ব্যস্ত জীবনে দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা আমাদের নিত্যসঙ্গী। তাই তো অনেকে মাথা হালকা রাখতে একটু পর পর চা পান করেন। সেই সঙ্গে সিগারেটে টান দেওয়ার অভ্যাসও আছে অনেকের। এতেই মস্তিষ্কের বোঝা নেমে যায় বলে মনে করেন তারা। তবে সাধারণ মানুষের একাংশের এমন কর্মকা- দেখে চমকে যান বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তার ওপর যদি আবার চা খেতে খেতে ধূমপান করেন, তা হলে শরীরের আরো ক্ষতি ডেকে আনবেন। দেহে বাসা বাধবে একাধিক জটিল অসুখ। আজকের প্রতিবেদনে জানবেন চায়ের সঙ্গে ধূমপান করলে কী কী ক্ষতি হতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
হার্টের ক্ষতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটা সিগারেটে মোটামুটি ৬ থেকে ১২ গ্রাম নিকোটিন থাকে। আর এই উপাদান হার্টের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিকোটিনের কারসাজিতে হার্টের রক্তনালী সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে। যার জন্য স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এমনকী বিপদে ফেলতে পারে হার্ট অ্যাটাক। অপরদিকে আবার দিনে ৭-৮ কাপ চা খেলে হার্ট রেট বেড়ে যেতে পারে। ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে প্রেশার। সেই কারণেও হার্টের ক্ষতি হয়। তাই সাবধান হন।
ক্যানসার
গবেষণায় দেখা গেছে, চা খাওয়ার সময় ধূমপান করলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। আসলে চা শরীরের কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত করে তোলে। তখন সিগারেটে উপস্থিত টক্সিন কোষগুলোর ওপর অনায়াসে আঘাত হানে। বাড়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। বিশেষত, মুখগহ্বর, ফুসফুস ও গলার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব চায়ের সঙ্গে ধূমপান করার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
হজমশক্তি দুর্বল করে
বিশেষজ্ঞদের মতে, চা ও সিগারেটের কম্বিনেশন পেটের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই অভ্যাসের জন্য হজমশক্তি খুব দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এমনকী গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যাও নিতে পারে পিছু। বিশেষত, যাদের ইতিমধ্যেই আইবিএস, আইবিডি-এর মতো পেটের অসুখ রয়েছে, তাদেরই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। তাই চা ও সিগারেট এক সঙ্গে সেবন করা থেকে দূরে থাকবেন।
দুশ্চিন্তা বাড়বে
বেশির ভাগ মানুষ দুশ্চিন্তা কমাতে চা খাওয়ার পাশাপাশি ধূমপান করেন। তবে এর ফলাফল হয় উল্টো। এ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা কমার বদলে তা বেড়ে যেতে পারে। চায়ে উপস্থিত ক্যাফিন ও ট্যানিন মনের হাল বেহাল করে দিতে পারে। অপরদিকে সিগারেট শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। যেই কারণে মনের ভার বাড়ে। এর পাশাপাশি চায়ের সঙ্গে সিগারেটে সুখটান দিলে দাঁতের ক্ষতি হয়। দাঁত ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে এর ক্ষয় হওয়াও সম্ভব। তাই সাবধান হন।
কী ভাবে ছাড়বেন
চা পান ছাড়ার প্রয়োজন নেই। দিনে ৩ থেকে ৪ কাপ চা অবশ্যই খেতে পারেন। তবে এতে দুধ মেশাবেন না। পারলে চিনি ছাড়া চা খান। তাতে উপকার পাবেন। তবে এখন থেকেই চেষ্টা করুন ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার। এরপর থেকে একটাও সিগারেট নয়। মনকে শক্ত করুন। পারলে কোনো একটা জায়গায় সিগারেট না খাওয়ার ভালো ও খারাপ দিকগুলো লিখে নিন। মনে ধূমপানের ইচ্ছে জাগলেই সেই লেখা পড়ুন। এর পাশাপাশি নিকোটিন গামেরও সাহায্য নিতে পারেন। তবে হাজার চেষ্টার পরও যদি নেশা না ছাড়তে পারেন, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Leave a Reply