1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. : admin :
অবৈধভাবে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের মূলহোতা আনিছুর রহমানসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করছে র‍্যাব-১ - দৈনিক আমার সময়

অবৈধভাবে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের মূলহোতা আনিছুর রহমানসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করছে র‍্যাব-১

অনলাইন ডেস্ক
    প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩

 

র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সাথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কয়েকটি চক্র।এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে সর্বহারা হচ্ছে অসহায় নিম্নআয়ের মানুষ। আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের এহেন কার্যক্রমে চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে র‍্যাব-১ এর সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগত তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনিসহ অন্যান্য মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল।

এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন অনলাইন এবং অফলাইন প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে থাকে। জানা যায় বিদেশে অবস্থানরত একএকজন কিডনি ক্রেতা জীবন বাঁচাতে ৪৫-৫০ লাখ টাকা খরচ করে কিডনি ক্রয় করেন। এই টাকার মাত্র ৪-৫ লাখ টাকা পায় গরীব প্রতারিত ডোনার। ৫-১০ লাখ টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় দালাল, অসাধু ট্রাভেল এজেন্ট এবং অন্যান্য প্রতারকদের মাঝে।

বাকি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ভোগ করে বিদেশে অবস্থানরত কিডনি পাচার সিন্ডিকেট। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দরিদ্র সীমার নীচের অসহায় মানুষগুলোকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে এই চক্র। কখনও তারা বলে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকতে একটির বেশি কিডনি দরকার নেই, কখনও মিথ্যা আশ্বাস দেয় যে চিকিৎসার খরচ তারা বহণ করবে।

টাকার লোভে কিডনি হারিয়ে প্রায়ই অকর্মন্য হয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পরে অসহায় মানুষগুলো। সাম্প্রতিক সময়ে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রগুলোকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সাইবার মনিটরিং ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র‍্যাব-১।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জুলাই ২০২৩ ইং ৪.ঘটিকা হতে ১১ ঘটিকা পর্যন্ত র‍্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর ভাটারা, বাড্ডা, বনানী ও মহাখালী এলাকা হতে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা মোঃ আনিছুর রহমান (২৯)মোঃ আরিফুল ইসলাম রাজিব (৩৩)মোঃ সালাউদ্দিন তুহিন (২৭)মোঃ এনামুল হোসেন পারভেজ (ডোনার)মোঃ সাইফুল ইসলাম,দেরকে গ্রেফতার করা হয়।

উক্ত অভিযানে কিডনি ক্রয় বিক্রয় চক্রের সদস্যদের নিকট হতে ১ টি সিপিইউ, ১ টি হার্ডডিক্স, ১ পাতা ভিকটিম এর সাথে চুক্তির এফিডেভিট ফটোকপি, ১ টি পাসপোর্ট (মুলকপি), ১৪টি পাসপোর্ট এর ফটোকপি, ১২ টি ভিসার ফটোকপি, ১ পাতা ফ্যামিলি ফ্রেম, নগদ ৭০০০/- টাকা, ভারতীয় ৪৮০/- রুপী,৫ পাতা বিভিন্ন ব্যাংকের জমা স্লীপ, ৪ টু ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ৫ পাতা হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিন শর্র্ট, ২ পাতা অঙ্গীকারনামা, ৩ টি এটিএম কার্ড এবং ৭ টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

চক্রের ১ম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। চক্রের ২য় দলের মুলহোতা আনিছ ঢাকায় বসে বিদেশে ডোনার পাঠানোর বিষয় তদারকি করে। চক্রের ৩য় দলটির সদস্য আরিফ এবং তুহিন ১ম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।

পরবর্তীতে ২য় গ্রুপ ঢাকার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রত্যাশী রোগীর সাথে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে, ৪র্থ গ্রুপটির হোতা “সাহেবানা র্ট্যুস এন্ড ট্রাভেল্স” এর মালিক মোঃ সাইফুল ইসলাম প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভূয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভূক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

এই চক্রের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী ১ম চক্রের সাথে পারস্পরিক যোগসাজশে ভূক্তভোগী কিডনি ডোনারকে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের মূল হোতা আনিস স্ব-শরীরে ডোনারদেরকে নিয়ে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দর দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রবেশ করে এবং হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ/অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।

দুপুরে কাওরানবাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এখ সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ বলেন,চক্রের মূলহোতা ও অন্যতম অভিযুক্ত মোঃ আনিছুর রহমান ২০১৯ সালে ভূয়া চিকিৎসার কাগজপত্র তৈরী করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গমন করে অর্থের বিনিময়ে নিজের একটি কিডনি বিক্রয় করে। সেখানে অবস্থানকালীন সে কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীদের ব্যাপক চাহিদা দেখতে পায় এবং সে নিজেই কিডনি প্রতিস্থাপনের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা শুরু করে।

পাশ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সাথে যোগসাজশে সে এখানে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করে এবং অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা হতে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করত। অদ্যাবধি তার মাধ্যমে ৫০ টির অধিক কিডনি ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে মর্মে সে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলাম কিডনি ডোনারদের পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, ব্যাংক এনডোর্সমেন্ট, মেডিকেল ডকুমেন্টস, ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র তৈরী করে থাকে। যে সকল ব্যক্তিদের কাগজপত্র সঠিক থাকে না কিংবা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের ঘাটতি থাকে, তাদের কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুুত করে থাকে মর্মে জানা যায়। উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে ২০২১ সালে সে একই অপরাধের জন্য র‌্যাব কর্তৃক ধৃত হয়েছিল।এছাড়াও গ্রেফতারকৃত আরিফ এবং তুহিন মিলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে সম্ভাব্য ডোনারদের সংগ্রহ করতো।গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে ও জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com