টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নের কামারকুমুল্লী গ্রামের জয়গন বেগমের অবস্থা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের কাদম্বিনীর মতো । ৬৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা বিধবা ভাতা উঠাতে গেলে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে তাকে জানানো হয়, ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ তার জাতীয় পরিচয়পত্রে তিনি মৃত। পরে নির্বাচন অফিসে খোঁজখবর নিলে জানতে পারেন হালনাগাদ ভোটার তালিকায় তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। সেই থেকে এই বিধবা নারীর বিধবা ভাতা বন্ধ রয়েছে।
শুধু জয়গনই নন, উপজেলায় নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে হালনাগাদ করা ভোটার তালিকায় বিপুলসংখ্যক জীবিত মানুষকে মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নানা কাজে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের ভুলের সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এই সব ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে উপজেলার ২৭ জন মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়েছেন। আরও ২০৩ জনের প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে!
জয়গনের নাতি রুমা (২৫) আক্তার জানান, নির্বাচন অফিস থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে আলমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কাছ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে দাদিকে সশরীরে নির্বাচন অফিসে গিয়ে প্রমাণ করতে হয় তিনি জীবিত আছেন।
আলমনগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমীন জানান, নির্বাচন অফিস থেকে যাদের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা দায়িত্ব অবহেলা করেছেন। ফলে এই ইউনিয়নের অনেক জীবিতকে মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে।
আলমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মোমেন জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্যে ভুলের বিষয়টি আমি জানি। নির্বাচন অফিস থেকে ডেটাবেজে ভুল করেছে। ভুক্তভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্রে এমন ভুলগুলো সংশোধনে সহযোগিতা করছি।
গোপালপুর পৌরসভার মেয়র মো. রকিবুল হক সানা জানান, যাদের ভোটার তালিকায় মৃত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তারা পৌরসভায় যোগাযোগ করলে আমরা ঠিক করে দিচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা সবাই ছিলেন স্কুলশিক্ষক-শিক্ষিকা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেন তারা। তাদের কাজের নিয়মাবলি শিখিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। জীবিতদের মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
Leave a Reply