দেশের সীমান্ত বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র টেকনাফ। এখানে গড়ে উঠেছে স্থলবন্দর। যে স্থলবন্দর দিয়ে সারা দেশের সাথে শক্তিশালী বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক বিদ্যমান রয়েছে সুদীর্ঘ সময়। কিন্তু সাম্প্রতিক নানা সমস্যা-সংকটে বন্দরের ব্যবসায়ীরা রয়েছে চরম হতাশায়।
জানা যায়, ডলার সংকটের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোতে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বন্ধ রাখা হয়েছে অনেক আগেই। বিষয়টি নিয়ে টেকনাফ স্থল বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন। বন্দরের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে নানামুখি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকদিন যাবতকাল ধরে টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীগণ এবং দেশের জনসাধারণের সমস্যার কথা সরকারকে জানানো অপরিহার্য মনে করছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমনটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
টেকনাফ বন্দরের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত মার্চ মাসের শুরুতে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে সরকার কমপক্ষে প্রতিমাসে (১০০-১৫০) কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকত। মার্চ মাসের দিকে সকল ব্যবসায়ীদের ব্যবসা এবং ভোক্তাদের কাছে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক ছিল। যেমন প্রতি কেজি আদা টেক্স ও সি.এন্ড.এফ খরচ ছিল ১৩ টাকা, যা বাজার মূল্য ছিল ভোক্তাদের হাতের নাগালে (৫৫-৬০) টাকা। গত মার্চ মাসের পরে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি টেকনাফ স্থলবন্দরে পদার্পণ করেন, যারা অতীতে ব্যবসার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তারা প্রভাব বিস্তার করে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি রপ্তানি লাইসেন্স করে। অতঃপর সোনালী ব্যাংক ও এবি ব্যাংকে আমদানি রপ্তানি লাইসেন্স দেখিয়ে এফ ডি ডি করা শুরু করে। তাদের প্রভাবের কারণে সাধারণ ব্যবসয়ীরা এফ ডি ডি করার সিরিয়ালও পায়না। বর্তমান সময়ে ড্রাফটের কোঠা প্রভাবশালীদের হাতে চলে যাওয়ায়, ব্যাংক ডলার সংকট দেখিয়ে এফ ডি ডি বন্ধ করে দেয়। প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা কোন ধরনের ব্যবসায়ী নয়, শুধুমাত্র মৌসুমী ব্যবসায়ী। তারা অযথা দ্রব্যমূল্যে উর্ধগতি সৃষ্টি করতেছে এবং টেকনাফ স্থলবন্দরের যেকোন পণ্যে সি.এন্ড.এফ খরচ ১০ গুণ বৃদ্ধি করতেছে। কিছুদিন পরপর এবি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে ড্রাফট ওপেন করে দেয়, কয়েকদিন পরপর আবার বন্ধ করে দেয়। ড্রাফট ওপেন হলে প্রভাবশলীরা এফ ডি ডি সিরিয়াল তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ড্রাফট করতে না পারার জন্য ব্যবসাও করতে পারতেছে না। টেকনাফ স্থলবন্দরে আদার টেক্স ও সি.এন্ড.এফ খরচ ১২ টাকার পরিবর্তে ৫০-৬০ টাকা আদায় করার কারণে দ্রব্যমূলের দাম ১০ গুণ বেড়ে গিয়ে (৫৫-৬০) টাকার আদা (১৮০-২০০) টাকা হয়ে গেছে। সরকারের রাজস্ব কিন্তু বৃদ্ধি করা হয়নি। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে জনসাধারণ দ্রব্যমূল্যের ভোগান্তিতে পড়ে গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বর্তমান অবস্থা চলমান থাকলে ভবিষ্যতে টেকনাফ স্থলবন্দরের প্রতিটি পণ্যের সি.এন্ড.এফ কস্টিং ১৫ গুণ বৃদ্ধি করে দিবে।
ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানান, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা/যারা ব্যবসায়ী না হয়ে ব্যবসার নামে টাকার নেশায় পড়ে গেছে তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া হউক। সাধারণ ব্যবসায়ী ও জনসাধারণের সুবিধার জন্য ব্যাংকে এফ ডি ডি উন্মুক্ত করে দিয়ে সবাইকে সিরিয়াল অনুযায়ী এফ ডি ডি করার সুযোগ দিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার আহবান জানালেন বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীগণ। এইভাবে চলতে থাকলে বন্দরের অবস্থা আরো খারাপ এর দিকে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী ও সচেতন সমাজ।
টেকনাফ সিএন্ডএফ সভাপতি আমিনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর জানান, বর্তমান ড্রাফট বন্ধের কারণে আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সহসা চলমান সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুস শুক্কুর সিআইপি জানান, এভাবে চলতে থাকলে পেশাদার ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সংকট থেকে মুক্ত হতে চাই আমরা।
হামিদ কোম্পানি জানান, ড্রাফট সমস্যার অচিরেই সমাধান দরকার। নতুবা আমাদের নানামুখি সমস্যায় পড়তে হবে। তরুন ব্যাবসায়ী আদিব রহমান জানান এভাবে ড্রাফট বন্ধ থাকলে আমার সংসার কিভাব চলবে। ওমর ফারুক সিআইপি বলেন আমরা আনদামি রপ্তানি কারক হিসেবে বন্দর ব্যবসার সাথে জড়িয়ে হালাল উপার্জনের মাধ্যমে আমাদের উপাজিত অর্থ থেকে সরকার কে স্বচ্ছভাবে সর্বচ্চো কর দিয়ে সম্মাননা হিসেবে সিআইপি হয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতি চলমান থাকলে আমরা কোথাই যাবো, জরুরী ভিত্তিতে এটির একটা সুন্দর সমাধন চাই।
Leave a Reply