1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. : admin :
ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি - দৈনিক আমার সময়

ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি

আমার সময় ডেস্ক
    প্রকাশিত : রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধুই কি বাংলাদেশের নেতা ছিলেন? হয়তো এ ধরণের কথা শুনে অনেকে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু মোটেও এটা অপ্রাসঙ্গিক নহে।
বাঙালি জাতির এই  মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপ্তি কোনো দেশ, কোনো ভূখণ্ড কোনো ভৌগোলিক রেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তাঁর নীতি, আদর্শ, চিন্তা, দর্শন ছিল সারা বিশ্বের মানুষের মুক্তি, শান্তি, নেতৃত্বগুণ, সততা, বিশ্বাসের মূর্তপ্রতীক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিদেশী সাংবাদিক সিরিল ডান বলেছেন,  ‘ বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে শেখ মুজিবই একমাত্র নেতা যিনি রক্তে, বর্ণে, ভাষায়, কৃষ্টিতে এবং জন্মসূত্রেও ছিলেন খাঁটি বাঙালি। তাঁর দীর্ঘ শালপ্রাংশু দেহ, বজ্রকন্ঠ, মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করার বাগ্মিতা এবং জনগণকে নেতৃত্বদানের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও সাহস তাঁকে এ যুগের এক বিরল মহানায়কে রুপান্তর করেছে। ‘
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস নায়ার বলেছেন,  ‘ আপনি শুধু বাঙালি জাতিরই নেতা নন। এমন দিন আসবে সেদিন তৃতীয় বিশ্বের সমগ্র নির্যাতিত -বঞ্চিত মানুষের নেতৃত্ব দেবেন। ‘
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যে পরিমাণ ত্যাগ, দুঃখ -কষ্ট ও অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে, বিশ্বের আর কোন জাতির পিতাকে তেমনটি করতে হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
এ কথা কারও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ইতিহাসের মহানায়ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে এদেশ কোনদিন স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক ও অবিচ্ছেদ্য। আক্ষরিক অর্থেই বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ সমার্থক। যেন মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।
১৪১১ সালের ১লা বৈশাখ এক জরিপে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রচার মাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন ( বিবিসি) – এর বাংলা বিভাগ বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ‘ হিসেবে ঘোষণা করে এবং সর্বশেষ তাঁকে
  বিশ্ব বন্ধু হিসেবে ঘোষণা করে।
তিনি অমর, অবিনশ্বর। এজন্যই বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের মহানায়ক। ইতিহাস মহানায়কদের সৃষ্টি করে না। মহানায়করাই ইতিহাসের গতিপথ নিরপণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ কাজটিই করেছেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫৬ বছর জীবনের মধ্যে প্রায় ১৪ বছর অন্ধকার কারাগারে ছিলেন।
বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে লন্ডন ও ভারত হয়ে স্বদেশের মাটিতে পা রাখেন এবং দেশের দায়িত্বভার আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। আর এ সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশকে স্বপ্লোন্নত দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
জাতির পিতা এই স্বপ্ল সময়ের মধ্যেই বিশ্বের ধনী, ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছেন। তাঁর সৎ সাহস, নেতৃত্বগুণ, বাগ্মিতা বিশ্ব দরবারে সেই সময়ে খুবই আলোচিত ছিল।
১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সের জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনের ভাষণে তিনি বলেছিলেন ‘ পৃথিবী আজ দু’ভাগে বিভক্ত,’ শোষক এবং শোষিত; আমি শোষিতের পক্ষে’।
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কন্ঠ খুবই ভূমিকা পালন করেছিল। তিনি জানতেন এ জন্য হয়তো তাঁকে মাশুল দিতে হবে। তবুও তিনি সত্য, ন্যায়ের প্রতি ছিলেন অবিচল।
১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনের ভাষণ বাংলায় দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে  বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই মায়ের ভাষা বাংলা ফিরে পায় বাঙালি জাতি। সেই কারণেই বঙ্গবন্ধুকে ভাষা আন্দোলনের রুপকার বলা হয়।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ জাতি রাষ্ট্রের মহান স্রষ্টা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসে যে -পরিবর্তন ঘটানো হয়, তাতে প্রথমেই বর্জিত হয়েছিল সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
সেদিন থেকে বাঙালি এগিয়ে যাবার বদলে আবার পেছনে হাঁটতে শুরু করে। মানুষকে মনুষ্যত্বের মর্যাদা দেবার সাংবিধানিক অধিকার হরণ করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে এই পশ্চাদগামিতা।
ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি।
৭৫-এর মাস্টারমাইন্ড খুনি জিয়াউর রহমান সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে কেবলমাত্র মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলোকেই অস্বীকার করলেন না, তিনি তার সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করলেন এমন একজন রাজাকারকে যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করেছিল।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে নতুন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রবর্তনের পথকে উন্মুক্ত করে। জিয়া সমাজতন্ত্রকে পরিত্যাগ করে ‘ Money is no problem ‘ বলে বিরাষ্ট্রীকরণের মাধ্যমে যে -লুণ্ঠনের সামাজিক অর্থনীতির ভিত্তি রচনা করলেন, তার ফলে আজও বাংলাদেশের সমাজ জীবনে যে বিরাট বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, তা বাঙালিকে কোন অবিমিশ্র অন্ধকারের পথে নিয়ে যাচ্ছে কে জানে?
