আজকাল খেয়াল করলে দেখা যায় মিডিয়া ব্যক্তিদের পূর্বে যেভাবে সাধারণ মানুষ সম্মানিত করতো এবং সম্মান প্রদর্শন করত! আজকাল সেই সম্মানটা কেমন যেন ধুলোর সঙ্গে মিশে গিয়েছে। মিডিয়া মানেই নোংরামি, মিডিয়া মানেই বাটপারের একটা আখড়া বলে মনে করেন অনেকে। এমনকি মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তি বিয়ে করতে গেলে ভালো পাত্রপাত্রী পাওয়া অনেক কষ্টকর( সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়)। মিডিয়া ব্যক্তিদেরকে উপরে উপরে যতটা সম্মান দেখাক না কেন! ভিতরে ভিতরে আমাদের খারাপ মনে করেন। আমাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন মিডিয়া মানেই দুশ্চরিত্রা, চরিত্র খারাপ, চরিত্রহীনা কিন্তু আমাদের মিডিয়ার আসলেই কি সবাই খারাপ! সবারই কি চরিত্র খারাপ! সবাই কি মিডিয়ার পাশাপাশি দেহ ব্যবসা করেন! না কখনোই সম্ভব না, মিডিয়াতে মসজিদের হুজুর কিংবা মন্দিরে ঠাকুর না পাওয়া গেলেও, ন্যূনতম ভদ্র মার্জিত অনেক নির্মাতা অভিনেতা অভিনেত্রী রয়েছেন। যারা অন্যের উপকারে না আসলেও- কোন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। সুতরাং কর্পোরেট লেভেল বলেন! চাকরি ক্ষেত্রে বলেন! ব্যবসার ক্ষেত্রে বলেন আর মিডিয়ার ক্ষেত্রে বলেন সব জায়গায় কমবেশি নোংরামো রয়েছে। সব জায়গায় আগাছা পরগাছা জন্মায় অতএব এই আগাছা পরগাছার জন্য অর্থাৎ দু একজন সুযোগবাদী লোকের কারণে, দুই একজন দুশ্চরিত্র লোকের কারণে, আজ আমাদের সমগ্র মিডিয়া ব্যক্তিদের কলঙ্ক মেখে কাজ করতে হচ্ছে। আজ আমাদের খারাপ অপবাদ এর জামা পড়ে কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু এ থেকে যদি আমরা বের না হতে পারি। তাহলে আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য কি রেখে যাচ্ছি! আমাদের নতুন প্রজন্ম কোন পথে যাচ্ছে! আমরা যারা রয়েছি এবং আমাদের চাইতে যারা সিনিয়র রয়েছেন। তাদের এ ব্যাপারে কিছু কি করার নেই? আমাদের কোন দায়িত্ব নেই? এইসব নোংরামো যদি বন্ধ না করা হয় তাহলে সামনের দিনগুলো শিক্ষিত, ভালো পরিবার থেকে ছেলেমেয়েরা মিডিয়ার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করবে না। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা, ভদ্র মার্জিত ছেলেমেয়েরা মুখ ফিরিয়ে নেবে মিডিয়ার কাছ থেকে। তাই আমাদের সম্মিলিতভাবে দেশের স্বীকৃতি প্রাপ্ত সকল সংগঠনকে এক হয়ে এর একটা সমাধান করা উচিত বলে আমি মনে করি। আমাদের সবাই সম্মিলিত হয়ে চমৎকার একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই হয়তোবা কিছুটা আমরা সমাধানের পথ খুঁজে পেতে পারি। যেমন আমি একজন নির্মাতা সাহিত্যিক হিসেবে ছোট্ট কিছু পরামর্শ উপস্থাপন করতে পারি। আমার পরামর্শগুলা জানিনা মিডিয়ার কতটা কাজে আসবে! তারপরও আমার মত করে উপস্থাপন করলাম। দিনশেষে আপনারা পরিবর্তন, পরিমার্জন করে দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতিকে একটি সুষ্ঠ চর্চার মাধ্যমে, একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চর্চার মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারলেই আমি ধন্য। আমার দেশ ও দেশের মানুষ ধন্য। আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাই তথাকথিত মডেল, তথাকথিত অভিনেতা অভিনেত্রী, তথাকথিত নির্মাতা সহ অনেক প্রডিউসার । এই তথাকথিত নির্মাতা অভিনেতা অভিনেত্রীর প্রতি আমাদের একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। এখানে যদি আমরা সঠিকভাবে একটা নিয়ম প্রয়োগ করতে পারি। সঠিকভাবে আমরা যদি একটা দরজা আটকে দিতে পারি। তাহলে হয়তোবা আমাদের মিডিয়ার পথ চলাটা অনেকটা স্বচ্ছ ও সুন্দর হবে বলে আমার বিশ্বাস।
তথাকথিত অ্যাওয়ার্ড, মডেল, অভিনেতা ও নির্মাতা এদের বিরুদ্ধে সংগঠনগুলির সম্মিলিতভাবে একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা উচিৎ।
১.নতুন শিল্পীদের কর্মশালা ( এক্টরস ইকিউরিটি কতৃক)
২. নতুন পরিচালকদের গ্রুমিং/ওয়ার্কশপ ( ডিরেক্টর স গিল্ড কর্তৃক)
৩. চিত্রগ্রাহকের প্রশিক্ষণ ( ক্যামেরা ম্যান অ্যাসোসিয়েশন কতৃক)
৪. প্রযোজক/ ইনভেস্টার ( প্রযোজক সমিতি কর্তৃক)
বছরে দুটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করলে নতুন ছেলে মেয়েরা বিপদে পড়বে না, ভুল পথে যাবে না। একটি মেয়ে অভিনেত্রী বা নায়িকা হতে এসে, তথাকথিত মেকআপম্যানের কাছে পতিতা বিক্রি করতে যাবে না কিংবা নায়িকা হতে এসে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যাও করবে না। এমনকি একটা ছেলে অভিনেতা কিংবা নায়ক হতে এসে ভুল পথে নিজের কষ্টের অর্জিত অর্থ অপচয় করবে না, ধোকাও খাবে না। অ্যাওয়ার্ডের নামে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পতিতা যাতে না হতে পারে, সে ব্যাপারে সংগঠনগুলোর এগিয়ে আসতে হবে। তথাকথিত অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান করার অনুমতি অবশ্যই ডিরেক্টর গিল্ড, অ্যাক্টরস ইকুরিটি, প্রযোজক সমিতির, টেলিপ্যাব সহ সম্মিলিত সকল সংগঠন কর্তৃক অনুমতি সাপেক্ষে করা উচিত বলে মনে করি। ঢাকা শহরে অনলাইন প্লাটফর্মে টেলিভিশন প্লাটফর্মে কেউ যদি নাটক নির্মাণ করে তাকে অবশ্যই ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রাথমিক সদস্য হয়ে কাজ করতে হবে ( যে কোন নির্মাতা প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করতে পারে-এমন সংবিধান তৈরি করতে হবে) ঢাকা শহরে যেমন খুশি তেমন শুটিং করার কোন অনুমতি দেশের সরকার দেয় না সুতরাং আমাদের সংগঠনগুলো এর দায়িত্বটা পালন করলে দেশের প্রশাসন সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস। তথাকথিত মডেল তথাকথিত অভিনেতা অভিনেত্রী কিংবা তথাকথিত নির্মাতা ও অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের প্রতি আমাদের সকল সংগঠন গুলির সম্মিলিতভাবে দৃষ্টিপাত করবে বলে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। জয় হোক নির্মাতার, জয় হোক অভিনেতা-অভিনেত্রীর, জয় হোক আমাদের সকল কলা কৌশলির, জয় হোক বাংলাদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির
রানা বর্তমান
( সাহিত্যিক ও নির্মাতা- বাংলাদেশ)
Leave a Reply