দেশে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়াসহ নানাবিধ রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় হাসপাতালের মেঝেতেও রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। জানা যায়, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগ ও ডায়রিয়ায় গত দুই মাসে দেশের দুই লাখ ২০ হাজার ৪২১ জন আক্রান্ত হয়েছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে, মোট আক্রান্তের ৪২.২৯ শতাংশ রোগীই পাওয়া গেছে বরিশাল বিভাগে। আর এ সময়ে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ২৬ জন ও ডায়রিয়ায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পরিসংখ্যানে সবচেয়ে এগিয়ে আছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। এই জেলায় মারা গেছে মোট ১৮ জন। অতিরিক্ত শীতের কারণে সবচেয়ে সমস্যায় আছে শিশু ও বৃদ্ধরা। সারা দেশেই জেঁকে বসেছে পৌষের হাড়কাঁপানো শীত। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে থেমে থেমে চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে দিনের বেশির ভাগ সময়। সঙ্গে থাকছে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ। শিশুরা ব্যাপক হারে আক্রান্ত হচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে। অনেক স্থানে হাসপাতালে রোগীর ভিড় এত বেশি যে তাদের চিকিৎসা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু রোগীদের নিয়ে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য মতে, এই শীত সহসা নাও কমতে পারে। আসতে পারে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ। সে ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বাড়তে পারে। শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র মানুষ। তাদের ভাঙা বেড়ার ঘরে শীতের কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া হু হু করে ঢুকে যায়। তাদের গরম জামাকাপড় বা কাঁথা-কম্বলেরও অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে তারা সহজেই আক্রান্ত হয়। পুষ্টিহীনতার শিকার এসব মানুষের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে। নবজাতকদের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। শীতে খালবিল, পুকুর, নালার পানি প্রায় শুকিয়ে আসে। সামান্য যে পানি থাকে তাতে দূষণ হয় বেশি। এই পানি ব্যবহার করে মানুষ সহজেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। আমরা আশা করি, দেশের যেসব এলাকায় আক্রান্তের হার অনেক বেশি, সেসব এলাকায় সরকার বিশেষ সেবা কর্মসূচি গ্রহণ করবে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষজনকে রক্ষায় সরকারকে গরম কাপড়সহ দ্রুত পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করবে। এগিয়ে আসতে হবে এনজিও এবং সক্ষম ব্যক্তিদেরও। প্রয়োজনে জরুরি ওষুধপত্রসহ ফিল্ড হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে হবে। ভাসমান যেসব মানুষ বিভিন্ন স্টেশন বা ফুটপাতে রাত কাটায় তাদের রক্ষায়ও বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের পুষ্টিমান উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিতে হবে।
Leave a Reply