1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. : admin :
নাটক চলচ্চিত্র নাকি মরনব্যাধী ক্যান্সার - দৈনিক আমার সময়

নাটক চলচ্চিত্র নাকি মরনব্যাধী ক্যান্সার

আমার সময় ডেস্ক
    প্রকাশিত : রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩

 

বর্তমান মিডিয়ার হালচাল নিয়ে মাঝে মাঝে কিছু প্রতিবাদের বাক্য, সভা সমাবেশ চোখের সামনে আঁচড়ে পরে। নাট্যজনরা বিভিন্ন এঙ্গেলে, নানাভাবে সময়ের নির্মানের অবক্ষয় নিয়ে কথা বলেছেন, সমস্যাটা কি আর সমাধানের অগতিটাও কতটুকু! আমাদের নাটকের আসলেই সমস্যাটা কোথায়? প্রতিবাদ কি যখন নাট্যজনদের অপ্রিয় ব্যাক্তি যখন একটি কাজ নিয়ে আলোচনায় আসেন তখন! নাকি অন্য কোন ইস্যু কিংবা ঘটনা রয়েছেন। নাকি ভিনদেশী দালাল হয়ে আমাদের গর্বের নাট্যশিল্পটাকে ধংস করার সুনিপুণ রনকৌশল চলাছে‌ন।
হরেক নাট্যজনদের বহুমত সেক্ষেত্রে সম্মানিত নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, এই উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থান। এই উত্থান কীভাবে রোধ করা যাবে, এটা যেমন রাজনৈতিক সমস্যা, আবার তেমনি আমাদের সাংস্কৃতিক সমস্যাও।
সম্মানিত নাট্যজন যে কথা বলেছেন তার গুরুত্ব অসিম। কিন্তু আমরা কজন এই মহান বাক্যের মুল্যায়ন করেছি! আবার সম্মানিত নাট্য নির্মাতা ও অভিনেতা আবুল হায়াত বলেছেন, টেলিভিশন নাটক বলতে আমরা যেটা বুঝি, সেটা আমরা করি না। আমরা এখন ফিল্ম বানাই। আমাদের গল্প দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন নাটক বলতে যা বোঝায় এগুলো তা নয়, এগুলো ফিল্ম।’ চমৎকার বলেছেন কিন্তু আমি সম্মানিত নাট্যজনের কথায় একমত হতে পারছিনা। কারন প্রতিটি চলমান চিত্র যদি ফিল্ম হয় তাহলে তিনি আগে যা করেছেন এবং এখন যা করছেন সবটাই ফিল্ম, এসব বিষয়ে পরে লিখবো আপাতত আসল বিষয় টা নিয়ে কথা বলি! সম্মানিত নাট্যজন হয়তো বুঝাতে চেয়েছেন আমাদের গল্প ভাবনার পরিবর্তন হয়েছে, মেকিংয়ে পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ যে গল্প আমরা টিকিট কেটে সিনেমা হলে দেখতাম সেই গল্পগুলো এখন টিভি মিডিয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে যা সত্যিই আমাদের নাট্যাঙ্গনের জন্য ক্যান্সার। বলতে পারেন থিয়েটারের মঞ্চনাটক আর যাত্রাপালা। যাত্রাপালা এখন থিয়েটারের নিয়ে আসার মত আমাদের বর্তমান সময়ের নির্মান।
আবার অনেক মিডিয়া বোদ্ধারা বলেছেন যে এখন নাটকের নামে যা করছে তা আর নাটক নয়। অন্য দিকে কেউ কেউ বলছেন দর্শকের রুচীর দূভিক্ষ। তাহলে কি আসলেই কিছু হচ্ছে না? সকল জ্ঞানপতি এবিষয়ে একমত যে, কিছু হচ্ছে না। কিন্তু কি যে হচ্ছে, সেকথা লিখতে বাধ্য হচ্ছি স্বয়ং আমি রানা বর্তমান। বাংলাদেশের অধিকাংশ চলচ্চিত্র কিংবা টিভি ফিকশন ( নাটক) যা হচ্ছে, তাকে আমারা