কক্সবাজার প্রতিনিধি:
ডলার সংকটের কথা বলে সরকারি ব্যাংকগুলোতে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) দেয়া বন্ধ করেছে অনেক আগেই। কিন্তু ব্যবসা বন্ধ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেনি কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা।মিয়ানমার থেকে আমদানি পণ্য খালাস করতে বেসরকারি ব্যাংকের দারস্থ হতে হচ্ছে তাদের।
বেসরকারি ব্যাংক হতে ফ্র্যাঞ্চাইজ ডিসক্লোজার ডকুমেন্ট (এফডিডি) মাধ্যমে পণ্যের দাম পরিশোধ করতে গিয়ে ডলারের বিপরীতে সরকারি ঘোষণার দামের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এতে পণ্যের দামের কাটতি বাড়ায় দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে আমদানি পণ্য। ফলে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত আদা, মাছ, পেয়াজ, রসুন শুটকি আচারসহ সব কিছুরই দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সরকারের রোষানলে পড়ছেন তারা।
সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের মতে, বেসরকারি ব্যাংকে এফডিডি খুলতে গেলে ডলারের দাম ইচ্ছে মত নিচ্ছে ব্যাংক গুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দামের অতিরিক্ত ৭ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি না পেলে এফডিডি দেয়া হয় না। অর্ডারে আসা মালামাল ছাড়াতে গেলে বাড়তি দামই পরিশোধ করতে হচ্ছে ডলারের।
সোমবার ডলারের দাম ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা থাকলেও টেকনাফে চলতি সময়ে এফডিডি দেয়া একমাত্র ব্যাংক এবি ব্যাংক সোমবার ডলার প্রতি দাম রেখেছে ১১৫ টাকা ২৩ পয়সা। তবে, ১০৬ টাকা ৯০ পয়সার বাড়তি আদায় করা টাকার কোন রশিদও দেয়া হয় না। আবার এসব এফডিডি পেতেও আওয়ামী লীগের জেলার শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন দফতরের কর্তা ব্যক্তি, শীর্ষ জনপ্রতিনিধর তদবির ছাড়া পাওয়া দুষ্কর।
ডলারের দাম অতিরিক্ত পড়ায় নিত্য দরকারি খাদ্য আমদানি বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। পবিত্র রমজানে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত সব ধরনের কাঁচামাল দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে চরম ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছে সাধারণ ক্রেতারাও।
টেকনাফ বন্দরের শীর্ষ ব্যবসায়ী মেসার্স ফারুক টেডার্সের মালিক ওমর ফারুক বলেন, সোমবার একটি এলসিতে ২৯ হাজার ৯৯০ ডলারের বিপরীদে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এতে ডলারের দাম পড়েছে ১১৫ টাকা ২৩ পয়সা। কিন্তু আমাকে ১০৬ টাকা ৯০ পয়সার রশিদ দেওয়া হয়েছে। এরপরও কাঁচামাল নষ্ট হওয়ার ভয়ে যা চেয়েছে সেই দরেই এফডিডি নিতে বাধ্য হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ডলার সংকট দেখিয়ে অনেক আগেই সোনালী ব্যাংক লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর হতেই মূলতো এ জটিলতা সূষ্টি হয়েছে।
টেকনাফের আরেক ব্যবসায়ী আবু আহমদসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন একমাত্র এবি ব্যাংকই এফডিডি দিচ্ছে। চাহিদার পরিবর্তে যোগান কম হওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত মূল্যে ডলার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
টেকনাফ বন্দরের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ,প্রতিদিন কম করে হলেও ১৭টি এফডিডি দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দর থেকে ৭ থেকে ৯ টাকা বেশি নিয়ে প্রতিদিন ৩৫-৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এবি ব্যাংক। এতে করে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত টাকা তুলতে গিয়ে বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে।
শুধু তাই নয়, নিয়মিত এফডিডি নেতাদের তদবীরের ছাড়াও হয় না। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সরকারি দলের বড় নেতা বা এমপিদের তদবীরে এফডিডির সিরিয়াল আগে-পরে মিলে। এতে এসব তদবিরকারকদেরও ‘নজরানা’ দিতে হয়। সবকিছু তুলে আনতে ভোক্তাদের পকেট কাটা হচ্ছে। তাদের মতে, এবি ব্যাংক টেকনাফ শাখা এখন দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন কোন না কোন ব্যবসায়ীর পক্ষথেকে আওয়ামীলীগ নেতারা এফডিডির তদবীর নিয়ে যাচ্ছেন। আর এ সুযোগে অনৈতিকভাবে ডলারে দর বেশি রাখছে এবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নেতা বা বড় আমলার তদবির রক্ষা করতে গিয়ে সিরিয়ালে থাকা অনেক ব্যবসায়ী নিয়ম মতো এফডিডি পান না। তাদের মতে, এতে সময়মত এফডিডি না পেরে কাঁচামাল নষ্টের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
সালাম এন্ড ব্রাদার্স’র স্বত্বাধিকারী আবদু সালাম বলেন, আমি গত বছরের ডিসেম্বর এফডিডির সিরিয়াল পেয়েছিলাম। এরপর থেকে ডলার সংকটের কারন দেখিয়ে আমাকে এখন পর্যন্ত আর সুযোগ দেয়া হয়নি। তবে সরকার দলীয় নেতা দিয়ে যারা তদবীর করছে তারা নিয়মিত এফডিডির সুযোগ পাচ্ছে। চাহিদা বেশি থাকায় ডলার প্রতি বাজার থেকে ৭ থেকে টাকা পর্যন্ত বাড়তি দিতে হচ্ছে।
ডলারের দাম বাড়তি নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবি ব্যাংক টেকনাফ ব্রাঞ্চ ম্যানজার মনজুর আলম চৌধুরী।
তবে, তিনি এ বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে কোন কিছু জানার থাকলে এবি ব্যাংক হেড অফিসের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সেসাথে গত দুইদিন ধরে সার্ভার বন্ধ আছে জানিয়ে স্থল বন্দর ব্যবসায়ীরা কোন ড্রাব কিংবা এফডিডি পাচ্ছেনা বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাযায় এটি স্বরণ কালের প্রথম ঘটনা বলে অনেক ব্যবসায়ীরা জানান।
Leave a Reply