শীতে যেমন খেজুর রসের চাহিদা থাকে তেমনই চৈত্রের প্রচণ্ড গরমে থাকে তালের রসের চাহিদা। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি গরমের শুরু থেকে তালের রস বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছেন অনেকেই।
মানিকগঞ্জের আনাচে কানাচে অনেকেই অন্যান্য পেশার পাশাপাশি তাল গাছ থেকে রস নামিয়ে বিক্রি করে সংসারে আয়ের হাল ধরেছে।
মানিকগঞ্জের মানুষের কাছে জনপ্রিয় পানীয় তালের রস। বর্তমানে এই প্রাকৃতিক পানীয় খুবই কম পাওয়া যায়। কিন্তু এখনো মানিকগঞ্জ জেলায় তালের রসের দেখা মেলে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে মনকে সতেজ, ঠাণ্ডা আর চোখে ঘুম আনতে তালের রস বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
সরেজমিনে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের বাঠুইমুড়ি রাস্তার পাশে বসে অনেকেই বিক্রিয় করছেন তালের রস। তাদের সবারই রয়েছে অন্যান্য পেশা।
চৈত্র ও বৈশাখ এই ৩ মাস তালের রস সংগ্রহ করেন তারা। যে তাল গাছে তাল ধরে না তার জট ও যে গাছে তাল ধরে উভয় প্রকার গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়।
বাঠুইমুড়ি এলাকা থেকে কথা হয় গাছি মো. ফজলুল দেওয়ানের (৪৯) সাথে তিনি বলেন, ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের উভাজানি গ্রামে তার বাড়ী। তিনি পেশায় একজন কৃষক।
কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনি কয়েকমাস তালের রস বিক্রিয় করেন।
আরো কথা হয় রস ব্যবসায়ী রিফাত হাসানের (১৪) সাথে সে নবম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়িতে থাকা তাল গাছ থেকে নিজেই রস সংগ্রহ করেন এবং বিক্রয় করেন।
তিনি আরো জানান, স্কুল বন্ধ থাকলে নিজের বাড়ির তাল গাছ থেকেই তালের রস সংগ্রহ করে বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন ভালোই আয় হয়।
রাজিব (১২) ও রানা (১৭) আপন দুই ভাই লেখাপড়ার পাশাপাশি কয়েকমাস গ্রামের ৩-৪ টা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন।
তারা বলেন, একটা জটা তাল গাছ থেকে প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকেলে তিন ধাপে ২০-২৫ গ্লাস রস সংগ্রহ করি। প্রতি গ্লাস রস ২০ টাকা করে বিক্রয় করি। প্রতিদিন আমরা দুই ভাই ২ হাজার আবার কোনদিন ৩ হাজার টাকাও বিক্রিয় করি।
এছাড়াও জেলার হরিরামপুর উপজেলায়ও দেখা যায় তালের রস সংগ্রহের একই চিত্র। উপজেলার ঝিটকা এলাকায় দেখা যায় জটা তাল গাছ। সেখান থেকে রস সংগ্রহ করে প্রতিদিন আয় করেন তারা।
গাছিরা বলছেন তালগাছ কমে যাওয়ায় তেমন রস সংগ্রহ করা যায় না। এদিকে রসের চাহিদাও অনেক বেশি। অনেকেই শখের বসে দূর দূরান্ত থেকে এখানে এসে তালের রস পান করে যান। প্রতি গ্লাস তালের রস এখানে ২০ টাকা করে বিক্রয় হচ্ছে।
পাশের গ্রাম থেকে রস পান করতে আসা সোহাগ মোল্লা জানান, এখানকার তালের রস ভেজাল মুক্ত, মিষ্টি ও সুস্বাদু। আমাদের জেলার বাঠুইমুরি এলাকায় সবচেয়ে বেশি তালের রস সংগ্রহ করা হয়।
পথচারী সুজাত বলেন, এখানকার তালের রস ভেজাল মুক্ত, মিষ্টি ও সুস্বাদু। আমাদের উচিত বেশি করে তালগাছ লাগানো ও পরিচর্যা করা। তালগাছ থেকে আমরা শুধু রসই পাই না, এতে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পায়।
Leave a Reply