চলচ্চিত্র/ নাটক বলতেই পারছিনা, সোজাসাপ্টা বলতে হলে আমি বলবো কৌতুক। আমার এ কথাটা অপ্রিয় হলেও সত্য, অনেকেরই এ বিষয়টা জানা যে, নাটকের নামে বেহায়াপনার, অশ্লীলতা, বাঁদরামি, বিজাতীয় ‘অভিজাতীয়’ ‘অবাস্তব’ ‘অবান্তর’ প্রভৃতি নানা নামের ঢিল ছুড়েছেন নির্মাতা, অভিনয় শিল্পীদের উপরে। বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্র/ নাটক নিয়ে সাংস্কৃতিক বোদ্ধারা নানা ভাষায় বিভিন্ন মন্তব্য উপাস্থাপন করেছেন। দিনশেষে পরিস্কার যে, চলচ্চিত্র/নাটকের নামে হচ্ছেটা কি তা পরিষ্কার করেননি আমাদের সাংস্কৃতিক বোদ্ধারা কিংবা আমি পরিস্কার হতে পারিনি। অথচ আমি একজন ক্ষুদ্র সাহিত্যিক, নির্মাতা হিসেবে সরাসরি বলবো এগুলো টিভি ফিকশন ( নাটক) নয় বরং এগুলোর প্রকৃত পরিচয় হচ্ছে কৌতুক। আপনারা যারা অভিনয় করছেন সন্দেহ ছাড়াই প্রশিক্ষিত ও প্রমানিত ভালো অভিনেতা অভিনেত্রী। আপনারা যারা নাটকের নামে কৌতুক লিখছেন তারাও প্রমানিত ভালোমানের নাট্যকার কিন্তু আপাতত আপনাদের পরিচয় কৌতুক শিল্পী কিংবা চুটকির লেখক। অবাক হলেন! আর ক্ষিপ্ত হচ্ছেন ? তবে কথাটা কিন্তু পাক্কা, একদম সত্য। একান্ত আমার চিন্তার আঙ্গিনায়।
এসকল নাটকের নামে যে কৌতুক হচ্ছে সেই কৌতুকের বিশেষণের অর্থ কি, তার ব্যাখ্যা করতে ডেঙ্গু জ্বর নিয়েও বেশ বড় করে লিখতে হবে তা অন্য কোন লেখায় কিন্তু নাটকের তুলনায় কৌতুক যে কি পর্যায়ের অখাদ্য কিংবা খাদ্য, তা যে আমরা কমবেশি সকলেই জানি, তার প্রমাণ হাতে-চোখেই দেওয়া যায়।
পৃথিবীর সকল দেশের সকল যুগের সকল চলচ্চিত্র/ নাট্যতত্ত্ব ঘাঁটাঘাঁটি করে যেপরিমাণে বোঝা যায়, আমাদের পূর্বের আর বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্র/ নাট্যতত্ত্বও ঠিক সেই-পরিমাণে বোঝ যায় তার কমও নয় বেশিও নয়। অর্থাৎ আমরা যারা বর্তমানের নির্মাতা, অভিনয় শিল্পী রয়েছি! তারা আসলেই নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারেননি বরং আমাদের ঐতিহ্যের টিভি ফিকশন( নাটক) গুলো ভিউর দোহাই দিয়ে রীতিমত কৌতুক বানিয়েই চলেছি। সত্যি কথা বলতে কি এইসব কৌতুক অভিনেতা, কৌতুক নির্মাতা কিংবা চুটকির লেখকরা নাটকের নাম করে দেশের আলাদা একটি কৌতুকশিল্প ও শিল্পীদের পেটে লাথি মেরে দিয়েছেন। বিশেষ করে একটু খেয়াল করলে দেখবেন, দেশে আর কৌতুক শিল্পী তৈরী হচ্ছেনা। হবেইবা কিকরে! দেশের গুনি গুনি অভিনেতা/ অভিনেত্রীরাই নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতেই নাটকের নামে কৌতুক করছেন, তাহলে নতুনরা কি শিখবে! কি করবে! এই সম্মানিত অভিনয় শিল্পীদের কারনে গুনি কৌতুক শিল্পীর বেশ অকাল পরেছে বাংলার মিডিয়াঙ্গনে। হাতমেপে যদি বর্তমান নাটকের গুনগত মান তথা মর্যাদা নির্ণয় করতে বলা হয়, তাহলে বেশিরভাগই কৌতুক করা হচ্ছে, নাটক নয়। আপনার অভিনয় কিংবা