আবহমানকাল ধরে বাঙালির অন্যতম বিনোদন মাধ্যম সিনেমা হল। সুযোগ পেলেই এক সময় সব বয়সের মানুষ পরিবার, বন্ধু স্বজনদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতো হলে।
কিন্তু সেই সিনেমা এখন সাতক্ষীরার মানুষের কাছে যেন এক সুদুর অতীত। উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত সাতক্ষীরার এক সময়ের আলোচিত বিলাস বহুল সিনেমা হলগুলোর অধিকাংশই এখন বন্ধ।
এ অঞ্চলের মানুষ এখন চায়ের দোকানে বসে বিনোদন উপভোগ করেন।
এদিকে, দু’একটি সিনেমা হল চালু থাকলেও তাতে যে দর্শক হচ্ছে যে কোনো সময় এগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
জানা গেছে, সাতক্ষীরার ১৩টি সিনেমা হলের মধ্যে এখন ৯টিই বন্ধ। এগুলো হলো- সাতক্ষীরা শহরের সঙ্গীতা, শ্যামনগরের লক্ষী ও সুন্দরবন, কালিগঞ্জের জ্যাকি, পারুলিয়ার ইছামতি, বুধহাটার সোনালী, কলারোয়ার শাপলা, পাটকেলঘাটার জ্যোতি ও চ্যালেঞ্জ।
৪টি সিনেমা হল চালু থাকলেও তার মধ্যে দুটি কখনও বন্ধ কখনও আবার চালু। এগুলো হলো- কলারোয়ার জোনাকি, সাতক্ষীরার লাবনী, রক্সি, ও পারুলিয়ার লাইট হাইজ।
সাতক্ষীরার বাটকেখালী এলাকার চা দোকানদার বাবু এই প্রতিবেদককে বলেন, সাতক্ষীরার সিনেমা হলগুলোতে এক সময় সিনেমা দেখতে দীর্ঘ লাইন দিয়ে টিকেট কাটতে হতো। কোনো সিনেমা মনে ধরলে দু’তিন বারও দেখতো অনেকে। কিন্তু এখন আর মানুষ সিনেমা হলে যায়না।
তিনি আরও জানান, এলাকায় চায়ের দোকোনে এখন সিনেমা হলের চেয়ে বেশি দর্শক হয়। এলাকার অনেক দোকানে কালার টিভি, ভিসিডি ও ডিভিডি আছে। মানুষ সিনেমা হলের চেয়ে এখানেই এখন অনেক আরাম করে ছবি দেখে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের ছবির মান দিন দিন খারাপ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন আর আগের মতো বাংলা ছবি দেখে না। এখন মানুষ কলকাতা ও ভারতীয় হিন্দি ছবির প্রতি বেশি আকৃষ্ট।
সাতক্ষীরা সঙ্গীতা সিনেমা হলের স্বত্বাধিকারি মারুফা আকতার স্বপ্না এই প্রতিবেদককে,জানান, দর্শক কমে যওয়ায় ইতিমধ্যে তার মালিকানাধীন অনেক হল বন্ধ করে দিয়েছেন।
তিনিও একই বিষয় তুলে ধরে বলেন, “মানুষ এখন চায়ের দোকানে বসে টিভি ও সিডির মাধমে মিনি সিনেমা হল তৈরি করে সেখানে তাদের চিত্তরজ্ঞনের খোরাক মেটাচ্ছেন। যে কারণে মানুষ হলমুখি হচ্ছেনা। ”
মোবাইল আর আকাশ সংস্কৃতির গ্রাসে মানুষ ভুলতে বসেছে সিনেমা হলের সেই নীল অন্ধকারের কথা। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাকি দু’একটি সিনেমা হল যা চলছে তাও অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি মত দেন।
সাতক্ষীরা সিনেমা হল মালিক সমিতির কর্মকর্তা জারদিসুর রহমান এই প্রতিবেদক,বলেন, “সাতক্ষীরা জেলায় ১৩টি সিনেমা হল চালু ছিল। সবগুলিতেই রমরমা ব্যবসা ছিল। এ সিনেমা হলের মধ্যে ৯টিই এখন বন্ধ। ”
সাতক্ষীরার রকসি, লাবনী, পারুলিয়ার লাইট হাউজ ও কলারোয়ার জোনাকি সিনেমা হল কোনো রকম চলছে। এরমধ্যে রকসি এবং জোনাকি সিনেমা হল মাঝে মধ্যে চলে এবং মাঝে মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এই প্রতিবেদক কে বলেন, “সাতক্ষীরার অধিকাংশ সিনেমা হল এখন বন্ধ। মানুষ স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর সুবাদে ঘরে বসে সব ধরনের সিনেমা দেখার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে তারা এখন সিনেমা দেখতে হলে যায়না। সিনেমা হলগুলোর পরিবেশও এখন তেমন ভালো নেই। ”
তাছাড়া ভালোমানের সিনেমা ও উপযুক্ত পরিবেশ হলে আবারও মানুষকে হলমুখি করা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
Leave a Reply