২০২০ সালে বড় অঙ্কের লোকসান আর দেনার দায় নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তে স্থগিত হয়ে যায় কুষ্টিয়া সুগার মিলের কার্যক্রম। এর ফলে কুষ্টিয়া সুগার মিল দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে হাজার কোটি টাকার মেশিন ও সরঞ্জামসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো।
জানা যায়, লেদ মেশিন, সি-মেশিন, টারবাইন, বয়লার টিউব, জেনারেটর, ওজন মেশিন, ক্রেন, পাওয়ার হাউজ, ক্রেরিয়ার চেন, বয়লার, বেয়ারিং, বয়লিং হাউজ ল্যাবরোটারি, রোলার ফানিস ওয়েল সাপ্লাই মেশিনসহ আরো ছোট বড় বিভিন্ন মেশিন ও যত্রাংশ পরে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মিল সূত্রে জানা যায়, ২১৬ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কুষ্টিয়া সুগার মিল। ১৯৬১ সালে কুষ্টিয়া শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে জগতি এলাকায় কুষ্টিয়া সুগার মিল এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে কারখানায় চিনি উৎপাদন শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে চিনিকলটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু আকর্ষিক মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ধ্বংসের মুখে রয়েছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া চিনিকলে সুনসান নীরবতা। গেটের নিরাপত্তাপ্রহরী ও রেজিস্টারে নাম লিপিবদ্ধকারী কর্মচারীকে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। গেটের বাইরে বা ভেতরে মানুষের আনাগোনা ছিল না। ব্যবহার না করা ও যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মিলটির বিভিন্ন ধরনের মেশিনপত্র যন্তাংশ সহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো। মাঠে পড়ে রয়েছে অনেক যত্রাংশ।
এছাড়াও যেখানে শত শত কোটি টাকার মেশিনপত্র রয়েছে তার অধিকাংশ চাল ঝড়ে উড়ে গেছে ও ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা বাপ্পী আহম্মেদ। তিনি আরো বলেন কুষ্টিয়া সুগার মিল চালুর সময় এখানে উৎসব মুখর পরিবেশ থাকতো। মিলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হাট বাজার দোকান পাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা কিন্তু মিলটি আকস্মিক বন্ধ হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি যাতে মিলটির কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা পায় এবং সেই সাথে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
এই খাতের শ্রমিক ও নেতাদের দাবি, চিনিকলগুলো চালু করা হলে অস্থিতিশীল চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। তারা জানান, এরই মধ্যে চিনির বাজার চড়া হয়ে গেছে। তাই মিলগুলো গুটিয়ে না ফেলে আধুনিকায়ন করা উচিত। আর কোটি কোটি টাকার যে সব মেশিন অবহেলায় পড়ে আছে এইগুলো সংস্কার করে লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে দেখভাল করা উচিত। যাতে আমাদের সম্পদ নষ্ট না হয়।
কুষ্টিয়া চিনিকলের নজরুল ইসলাম মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) বলেন, মেশিনপত্র দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে নষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। মিল চালু থাকলে মেশিন পত্র সহ সকল কিছুই ভালো থাকতো। মিল কবে চালু হবে এ বিষয়ে তিনি বলেন আসলে সরকার কি সিদ্ধান্ত নেবে আমরা এ বিষয়ে জানিনা। মেশিন সেটআপ রুমের চাল ঝড়ে উড়ে ফাঁকা ও ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়া সম্পর্কে বলেন, আমরা চেয়ারম্যান ও উর্ধতনদের জানিয়েছি তারা ছবি তুলে পাঠাতে বলেছে। আগামী বছর বাজেট হলে তখন টিনের ব্যবস্থা হবে।
Leave a Reply