1. : admin :
বৃষ্টি আইনে ১ম ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪৪ রানে হার বাংলাদেশের - দৈনিক আমার সময়

বৃষ্টি আইনে ১ম ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪৪ রানে হার বাংলাদেশের

স্পোর্টস ডেস্ক
    প্রকাশিত : রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

হার দিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করলো সফরকারী বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আজ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওপেনার উইল ইয়ংয়ের সেঞ্চুরিতে  নিউজিল্যান্ড বৃষ্টি আইনে ৪৪ রানে হারিয়েছে টাইগারদের। ৮৪ বলে ১০৫ রান করেন ইয়ং। এই হারে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলো বাংলাদেশ।
বৃষ্টি বিঘিœত ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৩০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৩৯ রান করে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। তিন দফা বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি ৩০ ওভারে নির্ধারিত হয়। বৃষ্টি আইনে ৩০ ওভারে ২৪৫ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাটাররা বড় ইনিংস খেলতে না পারায় ৩০ ওভারে ৯ উইকেটে ২০০ রান  পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয়  বাংলাদেশ।
ডানেডিনে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। টস-এর পরপরই বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে ১ ঘন্টা ১০ মিনিট সময় নষ্ট হওয়ায় ম্যাচটি ৪৬ ওভারে নির্ধারন করা হয়।
পরবর্তীতে খেলা শুরু হলে বাংলাদেশের পেসার শরিফুল ইসলামের প্রথম ডেলিভারিতেই বাউন্ডারি মারেন ওপেনার উইল ইয়ং। পরের বলে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইক বদল করেন তিনি। চতুর্থ বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে সাজঘরে ফিরেন আরেক ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র।
ওভারের শেষ বলেও উইকেট পান  শরিফুল। অফ স্টম্পের বাইরের বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে এনামুল হক বিজয়কে ক্যাচ দিয়ে শূণ্যতেই বিদায় নেন হেনরি নিকোলস।
প্রথম ওভার শেষে শরিফুলের জোড়া আঘাতে ২ উইকেটে ৫ রানে পরিনত হয় নিউজিল্যান্ড।
শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে জুটি গড়ার লক্ষ্যে সাবধানে এগোতে থাকেন ইয়ং ও অধিনায়ক টম লাথাম। দশম ওভারের প্রথম বলে মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম বলে স্লিপে সৌম্য ক্যাচ মিস করলে  ১৮ রানে জীবন পান  লাথাম।
১৪তম ওভারের পঞ্চম বল পর আবারও বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। এবার বৃষ্টিতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য আরও কমে  ৪০ ওভারে নির্ধারিত হয়।
খেলা শুরুর পর ১৯তম ওভারে নিউজিল্যান্ডের রান ১শতে নেন ইয়ং ও লাথাম। ২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়ানডেতে ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন লাথাম। এজন্য ৫৮ বল খেলেছেন তিনি। লাথামের অর্ধশতকের পর তৃতীয়বারের মত বৃষ্টিতে প্রায় পৌনে দুই ঘন্টা খেলা বন্ধ থাকলে, ৩০ ওভারে নির্ধারিত হয় ম্যাচটি।
এরপর বাংলাদেশ বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলা শুরু করেন ইয়ং ও লাথাম। ২২তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৬১ বল খেলা ইয়ং। সৌম্যর করা পরের ওভারে টানা ৩টি চার মারেন লাথাম। ২৪তম ওভারে নিউজিল্যান্ডের রান দেড়শ স্পর্শ করেন তারা।
স্পিনার আফিফ হোসেনের করা ২৫তম ওভারে দু’টি ছক্কায় ১৭ রান নেন ইয়ং-লাথাম। ২৬তম ওভারের প্রথম বলে লাথামকে বোল্ড করে জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭৭ বলে ৯২ রান করেন লাথাম। এই ইনিংস খেলার পথে নিউজিল্যান্ডের দ্বাদশ ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৪ হাজার রান পূর্ণ করেন লাথাম।
৫ রানে ২ ব্যাটারকে হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে ১৪৫ বলে ১৭১ রান যোগ করেন ইয়ং ও লাথাম। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেট এটিই নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রানের জুটি।
লাথাম ফেরার পর নতুন ব্যাটার মার্ক চাপম্যানকে নিয়ে রানের গতি ধরে রাখেন ইয়ং। ২৮তম ওভারে সৌম্যর বলে ৪টি চারে ১৮ রান তুলেন ইয়ং। পরের ওভারে মিরাজকে ১টি করে চার-ছক্কা হাঁকান তিনি। পঞ্চম বলে চাপম্যান ব্যক্তিগত ২০ রানে রান আউট হলেও, ওভারের শেষ বলে ওয়ানডেতে তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ইয়ং।
ইনিংসের শেষ ওভারে তিন রান আউটে ৮ রান তুলতে পারে নিউজিল্যান্ড। এতে নির্ধারিত ৩০ ওভার ৭ উইকেটে ২৩৯ রানের সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। তৃতীয় দফায় বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে ৬৪ বলে ১৩১ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ড।
