কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে অবমুক্ত করা হয়েছে কাছিমের ৭৫০ টি ছানা। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে কাছিমের এসব ডিম উদ্ধার করে সংরক্ষণ করা হয়। পরে এসব ডিম থেকে বাচ্চা ফুটলে তাদের সাগরে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
এর মধ্যে রয়েছে রামু উপজেলার হিমছড়ি পেঁচার দ্বীপে ৩৫০টি, মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে ২৫০টি, টেকনাফ উপজেলার মাদারবুনিয়ায় ১৫০টি ছানা শুক্রবার সন্ধ্যায় অবমুক্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল থেকে ৩০ হাজারের মতো কচ্ছপের ডিম সংরক্ষণ করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমে সংগ্রহ করা সর্বোচ্চ সংখ্যক ডিম। এরই মধ্যে সেসব ডিম ফুটে বের হওয়া ৫ হাজার ছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে।
রামুর পেঁচারদ্বীপ সমুদ্রসৈকতের ঝাউবিথীর বালুচরে রয়েছে সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্র। যেখানে দুটি পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয় কচ্ছপের ডিম।
নেকমের ইকোলাইফ প্রকল্পের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মী আবদুল লতিফ বলেন, চলতি মৌসুমে প্রায় ২৭শ ডিম সংগ্রহ করেছি। তারপর এগুলো বালুচরে গর্ত করে রাখা হয়। এখন ৬০ দিন, ৭০ দিন বা ৮০ দিনে ডিমগুলো ফুটে কচ্ছপের ছানা বের হয়ে আসছে। এরই মধ্যে ৮১৪টি ছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে।
কচ্ছপ বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে জানিয়ে নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম বলেন, একদিকে সাগরে ট্রলিং জাহাজের কারণে কচ্ছপ মারা পড়ছে, আবার মা কচ্ছপ উপকূলে ডিম দিতে এসে জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। এছাড়া কুকুরের কামড়েও অনেক কচ্ছপের মৃত্যু হচ্ছে। সব মিলে দিন দিন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে সামুদ্রিক কচ্ছপ।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সরওয়ার আলম বলেন, কচ্ছপ প্রকৃতির সুইপার। সমুদ্রের আবর্জনাগুলো ভক্ষণ করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখে উপকারী এই প্রাণী। কিন্তু আমাদের অসচেতনতায় নিজের আবাসস্থল হারাচ্ছে তারা। পর্যটন বিকাশের কারণে সমুদ্র উপকূলে অতিরিক্ত আলোকায়নে কূলে ফিরে কুকুরের আক্রমণেও মারা যাচ্ছে অনেক কচ্ছপ।
ডিএফও সরওয়ার আলম বলেন, কচ্ছপসহ সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষায় সরকার নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে । আশা করি, এই প্রাণীটির জন্যও উপকূলকে নিরাপদ করা হবে।
চলতি মৌসুমে যেমন অনেক ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে তেমন কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে মা কচ্ছপের মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক। গত ৩ মাসে মৃত্যু হয়েছে ১০৩টি মা কচ্ছপের। এর জন্য ট্রলিং জাহাজ ও জেলেদেরকে দায়ী করা হলেও কচ্ছপ রক্ষায় স্বদিচ্ছার অভাব দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
Leave a Reply