত্যার এ হার কমিয়ে আনা সম্ভব। যেহেতু দেশে মানসিক ব্যাধির ব্যাপকতা অনেক বেশি ও চিকিৎসাসেবা অবহেলিত। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আক্রান্তরা এ রোগে চিকিৎসা পান না এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতে সরকারি সুপরিকল্পিত নীতিমালা, প্রশিক্ষিত মনোরোগ চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্যকর্মী, অপর্যপ্ত অর্থবরাদ্দ ও কুসংস্কারজনিত কারণে মানসিক রোগের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার ঘাটতি থেকেই গেছে। তাই সবার উচিত নিজের মনের যত্ন নেওয়া,অন্যের মনের যত্ন নেয়া। সমস্যা হলে চিকিৎসক কিংবা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীদের সাথে পরামর্শ নেওয়া। যে কোন মানসিক সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেকাংশেই সুস্থ থাকা সম্ভব। শরীর খারাপ হলে মানুষ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়, কিন্তু মন খারাপকে দেখা হয় গড়পড়তা এক মানসিক অবস্থা হিসেবে। মন খারাপ পুষে পুষে বিষণ্ণতার শেষ পর্যায়ে গিয়ে এ মানুষগুলো একদিন আত্মহত্যাকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে বেছে নেয়। বাংলাদেশে ৩ কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংখ্যা এর চেয়েও তিন-চারগুণ বেশি।তাই নিজে ও আশেপাশের মানুষদের নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে জোর দিতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে, তাহলে আত্মহত্যার হার কমে আসবে। ফলে আমাদের সবাইকে মানসিক রোগী সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, মানসিক রোগী যাতে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার আওতায় আসে সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।
Leave a Reply