বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ। এ হাসপাতালে যেমন রোগীর চাপ তেমন স্যালাইনের তীব্র সংকট। কয়েক দিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মাত্র একটি স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া এই সুযোগে বিভিন্ন হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানগুলোতে স্যালাইনের দাম বেশি নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন রোগীর স্বজনেরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে ৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে নিয়মিত স্যালাইনের। শের-ই-বাংলা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, ভর্তি ৩ ভাগের ১ ভাগকেও স্যালাইন সরবরাহ দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতি জনকে ভর্তির পর মাত্র একটি স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। তাদের অধিকাংশের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে হচ্ছে বাইর থেকে। এ বিষয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় নরমাল স্যালাইনের একটু ঘাটতি আছে। সরবরাহ অনুযায়ী আমরা যতটা পারছি রোগীদের দিয়ে যাচ্ছি। পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম আরো বলেন, বাইরের ফার্মেসি গুলোতে রোগীর স্বজনেরা কিনতে গেলেও সংকটের অজুহাত দেখানো হয়। দামও নেওয়া হয় বেশি। এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ করা উচিত। কেন তারা রোগীদের এভাবে জিম্মি করবে। ২৭ আগস্ট রবিবার দুপুরে শের-ই-বাংলা হাসপাতালের মেডিসিন ভবন ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি তলার সব ইউনিটে ডেঙ্গু জোন রয়েছে। কেউ খুবই অসুস্থ, কেউ একটু সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু রোগীদের বড় অভিযোগ চিকিৎসার জন্য ওষুধ সামগ্রী ও পরীক্ষা নিরীক্ষায় ব্যয় ভার নিয়ে। বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নরমাল স্যালাইন নেই বললেই চলে। ডেঙ্গু আক্রান্ত কুয়াকাটার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন ৪ দিন ধরে এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে না। ৪ দিনে মাত্র একটা স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। দোকানে গেলে বলে স্যালাইন নাই। অনেক খুঁজে পেলেও ৮৭ টাকার স্যালাইন বিক্রি করে ১৫০ টাকায়। বরিশাল সদর উপজেলার চরাদি ইউনিয়নের বাসিন্দা রুহুল আমিনের বলেন, হাসপাতালের সামনের ৮টি দোকান ঘুরে স্যালাইন কিনেছি ৭০ টাকা বেশি দিয়ে। আশে পাশের কোন দোকানে স্যালাইন নেই। বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা কাইউম হোসেন জানান, তাঁর রক্তের প্লাটিলেট ১০ হাজারে নেমে যাওয়ায় ২ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। এখানে রক্ত বাইরে থেকে ব্যবস্থা করতে হয়। হাসপাতালে স্যালাইনও পাওয়া যায় না। শের-ই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালের সামনের ফার্মেসি গুলোতে ঘুরে জানা গেছে, অধিকাংশ দোকানেই নরমাল স্যালাইন নেই বলে জানানো হচ্ছে। সেখানকার দোকানের কর্মচারীরা জানান, ১০ দিন ধরে নিয়মিত স্যালাইনের সংকট। ঢাকা থেকে বেশি দামে আনতে হয়। তারা ৮৭ টাকার স্যালাইন ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, আমার আওতাধীন হাসপাতাল গুলোতে যাতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় বাইরে থেকে ওষুধসামগ্রী কিনে অর্থ ব্যয় করতে না হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। তবে শের-ই-বাংলা হাসপাতালে স্যালাইনের যে সংকট আছে, সেটি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিষয়ে (ভারপ্রাপ্ত) পরিচালক বলেন, শের-ই-বাংলা হাসপাতালের সামনের ফার্মেসি গুলোতে সংকট দেখিয়ে বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করা হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে ড্রাগ সুপারভাইজারকে বলবো। রোগীদের জিম্মি করে এমন কাজ কাউকে করতে দেওয়া হবে না।
Leave a Reply