1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. : admin :
সুলতানী আমলের নান্দনিক স্থাপত্য কুসুম্বা মসজিদ - দৈনিক আমার সময়

সুলতানী আমলের নান্দনিক স্থাপত্য কুসুম্বা মসজিদ

সজীব আহম্মেদ রিমন
    প্রকাশিত : শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০২৩

১২০৬ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজিনদীয়া বিজয়ের মাধ্যমে বাংলায় মুসলিম শাসনের পথ উন্মেচিতহয়। পরবর্তীতে এটি রূপ নেয় সাম্রজ্যে, মুসলিম শাসকরা শাসনকরেন দীর্ঘ সময় ধরে, অর্থাৎ ১২০৬ থেকে ১৫০৬ সাল পর্যন্ত। এইসময়কালকে বলা হয় সুলতানী আমল। এসময়ে সুলতান সুলতানের অধীনস্ত কর্মকর্তারা বাংলার বিভিন্ন স্থানে নান্দনিকস্থাপনা নির্মাণ করেন। যার অধিকাংশ ছিল মসজিদ। এরইধারাবাহিকতায় বাংলায় প্রাপ্ত সুলতানী আমলের দৃষ্টিনন্দনমসজিদ স্থাপনার মধ্যে অন্যতম কুসুম্বা মসজিদ। অনেকেমসজিদটিকে পাঁচ টাকা নোটের মসজিদও বলে থাকে।কারণস্থাপত্যশৈলী নান্দনীকতার গুরুত্বতের কথা বিচারে দেশের পাঁচটাকার নোটে কুসুম্বা মসজিদের ছবি ছাপানো হয়েছে।

মসজিদটি বরেন্দ্র ভূমির আত্রাই নদীর পশ্চিমতীরস্থ নওগাঁ জেলারমান্দা উপজেলার কুসুম্বা নামক গ্রামে অবস্থিত। ঐতিহাসিক এইমসজিদটি ৯৬৬ হিজরিতে (১৫৫৮৫৯ খ্রিঃ) আফগান শূরবংশের শেষ দিকের শাসক গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ আমলেরউচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সুলায়মান নির্মাণ করেন। যা মসজিদের পাশেপ্রাপ্ত কালো পাথরে খোদাইকৃত আরবী ফার্সি লিপিমালাপাঠদ্ধ্যোরের মাধ্যমে জানা যায়। মসজিদটি শূর আমলে নির্মিতহলেও উত্তর ভারতে বিকশিত শূর স্থাপত্যের প্রভাব এই ঐতিহাসিকস্থাপনায় লক্ষ্য করা যায় না বরং এটি বাংলার স্থাপত্য রীতিতেইনির্মিত হয়েছে। বাংলার স্থাপত্য রীতির পরিচায়ক বৈশিষ্ট্যাবলিইটের গাঁথুনি, সামান্য বক্র কার্নিশ এবং সংলগ্ন অষ্টকোণাকৃতিরপার্শ্ববরুজ প্রভূতি। রীতি বাংলার প্রাচীন কুড়েঘরের কথা স্মরণকরিয়ে দেয়। অর্ধবৃত্তাকার ছয় ডোম বিশিষ্ট আয়তকার এইমসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট, প্রস্থ ৪২ ফুট। এই মসজিদটি তিনটিবেএবং দুইটিআইলে’  বিভক্ত এবং এর চারপাশের প্রাচীর, মূল গাঁথুনি ইটের তৈরি হলেও বাহিরের দেওয়ালের সম্পূর্ণ অংশএবং ভিতরের দেওয়ালের পেন্ডেন্টিভের খিলান পর্যন্ত পাথর দ্বারাআবৃত।

