1. : admin :
সেন্টমার্টিন মোখার তাণ্ডবে যে কোন সময় আঘাত আনতে পারে  - দৈনিক আমার সময়

সেন্টমার্টিন মোখার তাণ্ডবে যে কোন সময় আঘাত আনতে পারে 

দিদারুল আলম সিকদার, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি
    প্রকাশিত : রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩
অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, ক্রমবর্ধমান দূষণ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডে এমনিতেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে এবার দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি ‘তছনছ’ হতে পারে- এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের লোকসংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। বঙ্গোপসাগরের মধ্যে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দ্বীপের বড় একটি অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। তার মতে, মোখার আঘাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূ-অবকাঠামোর বড় ক্ষতি হবে। এতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।
তাই প্রবাল এই দ্বীপ থেকে মানুষকে দ্রুত সরিয়ে নিতে জোর আনুরোধ জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক। ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঠেকাতে দ্বীপের প্রায় ১১ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ৩ হাজার মানুষকে টেকনাফে সরিয়ে নিয়েছে সরকার।
বাকি ৮ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যে ৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ দ্বীপের ৩৭টি হোটেল রিসোর্ট-কটেজ খালি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় শনিবার (১৩ মে) বিকেল ৩টায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল রান থেকে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় মোখার স্থলভাগ আঘাতের স্থান পর্যালোচনা করে বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে পলাশ তার ফেসবুক প্রোফাইলে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা পুরো কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়েই অতিক্রম করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, মহেশখালী দ্বীপের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপন্ন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বড় একটি অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা আছে।
তিনি বলেন, মোখার আঘাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূ-অবকাঠামোর বড় ক্ষতি হবে। এতে মানুষের প্রাণহানি হবে। কমপক্ষে দ্বিতীয় বা তার ওপরের তলার ভবনে আশ্রয়ের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে বড় প্রাণহানির শঙ্কা আছে।
॥ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুুটছে সেন্টমার্টিনবাসী ॥
বঙ্গোপসাগরে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্কে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে নিজ বসত ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা শুরু করেছে বাসিন্দারা। ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে।
শনিবার (১৩ মে) দুপুর থেকে এ পর্যন্ত সেন্টমার্টিন হাসপাতাল ও ডাকবাংলোতে আশ্রয় নিয়েছে ছয় শতাধিক পরিবার। পুরো হাসপাতাল ও ডাকবাংলোজুড়ে অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সেন্টমার্টিনের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
আশ্রয় নেয়া মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ঘর নিচু এলাকায়। সমুদ্রের পানিতে ডুবে যেতে পারে। তাই প্রাণ বাঁচাতে বাচ্চাদের নিয়ে আগেই চলে এসেছি।’
আয়েশা বেগম নামে একজন বলেন, ‘আমার স্বামী অসুস্থ। তাই আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসলাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে বলা হচ্ছে, আজ সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় শুরু হতে পারে। লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ আলম বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে নিরাপদ স্থান আশ্রয় কেন্দ্রে আসা শুরু করেছে সাধারণ লোকজন।’
সেন্টমার্টিনের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘সেন্টমার্টিন হাসপাতাল ও ডাকবাংলো আশ্রয় কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ছয়-সাতশতাধিক পরিবার অবস্থান নিয়েছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হবে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর কিছু লোকজন কান্নাকাটি করছেন এমন খবর স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি টেলিফোনে আমাকে জানিয়েছেন। তবে এ মুহূর্তে কোনো ধরনের ট্রলার পাঠানো সম্ভব নয়। দ্বীপের ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নেয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com