কর্মগুণে এগিয়ে যেতে চান সমাজ সেবক ও নারী উদ্যোক্তা রোকসানা হায়দার ডলি । নারায়ণগঞ্জ শহরের অনেকের কাছে সু পরিচিত । মানব কল্যাণে নিবেদিত এক প্রাণ। পৈত্রিক ভূমি রংপুর। শিশু বয়সেই পিতাহারা হন। তাই শিশু বয়সেই পিতার স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত । পিতার মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েন। ছায়া হয়ে পাশে দাঁড়ান বড় বোন জামাই এড: আশরাফ আলী।তিনি পেশাগত ভাবে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে আইনজীবী। বড় বোন ও বোনজামাই নিজ গৃহে ডলিকে পিতা মাতার স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে নিজের সন্তানের মতো লালনপালন করে বিয়ে দেন নারায়ণগঞ্জ শহরের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান ডাঃ হায়দার আলীর সাথে। ডাঃ হায়দার আলী পেশাগত ভাবে নারায়ণগঞ্জ টিএনটি অফিসের প্রকৌশলী পদে চাকুরী করতেন। বিয়ের পূর্বেই ডলির মনে সবসময়ই একটি চিন্তা চেতনা ও স্বপ্ন ছিলো সমাজের অবহেলিত দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু একটা করার। বিবাহের পর সংসার জীবনে এসে ভাবতেন অলস সময়ে বসে না থেকে কোন কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করার।নিজেকে স্বাবলম্বী করতে। মনের মধ্যে জমে থাকা এই চিন্তা চেতনা ও স্বপ্ন স্বামীর কাছে ব্যক্ত করেন। ডলির এমন ইচ্ছে আকাঙ্ক্ষার কথা শুনে স্বামী সমর্থন দেন। ডলি স্বামীর এমন উদারতা দেখে মুগ্ধ হন। পাশাপাশি পরিবারের আত্নীয় – স্বজন, বন্ধু- বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী সবাই ডলির কথা শুনে সামজিক সেবামূলক কাজে ডলিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। প্রথমে কাজ শুরু করেন নিজ এলাকা নারায়ণগঞ্জ শহরের চানমরী বস্তিবাসীদের মধ্যে খাদ্য ও বস্র বিতরনে । বস্তিবাসী ডলির এ সহযোগিতা পেয়ে আনন্দিত হন। তাদের মুখে সুখের হাসি ফুটে ওঠে। এটা দেখে ডলি উৎফুল্ল হয়ে নিজ সাধ্যমত যখনই যা পারতেন সহযোগিতা করতে থাকেন । ডলির এ সহযোগিতার কথা এলাকায় ছড়িয়ে পরে। এতে চানমাড়ীসহ আশে পাশের এলাকার অনেকেই ডলির কাছে আসতে শুরু করে দেন। কেহ আসেন চিকিৎসার টাকার জন্য, কেহ বাচ্চাদের লেখা পড়ার খরচের জন্য, কেহ সন্তানের বিয়ের টাকার জন্য। মানবিক এ কাজে ডলির নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে একজন সমাজ সেবক হিসেবে। করোনা কালিন সময়ে তিনি অনেক পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরন করেছেন।
সামাজিক সেবামূলক কাজের শুরুটা এ ভাবে হলেও কর্মক্ষেত্রে সাক্ষাৎ ও পরিচয় হয় রংমেলা নারী কল্যাণ সংস্থার সভানেত্রী ও জাতীয় যুব স্বর্ণপদক প্রাপ্ত নারী উদ্যোক্তা সাবিরা সুলতানা নীলার সাথে। সাবিরা সুলতানা নীলার বহুমুখী কর্মপ্রতিভা দেখে ডলি আগ্রহ প্রকাশ করেন কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের এবং তার সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে কাজ করার।
নারী উদ্যোক্তা নীলা – ডলির আগ্রহ দেখে উৎসাহিত হন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। শুরুতে ডলিকে হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পের নানা বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরী করে তুলেন একজন উদ্যোক্তা। হস্ত ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ নিয়ে ডলি চানমাড়ীতে নিজগৃহে নিজস্ব তৈরি ব্লক,বাটিকের থ্রি পিস,শাড়ী,চাদরসহ বিভিন্ন ধরনের পোষাক ও কারুকাজের পণ্য দিয়ে সাজিয়েছেন প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র বুটিক হাউজ।। অচিরেই উদ্বোধন করা হবে। প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন রংপুর বুটিকস। নারীদের আত্মনির্ভরশীল ও অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে তিনি এই শো রুম ও বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। এখানে নিজস্ব তৈরী পণ্য ছাড়াও অন্যাণ্য নারীদের তৈরী পণ্য তিনি ক্রয় করে নিয়ে বিক্রয় করবেন।
সমাজ সেবক থেকে ডলি হয়ে উঠেন একজন সফল উদ্যোক্তা। সংসার জীবনে তিন সন্তানের জননী। দুই পুত্র ও এককন্যা সন্তান। সবাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখের পরিবার। শত ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারের সবার প্রতি দ্বায়িত্ব পালন করে ডলি তার কর্মদক্ষতায় এগিয়ে চলছেন সততার আদর্শ নিয়ে।
ইতোমধ্যে সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ও নারী উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে মাদার তেরেসা শাইনিং পার্সোনালিটি এওয়ার্ড,
জয়বাংলা সাংস্কৃতি পরিষদ,নারী জাগরন ফাউন্ডেশন, দুস্থ মানব কল্যাণ সোসাইটি থেকে সন্মাননা সনদ ও পদক গ্রহন করেছেন। বর্তমানে সাংগঠনিক ভাবে তিনি
রংমেলা যুব সংঘ’র সহ – সভাপতি পদে নিয়োজিত থেকে কর্মরত দ্বায়িত্ব সুনামের সহিত পালন করছেন।
রোকসানা হায়দার ডলি’র সাথে কথা বললে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষ ভালো কাজের মধ্য দিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। আর বেঁচে থাকার সময়ে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করাই মানবতা । ঠিক তেমনি সমাজের অবহেলিত অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারাটাই আমার স্বপ্ন ও ইচ্ছে। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি আমার কর্মগুণে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। মানবতার সেবায় নিয়োজিত রাখতে চাই নিজেকে সবসময়।
Leave a Reply