এছাড়াও মসজিদটির স্তম্ভ, ভিত্তিমঞ্চ, মেঝে এবং উত্তর দক্ষিণদিকের জালি নকশাগুলো পাথর দ্বারা নির্মিত। বাংলায় পাথরসহজলভ্য না হলেও প্রাকসুলতানী যুগে ইটপাথর দিয়ে মসজিদনির্মাণের রীতি ছিল ব্যাপক। যা থেকে সহজেই অনুমান করা যায়সমকালীন বাংলার অর্থনীতি ছিল উন্নত। মসজিদের ভিতরেপ্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে তিনটি প্রবেশ দরজা রয়েছে। প্রবেশদরজার উপরে পয়েন্টেড আর্চের স্প্যান্ড্রিল ছোট ছোট কলস গোলাপ নকশায় পরিপূর্ণ এবং এর পাশে আয়তকার খোপনকশাকে ঘিরে ফ্রেম হিসেবে ছাঁচে ঢালা  অলংকরণ রয়েছে। উত্তরএবং দক্ষিণ দেওয়ালেও এধরণের ছাঁচে ঢালা অলংকরণ রয়েছে।এছাড়াও, উত্তর দিকে একটি এবং দক্ষিণ দিকে দুটি প্রবেশ দরজাথাকলেও তা পাথরের জালি নকশা দ্বারা বন্ধ। এই প্রবেশদরজাগুলিতে সেমিসারকুলার আর্চ লক্ষ্য করা যায়। আর্চের উপরে মাঝে গোলাপ নকশা রয়েছে।

সুলতানী আমলের মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় উল্লেখযোগ্যবৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম জেনানা গ্যালারি। কুসুম্বা মসজিদেরউত্তরপশ্চিম কর্ণারে জেনানা গ্যালারি রয়েছে। এমন জেনানাগ্যালারি রয়েছে দারাসবাড়ি এবং ছোট সোনা মসজিদে। জেনানাগ্যালারিতে সমকালীন সময়ে মহিলারা নামাজ আদায় করতেপারতেন। জেনানা গ্যালারি প্রমাণ করে তৎকালীন সময়ে মসজিদেমহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিল এবং সমাজে তাদের অবস্থান ছিলোভালো। এধরণের সংযোজন পরবর্তীতে মোঘল আমলের মসজিদেআর পাওয়া যায় না।

কুসুম্বা মসজিদের কিবলা প্রাচীরে তিনটি অবতল মিহরাব রয়েছে।যার একটি কেন্দ্রে অর্থাৎ মূল প্রবেশ দরজা বরাবর। অন্য মিহবারদুটি দক্ষিণপশ্চিম এবং উত্তরপশ্চিম পার্শ্বে। মিহরাবগুলোপাথরে খোদাইকৃত নকশায় ব্যাপকভাবে অলংকৃত।মিহরাবগুলিতে রয়েছে বহুখাঁজ বিশিষ্ট মাল্টিফয়েল আর্চ এবং এরশীর্ষে কলস মোটিফের অলংকরণ। মিহরাবের ফ্রেমে এবং স্তম্ভেরয়েছে সর্পিল আকারের খোদিত আঙ্গুর গুচ্ছ, লতার নকশা এবংঝুলন্ত শিকল ঘন্টার নকশা। এছাড়া রয়েছে বিন্দুর আকারধারণকারী কলস, বৃক্ষলতা গোলাপ নকশা। মসজিদের কিবলাদেওয়াল জুড়ে রয়েছে গোলাপ নকশা। ছয় ফুট বিশিষ্ট দেওয়ালেরআস্তরণ হিসেবে ব্যবহৃত পাথরগুলি অমসৃণ এবং এটি গভীরখোদাইকার্য করে নির্মাণ করা হয়েছে। বাহিরের দেওয়ালে দৃষ্টিনন্দনছাঁচে ঢালা অলংকরণ দেওয়াল গাত্রকে উঁচুনিচু অংশে বিভক্তকরেছে।

স্থাপত্যিক অলংকরণের দিক থেকে বিচার করলে নিঃসন্দেহে এইমসজিদকে সূক্ষ্ম চাতুর্থপূর্ণ খোদাইকাজের জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠনিদর্শন বলা যায়। আর এই শ্রেষ্ঠ নিদর্শন স্বগৌরবের সহিতচারশত বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে রয়েছে। মসজিদেরঅলংকরণ সমকালীন মানুষের নান্দনিকতা রুচিশীলতারপরিচয় দেয়। নান্দনিক এই মসজিদটি দেখতে নামাজ আদায়করতে প্রায় প্রতিদিনই বহু পর্যটক আসেন। বর্তমানে মসজিদটিবাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে সংরক্ষিত রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com