বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।
আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ে সদ্য সংযুক্ত কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, মেজর সিনহা হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগীরা কক্সবাজারে মাদক ব্যাবসাসহ দেশের বিরুদ্বে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
ওসি প্রদীপের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় কক্সবাজারে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়েছে।
ব্যাক্তিগত জীবনে আমার একটা সিএনজি ছাড়া কোন যানবাহন নেই।সম্পদ বলতে আছে গ্রামের বাড়িতে ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত একটি বাড়ি।
আইনাঙ্গনে ৩২ বছরের চাকুরি জীবনে জিপি ফান্ডে আমার ৮০ লাখ টাকা জমা আছে।আমি ফকিরও নই।ন্যায় বিচার করতে গিয়ে কেউ খুশি আবার কেউ অখুশি হবে,এটা সাভাবিক।
সরকার আমাকে সুযোগ দিয়েছে বলেই ন্যায় বিচারের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে যতটুকু সম্ভব কাজ করতে পেরেছি।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম আয়োজিত আদালতের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জেলা ও দায়রাজজ আদালতের নিজস্ব সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিদায়ী জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল কক্সবাজারে সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, বিচারাঙ্গনে নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। এতে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন।
সভায় জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের প্রধান সমস্যা হলো মাদক চোরাচালান। বর্তমানে কক্সবাজার আদালতে ১০ হাজারেরও বেশি মাদক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। দেশে মোট জনসংখ্যার চেয়ে মামলার সংখ্যা অনেক বেশি।তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলা ও নাগরিক হয়রানি বাড়ছে।তাই সরকারের শীর্ষমহল ও বিবেকের তাড়নায় চেষ্টা করেছি,মামলা জট কমিয়ে সাধারণ মানুষকে আদালত থেকে বিদায় করতে।তারা যেন আদালতের বারান্দায় অযথা ঘুরাঘুরি না করে নিজেদের কাজকর্ম করে চলতে পারে।একারণে যোগদানের পর থেকে প্রায় ১৫হাজার এর মত ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি করেছি।
কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে চিহ্নিত সব অপরাধীদের জামিন বন্ধ রেখেছি মাদক নিয়ন্ত্রন এর জন্য আসামিদের জামিন মঞ্জুর না মন্জুর বন্ধ রেখেছি।মাদক ব্যাবসায়ীদের জরিমানা প্রথা চালু করে তাদের অর্থনৈতিক শাস্তির ফলে সরকারি কোষাগারে লাখ লাখ টাকা জমা করেছি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো হচ্ছে অপরাধী তৈরির কারখানা। রোহিঙ্গাদের মাদক মামলা, অস্ত্র ও খুনের মামলার আসামিদের জামিনের জন্য কিছু আইনজীবী ও দালাল কোটি কোটি টাকার লেনদেন করছে। তারা জজ কোর্টে জামিন না পেলে হাইকোর্টে চলে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অপরাধের কারণে কক্সবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই ক্যাম্পগুলো এখন ইয়াবাকারবারিদের মূলকেন্দ্র।’
আদালতে মাদকের মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এসময় বিদায়ী জেলা জজ ইসমাইল দৃঢ় কন্ঠে জানান, দেশে সবচেয়ে বেশি হত্যা মামলা কক্সবাজারে। এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের কারণে বেশি খুন-খারাবিসহ বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলা,টেকনাফ এর আলো হত্যা মামলা,আত্মসমর্পণকৃত ১০১ ইয়াবা সম্রাটের সাজা সহ কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলা নিষ্পত্তির কারণে নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় করেছেন,কক্সবাজারের ইতিহাসে ন্যায় বিচারের নজির সৃষ্টিকারি বিদায়ী এই জেলা ও দায়রা জজ।
সভায় তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কক্সবাজারের আইনজীবিদের কিছু অংশ জামিনের পেছনে দৌঁড়ায়। তারা মূল মামলা পরিচালনা কিংবা ট্রায়াল শুনানি করে না। তাদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।
সংবর্ধনা সভায় কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এ এম আনোয়ারুল হক,সদস্য রুহুল আমিন সিকদার, ইকরাম চৌধুরী টিপু,মোরশেদুর রহমান খোকন,ফাতেমা আনকিস ডেইজি,মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ শাহেদ,ইমাম খাইর,মোহাম্মদ রুস্তম,আব্দুল মতিন আজাদ বক্তব্য দেন।
এছাড়া সংবর্ধিত অতিথি মোহাম্মদ ইসমাইল এর দক্ষতা ও কর্ম তৎপরতার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী আবদুর রশিদ,মোহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানি,সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী, মুফতি কেফায়ত উল্লাহ,ফরিদুল মোস্তফা খান,এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক শফিক সহ আমন্ত্রিত জেলার বিভিন্ন সিনিয়র আইনজীবী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
Leave a Reply