৮৪ বল খেলে ১৪টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০৫ রান করে রান আউট হন ইয়ং। বাংলাদেশের শরিফুল ২৮ রানে ২টি ও মিরাজ ৫৩ রানে ১টি উইকেট নেন।
বৃষ্টি আইনে ৩০ ওভারে ২৪৫ রানের টার্গেট পায় বাংলাাদেশ।
জবাবে খেলতে নেমে প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। পেসার এডাম মিলনের বলে খোঁচা মেরে দ্বিতীয় স্লিপে লাথামকে ক্যাচ দেন রানের খাতা খুলতে না পারা সৌম্য। বিশ^কাপের আগে গত সেপ্টেম্বর ঘরের মাঠে নিজের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২ বল খেলে খালি হাতে ফিরেছিলেন তিনি। ৬৪ ম্যাচের ওয়ানডেতে অষ্টমবার শূণ্যতে আউট হলেন সৌম্য।
দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টায় ভালোই এগোচ্ছিলেন আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয়  ও তিন নম্বরে নামা অধিনায়ক শান্ত। ৬ ওভার শেষে দলীয় স্কোর  ৪৪ রানে নিয়ে যান তারা। কিন্তু সপ্তম ওভারে স্পিনার সোধির লেগ স্টাম্পের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ২ বাউন্ডারিতে ১৫ রান করা  শান্ত।
শান্ত ফিরলেও, রানের চাকা সচল রেখেছিলেন বিজয়। হাফ-সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে অভিষিক্ত পেসার জশ ক্লার্কসনের বলে পুল শট খেলতে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে ৫টি চারে ৩৯ বলে ৪৩ রান করেন বিজয়।
বাংলাদেশের রান ১শতে যাবার আগে সাজঘরে ফিরেন লিটন দাস। ক্লার্কসনের স্লোয়ার বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দেন লিটন। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৯ বলে ২২ রান করেন তিনি। লিটনের বিদায়ের উইকেটে এসে বেশিক্ষণ ঠিকতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। শান্তর মত রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে রবীন্দ্রর বলে ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দেন ৪ রান করা মুশি।
১০৩ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় নিউজিল্যান্ড বোলারদের উপর চড়াও হন তাওহিদ হৃদয় ও আফিফ হোসেন। ১৮তম ওভারে ১৬ রান তুলেন তারা। পরের ৪ ওভারে নেন আরও ৩২ রান। এ অবস্থায় জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরিও করেন এই দুই তরুণ ব্যাটার।
২৩তম ওভারে হৃদয়-আফিফের জুটি ভেঙ্গে নিউজিল্যান্ডকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন সোধি। সুইপ করতে গিয়ে মিলনেকে ক্যাচ দেন  ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৭ বলে ৩৩ রান করা হৃদয়।
পরের ওভারে ডাফির শিকার হন আফিফ। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে ৩৮ বলে ৫৬ রান যোগ করেছিলেন হৃদয়-আফিফ।
১৬৫ রানের মধ্যে হৃদয়-আফিফের বিদায়ের পর লোয়ার অর্ডার ব্যাটাররা লড়াই করতে না পারলে ৩০ ওভারে ৯ উইকেটে ২০০ রান করে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। ২১ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন মিরাজ। নিউজিল্যান্ডের মিলনে-সোধি ও ক্লার্কসন ২টি করে উইকেট নেন।
আগামী ২০ ডিসেম্বর নেলসনে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
নিউজিল্যান্ড ইনিংস :
ইয়ং রান আউট ১০৫
রবীন্দ্র ক মুশফিক ব শরিফুল ০
নিকোলস ক আনামুল ব শরিফুল ০
লাথাম ব মিরাজ ৯২
চাপম্যান রান আউট ২০
ক্লার্কসন রান আউট ১
ব্লান্ডেল রান আউট ১
মিলনে অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-৩, ও-১৬) ১৯
মোট (৭ উইকেট, ৩০ ওভার) ২৩৯
উইকেট পতন : ১-৫ (রবীন্দ্র), ২-৫ (নিকোলস), ৩-১৭৬ (লাথাম), ৪-২৩০ (চাপম্যান), ৫-২৩৬ (ইয়ং) ৬-২৩৭ (ব্লান্ডেল), ৭-২৩৯ (ক্লার্কসন)।
বাংলাদেশ বোলিং :
শরিফুল : ৬-১-২৮-২,
হাসান : ৬-০-২৮-০ (ও-৪),
মুস্তাফিজুর : ৬-০-৪৭-০ (ও-২),
সৌম্য : ৬-০-৬৩-০ (ও-২),
মিরাজ : ৫-০-৫৩-১,
আফিফ : ১-০-১৭-০।
বাংলাদেশ ইনিংস :
সৌম্য ক লাথাম ব মিলনে ০
আনামুল ক এন্ড ব ক্লার্কসন ৪৩
শান্ত ব সোধি ১৫
লিটন ক ব্লান্ডেল ব ক্লার্কসন ২২
হৃদয় ক মিলনে ব সোধি ৩৩
মুশফিকুর ক ব্লান্ডেল ব রবীন্দ্র ৪
আফিফ ক ইয়ং ব ডাফি ৩৮
মিরাজ অপরাজিত ২৮
শরিফুল ক ইয়ং ব মিলনে ৫
হাসান ব ও’রউক ৪
অতিরিক্ত (লে বা-১, নো-১, ও-৬) ৮
মোট (৯ উইকেট, ৩০ ওভার) ২০০
উইকেট পতন : ১-১ (সৌম্য), ২-৪৭ (শান্ত), ৩-৮০ (আনামুল), ৪-৯২ (লিটন), ৫-১০৩ (মুশফিকুর), ৬-১৫৯ (হৃদয়), ৭-১৬৫ (আফিফ), ৮-১৭৪ (শরিফুল), ৯-২০০ (হাসান)।
নিউজিল্যান্ড বোলিং :
মিলনে : ৬-০-৪৬-২ (ও-২, নো-১),
ডাফি : ৬-০৩৯-১,
ও’রউক : ৫-০-৩৫-১ (ও-২),
সোধি : ৬-০-৩৫-২ (ও-১),
ক্লার্কসন : ৪-০-২৪-২ (ও-১),
রবীন্দ্র : ৩-০-২০-১।
ফল : নিউজিল্যান্ড বৃষ্টি আইনে ৪৪ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা:উইল ইয়ং(নিউজিল্যান্ড)
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com