রাজধানীতে বহুল আলোচিত বিপদগামী কিশোর গ্যাং বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, ছিনতাই, নারীদের ইভটিজিংসহ মাদক সেবন ও ব্যবসায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের বিপথগামী কিশোর অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সম্প্রতি এক বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে “ল্যাংরা নুরু”, “পটোটো রুবেল” ও “কিং শাওন” গ্রুপ এর লিডারসহ ২১ জন সদস্য’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মিরপুর থানা এলাকা হতে “ল্যাংরা নুরু” গ্যাং এর শাহ আলম ওরফে ল্যাংরা নুরু (৪৮), জমির (২৪), মোঃ জাহিদুল ইসলাম রানা (২৪), মোঃ আল-আমিন (২০), ও মোঃ ফারুক প্রামানিক (৩৮) নামীয় ০৫ জন সদস্য’কে গ্রেফতার করে।
১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে দারুস সালাম থানার গাবতলী এলাকা হতে “পটোটো রুবেল” গ্রুপ এর মোঃ সোলাইমান (১৮), মোঃ লালন রানা (২০), মোঃ ইমন ওরফে ফ্লাস ইমন (১৯), মোঃ উমর ফারুক (২০), মোঃ ইয়ামিন (১৯), মোঃ শাওন খাঁন (১৯), ও মোঃ সোহান বেপারি (১৯) নামীয় ০৭ জন সদস্য’কে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর, দারুসসালাম, পল্লবী, শাহ আলী এলাকায় বেশ কিছু কিশোরগ্যাং সক্রিয় রয়েছে। কিশোর গ্যাং “ল্যাংরা নুরু’’ ও “পটোটো রুবেল” এর লিডারসহ ৭০/৮০ জনের সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এই গ্যাং এর সদস্যরা মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, ভাষানটেকসহ আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি, মাদক সেবন ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। চিহ্নিত এসব বেপরোয়া ও মাদকসেবী কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের অত্যাচারে বাসস্ট্যান্ডে আসা দূর-দূরান্তের যাত্রী ও স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ ও অসহায় হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাং এর লিডার “ল্যাংরা নুরু” ও “পটেটো রুবেল” এর সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন বাস-ট্রাকে চুরি, ছিনতাই এবং চাঁদাবাজি করে আসছিলো। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাস-ট্রাক গাড়ি গুলোর গতিরোধ করে ড্রাইভারদেরকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ড্রাইভারদেরকে গাড়ী থেকে জোরপূর্বক নামিয়ে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে সাধারণ, গুরুতর আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। তাছাড়াও ফুটপাতের দোকানদাররা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদেরকেও মারধর করে। “ল্যাংরা নুরু” গ্রুপের লিডার শাহআলম ওরফে ল্যাংরা নুরু এর বিরুদ্ধে মিরপুর, কাফরুল ও শেরেবাংলা নগর থানায় মারামারি এবং খুনের চেষ্টা সংক্রান্ত ০৫ টি মামলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
এছাড়াও ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন গেন্ডা এলাকা হতে “কিং শাওন” গ্রুপ এর মোঃ শাওন (২০), নুর ইসলাম (১৯), মোঃ আলামিন (২১), মোঃ আব্দুল মান্নান (২০), মোঃ আজিম (২০), পিয়াস হোসেন (২১), মোঃ রাকিবুল ইসলাম (১৯), মোঃ সজিব হোসেন (২০), মোঃ আলামিন (১৮) নামীয় ০৯ জন সদস্য’কে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা চিহ্নিত কিশোর গ্যাং “কিং শাওন” গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এবং সাভার ও আশুলিয়ায় মাদক বহনসহ চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং এমনকি অপহরণের সাথে সম্পৃক্ত। উঠতি বয়সের এসব কিশোরদের দৈনন্দিক অপকর্মের কারণে এলাকাবাসী আতঙ্কিত ছিলো। আটক পরবর্তীতে তাদেরকে সার্বিক বয়স ও শিক্ষার্থী বিবেচনায় সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার প্রত্যাশায় নিজ নিজ পরিবারের নিকট অঙ্গীকারনামার মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয় কতিপয় গ্রেফতারকৃতদের।
গ্রেফতারকৃত কিশোর অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাব কর্তৃপক্ষ।
Leave a Reply