ধউর মোড় থেকে মিরপুর বালুঘাট পর্যন্ত প্রায় পঁচিশ থেকে ত্রিশটি চোরাই তেল বিক্রির স্পট রয়েছে । ধউর মোড় থেকে ইস্টার্ন হাউজিং পর্যন্ত যেই স্পটগুলো রয়েছে তার প্রায় প্রতিটি স্পটে রয়েছে পর্দা সিস্টেম , পর্দা সিস্টেমটি হল উচ্চতায় প্রায় ২০ ফুট প্রশস্ত প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত একটি কাপড়ের প্রলেপ যা বাঁশের একটি বাউন্ডারির মধ্যে থাকে এখানেই শেষ নয় সকাল থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত এখানে চলে চোরাই তেলের কেনাবেচা এই তেল বিক্রি করে সাধারণত প্রাইভেট কারের চালক সরকারি গাড়ির চালক এবং রেডি মিক্স গাড়ি চালকরা । দিনের বেলা সাধারণত ছোটখাটো কেনাবেচা হয় আর রাত বারোটার পর বড় ধরনের কেনাবেচা চলে । আর এই পর্দা গুলো সাধারণত দেয়া হয়ে থাকে যাতে বাহির থেকে বুঝা না যায় ভেতরে কি হচ্ছে । এ বিষয়গুলো নিয়ে ইতিপূর্বে অনেক পত্রপত্রিকায় লেখা এসেছে কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখন পর্যন্ত চোরাই তেলের ব্যবসা জমজমাট চলছে । এবং নতুন ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ছে , বিভিন্ন সূত্র থেকে এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জানা গেছে স্থানীয় থানার অসাধু কিছু কর্মকর্তা এটার নিয়মিত ভাগ বাটোয়ারা পেয়ে থাকে তার সাথে কিছু হলুদ সাংবাদিক ও স্থানীয় ছিঁচকে মাস্তান রয়েছে।
কিছু টাকা বাঁচাতে এই তেলগুলো কিনছে বিভিন্ন রেন্ট এ কারের প্রাইভেট কার মাইক্রোবাসের ড্রাইভাররা , এখানে উল্লেখ্য এই তেলগুলো তারা যখন পাইপ দিয়ে গাড়ি থেকে নামায় তখন তেলের টাংকির তলায় কিছু ময়লা থাকে এই ময়লা গুলো তেলের সাথে ড্রামে এসে পড়ে , পরবর্তীতে যখন বিক্রি করে বিক্রি করার সময়ও এই ময়লাগুলো আবার তেলের সাথে তেলের ট্যাংকে চলে যায় এতে করে গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়।
এবার আসি মূল কথায় একজন ব্যবসায়ী যদি ( ডিজেল , পেট্রোল , অকটেন ) এই ধায্য পদার্থ বিক্রি করতে চায় সর্বপ্রথম তাদের যে কাগজপত্র গুলো লাগবে তা হলো :
১ , ট্রেড লাইসেন্স ।
২ , বিস্ফোরক লাইসেন্স । ৩ ,ফায়ার লাইসেন্স ।
৪ , এজেন্সি লাইসেন্স।
৫ , ডিসি পার্মিশন।
এখন কথা হল যেখানে এতগুলো কাগজ প্রয়োজন সেখানে তাদের একটি কাগজও আছে কিনা সন্দেহ । এবার আসি ইস্টার্ন হাউজিং এর পর থেকে বেড়ীবাধ সংলগ্ন কিছু ঝুপড়ি দোকান বা টং দোকান থেকে ডিজেল পেট্রোল অকটেন বিক্রি হয় তারা সাধারণত পর্দাওয়ালা ( যেসব দোকানে কাপড়ের বাউন্ডারি তৈরি করে গাড়ি থেকে নামিয়ে চোরাই তেল ক্রয় করা হয় ) চোরদের কাছ থেকে তেল ক্রয় করে থাকে , তবে এইসব দোকানের আশেপাশে যে দোকানগুলো রয়েছে সেইসব দোকানগুলো সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে কারণ ছোটখাটো দুর্ঘটনা থেকে যে কোন মুহূর্তে আগুন লেগে আশেপাশের সবকিছু পুড়ে শেষ হয়ে যেতে পারে নিমিষেই। সবশেষে আসি মিরপুর বালুঘাট , এখানে ইট বালু পাথর এবং কয়লার ব্যবসা হয়ে থাকে , কিন্তু এই মালগুলো যেই ঘাট দিয়ে গদিতে নামে সেই ঘাট সংলগ্ন ওয়াক ওয়ের পাশেই ৫-৬ টি দোকান রয়েছে এখানে ড্রামে ভরে দেদারসে তেল বিক্রি করছে । আরেকটি গ্রুপ রয়েছে তারা শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে গ্যালন এবং ড্রামে তেল ভরে নদীতেই অবস্থান করে তারা নদীতে চলন্ত স্যালো বোট অথবা জাহাজের বলগেট ওয়ালাদের কাছে তেল ক্রয় বিক্রয় করে থাকে। এদেরও কোনো কাগজপত্র এমনকি ট্রেড লাইসেন্স ও নেই । তাদের আশেপাশে অবস্থিত দোকানদাররা সবসময় থাকে ঝুঁকির মধ্যে কারণ যে কোন মুহূর্তে আগুন লেগে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাদের কাছ থেকে সাধারণত তেল কিনে থাকে শ্যালো ইঞ্জিন ওয়ালা নৌকা বা ট্রলার মালিকরা ।
এভাবে প্রতিদিন চোরাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রয় হচ্ছে হাজার হাজার লিটার চোরাই তেল এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ গাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীরা এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ সরকার । কারণ এই তেলগুলো যদি বৈধ ভাবে বিক্রি হয় তবে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পেতো কিন্তু একটু অবহেলা এবং সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে এখনই যদি এই বিষয়ে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়া না হয় আগামীতে এর রুপ আরো ভয়াবহ হবে।
Leave a Reply