লেখায় ভিউ অনেক বেশি হতেই পারে, দর্শক প্রিয়তা বেশি হতেই পারে কিন্তু তার ওজন যতই হোক না কেন, তার আকার অতি সামান্য ও অনেক ছোট। আমাদের কৌতুক শিল্প বাঁচাতে হবে, আমাদের নাটক শিল্প বাঁচাতে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এগিয়ে আসতে হবে। যদি ভিউ আর মুনাফা অর্জনের জন্য আমাদের নাটক, চলচ্চিত্র, কিংবা কৌতুক শিল্পকে ধ্বংস করে দেন তাহলে আজই আলুপোটলের ব্যাবসা করুন, সাংস্কৃতিক চর্চা কিংবা ব্যাবসা নয়। সাংস্কৃতিক চর্চা আর ব্যাবসা এক নয়। সত্য বলতে আমাদের অংগনে আলুপোটল ব্যাবসায়িরা ঢুকে পড়ছেন। সঠিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বর বড্ড অভাব কারন ব্যাসায়িদের দাপটে সাংস্কৃতিক প্রেমিরা গুটিয়ে যাচ্ছেন। মনে রাখবেন আপনি চলচ্চিত্র নাটক নির্মাণ করে যদি শুধুই মুনাফা অর্জন করতে চান!
তাহলে আপনার পরিচয় আপনি চলচ্চিত্র নাটক কৌতুক ব্যাবসায়ী অবশ্যই সাংস্কৃতিক ব্যাক্তি নন। ঠিক তখন একজন আলু বিক্রেতা আর চলচ্চিত্র নাটক বিক্রেতার মান সমান বহন করে। তাই পরিশেষে আমাদের প্রিয় বিনোদন সাংবাদিকদের এদের নিয়ে লেখা উচিৎ বলে আমি মনে করি। কে ব্যবসায়ি, কে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, কে নাট্য অভিনয় শিল্পী আর কে কৌতুক শিল্পী। হয়তোবা কোন কোন কলমও আজকাল সত্যকে সত্য লেখার ভাষা হারিয়ে ফেলছেন। কারণ এই অযোগ্য কিংবা যোগ্যদের এত এত ক্ষমতা/ দাপট থাকে যে তাদের বিরুদ্ধে লিখলে হয়তো সাংবাদিকদের কোন সমস্যা হবে। তারপরও কাউকে না কাউকে লিখতে হবে। সবার মুখ উম্মোচিত করতে হবে। নাহলে আমরা চলচ্চিত্র নাটক বিশ্বের কাছে কৌতুক হিসাবেই তুলে ধরছি, সে ক্ষেত্রে আপনার নির্মান দেখেও জনতা হাসছে আবার আলমের গান অভিনয় দেখেও হাসছে। সেক্ষেত্রে আলম আর আপনাদের উদ্দেশ্য অনেকটাই এক প্রমানিত হচ্ছে। আসুন আমরা কৌতুক শিল্পীদের বাচাই, তাদের কাজ তারাই করুক আর গুনি অভিনয় শিল্পীদের উচিৎ ভিউ কিংবা কৌতুক অভিনেতা হয়ে আথউপার্জন করা নয় বরং ভালো কিছু কাজ করা, যা মৃত্যুর পরও মানুষ মনে করবেন। একটু নিজেই হিসাব করলে দেখবেন এ অঙ্গনে আর একটি বুলবুল আহম্মেদ, গোলাম মোস্তফা কিংবা আবুল হায়াত জন্মাছেন না। আমাদের দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতির যাদের উপরে দায়িত্ব আছে বলে মনে করেন! তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তাদের ই কৌতুক শিল্পী তৈরী করতে সুযোগ দিতে হবে, তাদের ই ভাল গল্প লিখতে হবে, তাদের ই একজন বুলবুল আহম্মেদ, একজন আবুল হায়াত তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাতা, অভিনয় শিল্পী সবার একজন আনিস, দিলদার কিংবা টেলিসামাদ তৈরী করতে এগিয়ে আসতে হবে।
রানা বর্তমান
সাহিত্যিক ও নাট্যনির্মাতা

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com