জাতীয় সঙ্গীতসহ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে সব ধরনের ষড়যন্ত্র রোধের প্রত্যয় নিয়ে এবং বগুড়ায় উদীচীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচিতে মৌলবাদীদের হামলার প্রতিবাদে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি আয়োজন করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। আজ শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় সত্যেন সেন চত্বর (জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে) এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। উদীচীর এ কর্মসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অন্যান্য ক্রিয়াশীল সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীরাও অংশগ্রহণ করেন।
সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কর্মসূচি। এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম-এর সভাপতিত্বে শুরু হয় কর্মসূচি। এ পর্বের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এছাড়া, বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর-এর সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র-এর সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন এবং সাবেক যুব নেতা গোলাম রাব্বি খান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বিরোধীতা করা থেকে শুরু করে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতসহ এদেশের আপামর জনসাধারণের প্রাণের সব বিষয় নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। একটি ধর্মান্ধ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যূত্থানের মূল সুরকে বিকৃত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বগুড়ায় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করে উদীচীসহ কয়েকটি সংগঠন। সেখানেও জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধা দেয় ছাত্রশিবির এবং ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। শুধু তাই নয়, বগুড়ায় উদীচীর জেলা কার্যালয়েও ভাঙচুর চালায় হামলাকারীরা। এসব ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর সাথে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান বক্তারা।
সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদ সেলিম বলেন, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত কারো দানে পাওয়া না– ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এগুলো অর্জন করা হয়েছে। কিন্তু, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকেই মৌলবাদী, স্বার্থান্বেষী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের মূল সুরকে নস্যাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে কোনভাবেই নস্যাৎ হতে দেয়া যাবে না মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, দেশের যেকোনো সংকটে উদীচীর কর্মীরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে রাস্তায় থেকেছে। তাই, যত আঘাতই আসুক না কেন, মানুষের স্বার্থবিরোধী কোন কর্মকাণ্ড সংগঠিত হলে উদীচী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তার সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। আরো একবার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ কর্মসূচি।
Leave a Reply