বাংলাদেশের রাজনীতির বারোটা বাজিয়েছিল পাকিস্তানেরচর, ঠান্ডা মাথার খুনি জিয়াউর রহমান। পরবর্তীকালে তার স্ত্রী বেগম জিয়াও একই পথে হাটতে শুরু করে।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জিয়া, বেগম জিয়া এবং এরশাদ সবাই পুর্নবাসন করেছিলেন।
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করার অপরাধ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে এবং নির্বাহী ক্ষমতা বলে বেগম জিয়ার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার গুলশানের বাসায় থাকার ব্যবস্হা করে দিয়েছেন। তার মানে বেগম জিয়া সাজা মুক্ত নন।
অন্যদিকে বেগম জিয়ার গুণধর কুপত্র তারেক জিয়া একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন ও মানিলন্ডারিং মামলাসহ অন্যান্য মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী থাকায় বিএনপি এখন নেতৃত্বশূন্য দলে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ খুনি, এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
স্বাধীনতাবিরোধীচক্র বিএনপি সরকারের সময়ে বাংলাদেশের মানুষের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। কালো টাকা ছিল তাদের রাজনীতির নিয়ামক। চিত্তের ঐশ্বর্য নয়, বিত্তের দম্ভ ও শক্তিই বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। এই অবস্হার অবসান ঘটানোর জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ একুশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
১৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড জিয়ার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসিত জীবনের ইতি টেনে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠকন্যা, জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল  বাংলার মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষা এবং বাংলাদেশের অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত করার  জন্য। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অধরা স্বপ্নপূরণ হয় প্রথম ১৯৯৬ সালে।
বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রতীক নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের ম্যান্ডেট দেয় এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার অভূতপূর্ব সাফল্য বয়ে আনে। বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের সার্থকতা খুঁজে পায়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হতে হতেই আবার ষড়যন্ত্র করে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় স্বাধীনতাবিরোধীচক্র বিএনপি জামাত।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সবকিছু বিরোধিতার নামে অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দেয় বিএনপি জামাত সরকার।
বাংলাদেশ আবার পাকিস্তানের ধারণায় ফিরে যায়। বাংলাদেশ আফগানিস্তানের পথে হাটতে শুরু করে বলতে গেলে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করে বহির্বিশ্বে।
হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বাংলাদেশকে খামছে ধরে। সরকারের ভিতর আরেক সরকার (হাওয়া ভবন) এর কর্ণধার বেগম জিয়ার কু-পুত্র তারেক জিয়া। ক্ষমতাকে ভোগে পরিণত করে। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি জামাতের শোষণের যাঁতাকলে সীমাহীন যন্ত্রণা ভোগ করে। তাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।
এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল আওয়ামী লীগের সভাপতি, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায় তৎকালীন বিএনপি জামাত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং করেছিল।
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার এক জঘন্যতম কৌশল।
এতো কিছুর পরেও আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় এবং জনগণের   ম্যান্ডেট নিয়ে ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভূমিধ্বস বিজয় লাভ করে।
রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের বিস্ময়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর এই প্রথম একাধারে দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথে রয়েছে।
বাংলাদেশ আর যেনো কোনোদিন হত্যা,ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। সেই লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জঘন্য অপরাধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের বিচার করা। এই বিচার করতে গিয়ে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে দেশী-বিদেশী অনেক চাপ, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। এই বিচার এখনও চলমান রয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধীচক্র। আর এই হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় পর হলেও শেষ হয়েছে। বাঙালি জাতি কলঙ্ক মুক্ত হয়েছে এ বিচার শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে।
কিন্তু এখনও পলাতক খুনিদের দেশে এনে ফাঁসি কার্যকর না হওয়াতে কিছুটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। দেশের সাধারণ মানুষ মনে করে দ্রুত খুনিদের দেশে আনতে হবে এবং ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
অন্যদিকে ১৫ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড, খলনায়ক খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচারের দাবি ইতিমধ্যেই অনেক জোরালো হচ্ছে।জিয়ার মরণোত্তর বিচার এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মনে করে সরাসরি খুনের সাথে সম্পৃক্তকারীদের যেভাবে সর্বোচ্চ সাঁজা হয়েছে তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যের কুশিলবদেরও স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা গেলে অন্ততপক্ষে জাতি জানতে পারবে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আকাশে উৎক্ষেপণ, মেট্রোরেল, পাতাল রেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল নির্মাণ, রুপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিভিন্ন সড়ককে মহাসড়কে উন্নতিকরণ, ভোলা গ্যাসক্ষেত্র, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের সমুদ্রের বুকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি এবং হযরত শাহজালাল (র) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ট টার্মিনাল তৈরি।
মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিজয় এবং আটষট্টি বছরের অমীমাংসিত ছিটমহলের মীমাংসাসহ বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় দেশে পরিণত হয়েছে। আর এ সব সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার কারণে।
উন্নয়নের পাশাপাশি সমস্ত সূচকে বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘ কর্তক স্বীকৃত মডেল দেশ।
উন্নয়ন ও শান্তির রোল মডেল বাংলাদেশ। গণতন্ত্রের বিকাশে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম।
মিয়ানমার সরকার কর্তক জোরপূর্বক বাস্তুচূত দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের আশ্রায় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিক বাংলাদেশের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে ব্রিটিশ মিডিয়া ভূয়সী প্রশংসা করে ‘ মাদার অব হিউম্যানিটি ‘ আক্ষায়িত করে।
কোভিট-১৯ মহামারী এই বৈশ্বিক সংকটময় সময় এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, সাম্রাজ্যবাদের চোখ রাঙানো, স্যাংশন, ভূ-রাজনীতি ইত্যাদি সত্বেও বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা এখন তাঁরই কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বের হাত ধরে ২০৩০ সালের আগেই ইনশাল্লাহ বাস্তবায়িত হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই সন্নিকটে। আর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতাবিরোধীচক্র, গণতন্ত্র বিরোধীচক্র, উন্নয়ন ও শান্তি বিরোধীচক্র বিএনপি জামাত মাটে নেমেছে আদাজল খেয়ে।
তারা যেকোনভাবে সাংবিধানিক সরকারকে উৎক্ষাত করে মৌলবাদী, অগণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় নীল নকশা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মহান মুক্তিযুদ্ধকালে যারা আমাদের বিরুদ্ধে অবস্হান নিয়েছিল সেই শক্তিদের পরামর্শে বিএনপি জামাত বাংলাদেশকে অস্তিত্বশীল তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখন আর বিএনপি জামাতের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিবে না।
বিশেষ করে ২০০১ সালে বিএনপি জামাত ক্ষমতায় এসে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর পৈশাচিক কাদায় পাশবিক নির্যাতন চালায়। সারা বাংলাদেশ আবার পাকিস্তানের হায়নাদের দেখতে পায়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘর-বাড়ি, জায়গাজমি তারা দখল করে নেয় আর হিন্দুদের সম্পদ তারা গণিমতের মালামাল মনে করে ভোগ করতে থাকে।
১৯৭১ সালের অবয়ব দৃশ্য রুপায়ন করে বিএনপি জামাত।
বাংলাদেশের জনগণ ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের আগুন সন্ত্রাসীদের আর কোনোদিন ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের রক্ত এখনও বিএনপি জামাতের হাতে লেগে আছে। পেট্রোল বোমার পৈশাচিক হত্যাকান্ড এবং রক্তের হলি খেলার কথা আজও বাংলাদেশ ভুলে যায়নি।
বিদেশী প্রভুদের কাছে ধরনা দিয়ে বিএনপি জামাতের ক্ষমতায় যাবার এই দিবা স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হবে না।
বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার পক্ষে রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় জরিপ চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ভিত্তিক জরিপ ও গবেষণ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট ( আই আর আই) দেখতে পায় বাংলাদেশের ৭৪% মানুষ বঙ্গবন্ধুকন্যা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেন।
অন্যদিকে বিএনপি জামাত ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল।
ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল।
তৎকালীন বিএনপি সরকার দীর্ঘ পাঁচ বছর জনগণের ওপর নির্যাতন ও শোষণ চালানোর পর গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাহস হারিয়ে ফেলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
তাই দলীয় ক্যাডারদের মাধ্যমে একটি একতরফা সাজানোর নির্বাচনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অগণতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন তিনি।
এমনকি সেই সাজানো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়া, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রশীদকে কুমিল্লা থেকে এমপি বানিয়ে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসান।
বিএনপি তত্বাবধায়ক ব্যবস্হাকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়। আজকে আবার তারা সেই পঁচা তত্বাবধায়কের জন্য মায়া কান্না করছেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন বেগম জিয়া বলেছিলেন ‘ দেশে পাগল ছাড়া আর কেউ নিরপেক্ষ নয় ‘।
তাদের দ্বিমুখী কথাবার্তা বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে। যতোই পানি ঘোলা করার চেষ্টা করুক না কেনো, কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না।
এ ধরণের দ্বিমুখী কথা না বলে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস রাখুন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বাস ও আস্হা রাখুন।
বিএনপি বিদেশীদের কাছে ধরনা দিচ্ছে অথচ দেশের জনগণের প্রতি তাদের বিশ্বাস নাই। বাংলাদেশের জনগণই বাংলাদেশের আগামী দিনের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করবেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত যাঁর ধমনীতে স্রোতধারা বহমান।
সেই রক্তই তো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ। আর সেই রক্তের উত্তরাধিকারী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। জাতির পিতার  স্বপ্নের  সোনার বাংলা বাস্তবায়নে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে চলেছে অদম্য গতিতে প্রিয় বাংলাদেশ।
এইচ এম মেহেদী হাসান
লেখক, কলামিস্ট, সাংবাদিক ও সাবেক সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com