পুলিশ জনগণের বন্ধু’ পুলিশের শ্লোগান হলেও পুলিশকে নিয়ে জনগণের মধ্যে সাধারণত বিরূপ ধারণা রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য এর ব্যতিক্রমও ঘটেছে। তেমনি নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর পরিদর্শক(নিঃ) আমিনুল ইসলাম ও উপ পরিদর্শক শাফিউল (সাফি)। তারা পুলিশের কর্মকর্তা হয়েও মানবিক সেবা মূলক কাজ করে জনগণের বন্ধু রুপে দৃষ্টান্ত স্হাপন করে চলছে ।
সম্প্রতি ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার মহানুভবতায় পাল্টে গেল এক প্রতিবন্ধীর জীবন চিত্র। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও কারে কাছে হাত না পেতে নিজ উপার্জনে বাবা মা পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা উচু করে সমাজে বাস করছেন। হঠাৎ আর্থিক সমস্যায় পড়ে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবার সময় দুই মানবিক পুলিশ কর্মকর্তার মানবিক সহযোগিতা পেয়ে আবারও মনোবল ফিরে পান। নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন। চোখে মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের হাসি।
তথ্য নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর পরিদর্শক (নিঃ) আমিনুল ইসলাম ও উপ পরিদর্শক আব্দুস শাফীউল আলম
নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর পাশে অসহায় প্রতিবন্ধী চায়ের দোকানদার মো. রুবেলকে নগদ আর্থিক সহায়তা সহ একটি স্টিলের টং(বাক্স) দোকান তৈরি করে দেন। সাংসারিক অভাব অনটনের জটিলতায় প্রতিবন্ধী রুবেল ঋণ গ্রস্ত হয়ে চায়ের দোকান বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পরেন। তখন এই প্রতিবন্ধীকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে দোকান তৈরি করে দিয়ে এবং দোকানে মালামালের জন্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে অসহায় রুবেলের পাশে দাঁড়িয়ে মহৎ দৃষ্টান্ত রাখলেন পুলিশের এই দুই কর্মকর্তা। এবং রুবেলের সম্পর্কে জানা যায় যে,
অসহায় রুবেল চাঁনমাড়ি মাউড়াপট্টি নাসিক ১২নং ওয়ার্ডের ভোটার। কিন্তু বসবাস করেন বন্দর থানার লক্ষণখোলা এলাকায়।
পৈত্রিক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার দ্বীগলি গ্রাম। সে বাচ্চু কাজীর ছেলে ।
৫ ভাই ৩ বোনের মধ্যে সপ্তম সন্তান তিনি। জন্মের ছয় মাস পর থেকে তার একটি পায়ের সমস্যা দেখা দেয়। এবং হাটাচলা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিবন্ধী রুবেলের সাথে কথা বললে তিনি বলেন,
ছোট থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে চলে আসি ।
প্রথমে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম।পরে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া রেলস্টেশনে চায়ের দোকানদারি শুরু করি আমি ও আমার বাবা । সংসার পুরোটাই চলত এই চায়ের দোকান থেকে। বাবা-মা স্ত্রীকে নিয়ে একসাথে থাকতাম। আমার তিনটি সন্তান।
মেয়ে তানহা(১১) দুই ছেলে রবিউল(৭)ও রাকিবুল(২)।
পিতা মাতা ও আমার পরিবারকে নিয়ে ভালোই সুখ স্বচ্ছন্দে ছিলাম। হঠাৎ ২০০৪ সালে বাবা বিয়ে করে আমাদের ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। তখন আমি হিমশিম খেয়ে পড়ি। একা সংসার চালানো আমার জন্য কষ্ট হয়ে পড়ে। নিরুপায় হয়ে চাষাড়া জিয়া হলের সামনে চায়ের দোকানদারি করি ৫ বছর। বর্তমানে চাষাড়ার ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিকের সামনে ৭বছর যাবত দোকানদারি করছি।
আমার বড় ছেলেটি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমি আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে যাই। চিকিৎসা ব্যয় চালাতে গিয়ে দোকান চালানো আর আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না
চায়ের দোকানটি বিক্রি করে ফেলি।
এবং ৩০-৩৫ হাজার টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে যাই। এ বিষয়টি পুলিশ শাফীউল আলম স্যারকে জানাই। আমার এ কষ্টের কথা শুনে স্যার আমাকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা খরচা করে দোকান তৈরি করে দেয়। এবং দোকানের মাল তোলার জন্য আরো নগদ ১০ হাজার টাকা দেয়। এবং বলেন দোকানে বাকি মাল তোলার জন্য যা লাগে তাই তিনি দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। আমি পুনরায় দোকানদারি করছি। এবং কিছু কিছু ঋণ পরিশোধ করে আমি সংসার চালাচ্ছি। আল্লাহর রহমতে এখন ভালো আছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক আব্দুস শাফীউল আলম বলেন,
আমিনুল স্যারের নির্দেশনায় আমি ও আমার টিম মিলে এই প্রতিবন্ধীকে সহায়তা করেছি। প্রতিবন্ধী রুবেল কে আমি দীর্ঘদিন যাবত এখানে ব্যবসার সুবাদে চিনতাম। ও খুব পরিশ্রমী মানুষ। ওর সব কথা শুনে আমি বিষয়টি আমিনুল স্যারকে বলার পর স্যার আমাকে নির্দেশনা দেয় রুবেলের ব্যবসা পুনরায় চালু করতে পরিপূর্ণ সহযোগিতার।
Leave a Reply