শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলার কাজীরহাট এলাকায় অবস্থিত আ: রাজ্জাক উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে বসবাসরত মোনসুর মৃধা নামক এক ব্যাক্তির জমির কিছু অংশ স্কুলের জমি দাবী করে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে তার জমি দখলের পর ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে উলটো মানববন্ধনের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৪-মে) সকালে বিদ্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়।
এসময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী হোসেন কাজী উপস্থিত না থাকলেও, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর দবির হোসেন বেপারিসহ স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে, ভুক্তভোগী মোনসুর মৃধার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাকে উক্ত জমি থেকে উৎখাত করে দেয়ার হুমকি প্রদান করেন।
বিবাদমান দুই পক্ষসহ জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে পার্শ্ববর্তী মোনসুর মৃধার সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলতে ছিলো। যা নিয়ে ইতিপূর্বে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে সালিশ- দরবারও হয়। তবে বিষয়টি অমিমাংশিতই থেকে যায়। এমনকি বিষয়টি নিয়ে আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে এবং মহামান্য হাইকোর্টের একটি নিষেধাজ্ঞা থাকার দাবীও করেছে ভুক্তভোগী মোনসুর মৃধার পরিবার।
বিষয়টি নিয়ে গত (২০-মে) শনিবার স্কুল মাঠে মিমাংসার লক্ষ্যে একটি সালিশ-দরবার হওয়ার কথা থাকলেও মোনসুর মৃধা চিকিৎসাধীন থাকায় তার ছেলে রুবেল মৃধা আগেরদিন শুক্রবার তারা সালিশ-দরবারে উপস্থিত থাকতে পারবেননা বলে জানান। কিন্তু পরদিন সকালে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমানসহ স্থানীয় সালিশবৃন্দ উপস্থিত হয় এবং স্কুল মাঠের পাশেই খিচুড়ি রান্না করে খাওয়া হয়।
সালিশ না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমানসহ আগত শালিসগণ সেখান থেকে চলে আসা মাত্রই সন্ত্রাসী কায়দায় দ্রুত গতিতে মোনসুর মৃধার বাড়িতে থাকা দু’টি বসতঘর ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলে স্থানীয় অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন যুবক। ভুক্তভোগী পরিবারটি স্থানীয় পৌর সদস্য দবির বেপারী এবং তার ভাই রুস্তম বেপারীসহ আ: রাজ্জাক উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল আলী হোসেন কাজীর নির্দেশেই তাদের ঘর ভেঙ্গে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এছাড়া ঘর ভাঙ্গার সময় বাড়িতে থাকা কয়েকজন মহিলা বাঁধা দিতে গেলে তাদেরকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবারটি। যার মধ্যে একজন গর্ববতী মেয়েও রয়েছেন। এসময় ঘর থেকে নগদ অর্থ ও কয়েকটি মোবাইলফোন নিয়ে যায় এবং তাদেরকে কেউ সাহায্য করতে আসেনি বলেও জানান ভুক্তভোগী পরিবার।
ভুক্তভোগী মোনসুর মৃধার ছেলে রুবেল মৃধা প্রধানমন্ত্রীর একটি ভাঙ্গা ছবি হাতে নিয়ে তার কাছে বিচার দাবী করে সেদিন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমাদের জমিটি দখল করার পায়তারা করে আসছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। আমার ঘরে থাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাংচুর করে আমার ঘরটি ভেঙ্গে নিয়ে গেলো। আমাদের সাথে এই অন্যায়-অত্যাচার দেখার কেউই নেই। প্রশাসনকে বারবার ফোন করা হলেও তারা যথাসময়ে উপস্থিত হয়নি।
তবে বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক আলী হোসেন কাজী মোনসুর মৃধার ঘর ভাঙ্গার বিষয়টি দু:খজনক এবং অন্যায় হয়েছে বলে স্বীকার করে জানান, সকালে সালিশি হওয়ার কথা থাকলেও তারা সালিশিতে উপস্থিত না হওয়ায় সালিশটি করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে আমরা সবাই সেখান থেকে চলে যাই। এরপর সেখানে কি হয়েছে এ বিষয়ে আমি আসলে তেমন কিছু জানিনা। এসময় মানববন্ধনের বিষয়টিও তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সালিশি না হওয়ায় আমি সবাইকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সকল প্রকার ঝামেলা এড়িয়ে চলতে বলেছিলাম। পরবর্তীতে কিছু দুষ্কৃতিকারীরা মোনসুর মৃধার ঘর ভাংচুর করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তবে মানববন্ধনের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
Leave a Reply