1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. admin@dailyamarsomoy.com : admin :
জাপানে চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগ - দৈনিক আমার সময়

জাপানে চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগ

নাজমুল সাগরঃ 
    প্রকাশিত : সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

জাপানে উচ্চ বেতনের চাকরি ও ভিসার প্রলোভন দেখিয়ে এক সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা জাপানে চাকরির ভিসা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্ত কোনো ভিসা সরবরাহ করতে পারে না। অর্থ ফেরতের দাবি জানালে মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানি করা হয়। এমনকি হুমকি দিতে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ঘনিষ্ঠজন ও সাবেক সেনাসদস্যদের নাম ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

এই প্রতারণার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে “রেইওয়া আইটি অ্যান্ড কনসালটেন্সি” নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যার মূল হোতা মাসুদ রানা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বেকার যুবকদের আকৃষ্ট করে প্রতিষ্ঠানটি। চাকরির সুযোগের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি জাপানি ভাষা শেখানোর নামে প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ফি নেয়। তবে এদের বিদেশে লোক পাঠানোর কোনো সরকারি অনুমোদন নেই, এমনকি বায়রা (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ)-এর বৈধ সদস্যপদও নেই।

 

এই চক্র প্রতারণার জন্য অভিনব কৌশল গ্রহণ করেছে। ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জনের জন্য তারা প্রথমে একটি সেমিনার বা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে। সেখানে চাকরি প্রত্যাশীদের বলা হয়, জাপানে চাকরি পেতে হলে তাদের অবশ্যই জাপানি ভাষায় দক্ষ হতে হবে। এরপর শুরু হয় প্রতারণার প্রাথমিক প্রক্রিয়া; ভাষা শেখানোর নামে অর্থ আদায় করা, চাকরিপ্রার্থীদের ভাষা প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি ফি ও কোর্স ফি বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ দিতে হয়। চাকরিপ্রত্যাশীদের সামনে ল্যাপটপ স্ক্রিনে প্রার্থীদের দেখানো হয়, জাপানিরা নিজেই তার সাথে অনলাইনে ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে। তবে বাস্তবে এসব ইন্টারভিউ কোনো জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। ইন্টারভিউ শেষ হলে বলা হয়, তারা নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর ভিসা প্রসেসিং ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের নামে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা নেওয়া হয়। জাপানে উচ্চ বেতনে চাকরি ও ভিসা বাবদ অর্থ নেওয়ার পর দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করা হয়। প্রার্থীরা যখন তাদের ভিসার বিষয়ে জানতে চান, তখন আরও ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অপেক্ষা করতে বলা হয়। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পর যদি ভিসা দিতে ব্যর্থ হলে কেউ যদি টাকা ফেরত দেয়ার দাবি করে,  তাদের বিভিন্নভাবে ভয় দেখানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে সাবেক সেনাসদস্যদের নাম ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের চুপ করিয়ে দেওয়া হয়।

 

ভূক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতারক মাসুদ রানা নিজেকে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দিলেও তার প্রকৃত পেশাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ড্রাইভার ও সাবেক সেনাসদস্য সার্জেন্ট মনোয়ারের ছোট ভাই। এই পরিচয়ের কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সামরিক বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যকে ব্যবহার করে প্রতারণা চালিয়ে আসছেন। অনুসন্ধানী দলের তদন্তে উঠে এসেছে, মাসুদ রানা ও তার চক্র শুধু জাপানে চাকরির নামে নয়, বরং জমি কেনাবেচার প্রতারণার সঙ্গেও জড়িত। বিভিন্ন বিতর্কিত সম্পত্তি কম দামে কিনে, তা উচ্চমূল্যে বিক্রির নামে সাধারণ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। অভিযোগ রয়েছে, মাসুদ রানা ও তার সহযোগীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিতর্কিত ও জটিল জমি বায়নাসূত্রে কিনে তা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রির নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়। সেনাবাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যের নাম ব্যবহার করে তারা জমির মালিকানার ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে। অনেক ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে জমির মালিকানা বৈধ বলে প্রমাণের চেষ্টা চালানো হয়। এছাড়াও নাম প্রকাশ না করার সূত্রে মাসুদ রানার প্রতিবেশী জানান, সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলে যোগাযোগ স্থাপন করে। এদের অনেকের নামে বিশাল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জমির বৈধতা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। একজন বেদেশগামী জানান, মাসুদ রানার পরিবার অসংখ্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিদেশ গমনেচ্ছুকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ লেনদেন করা হয়। চক্রটি ভুয়া ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট তৈরি করে, যা বিভিন্ন দেশের ভিসা আবেদনকারীদের জালিয়াতির জন্য ব্যবহার করা হয় এবং অর্থ পাচারেও মাসুদ-মনোয়ার পরিবার জড়িত থাকতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

 

ভুক্তভোগীদের অনেকে প্রতারণার বিষয়টি ফেসবুক গ্রুপ ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেন। তবে মাসুদ রানার চক্র তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নাম পরিচয় ব্যবহার করে তাদের হয়রানি করে। অভিযোগ রয়েছে, তারা কিছু সাংবাদিক ও প্রভাবশালীদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করারও চেষ্টা চালিয়েছে। এই প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের দাবি, মাসুদ রানা ও তার চক্রের বিরুদ্ধে গভীর তদন্ত পরিচালনা করা হলে সাবেক সেনাপ্রধানের গোপন সম্পদ এবং অপরাধের আরও বহু তথ্য বেরিয়ে আসবে। শুধু জাপানের চাকরির নামে প্রতারণাই নয়, চক্রটি জমি কেনাবেচা, ব্যাংক জালিয়াতি ও অর্থ পাচারেও জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

এত বড় প্রতারণা চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগীরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, রেইওয়া আইটি অ্যান্ড কনসালটেন্সির বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত চালানো হোক এবং প্রতারক মাসুদ রানা ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হোক। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করার সাথে সাথে ভবিষ্যতে বিদেশে চাকরির নামে প্রতারণা বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হোক। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভুক্তভোগীরা বলছেন, যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে আরও হাজারো যুবক এই চক্রের প্রতারণার শিকার হবে এবং তাদের স্বপ্ন চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com