1. : admin :
পশ্চিম রেলে আউটসোর্সিং নিয়োগে অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ - দৈনিক আমার সময়

পশ্চিম রেলে আউটসোর্সিং নিয়োগে অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ

আল আমিন হোসেন, রাজশাহী
    প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে আউটসোর্সিং নিয়োগের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কুদরত-ই-খুদা ও ডেপুটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা উক্ত আউট সোর্সিং নিয়োগের অর্থ বানিজ্যের মূলহোতা।
অর্থ লেনদেন হয় উক্ত অফিসের বড় বাবু আসরাফ ও সদর দপ্তরের ডেপুটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ফজলে রবের হাত দিয়ে। চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার টেন্ডার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আউটসোর্সিং নিয়োগ দিলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি তাঁর পছন্দের লোকজনকেই অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেন।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আউটসোর্সিং এর নিয়োগ টেন্ডার পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। নতুন পুরাতন মিলে প্রায় ৪৭৩ জনকে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে উক্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আউট সোর্সিং নিয়োগের নিয়ম ভঙ্গ করে অনেক পুরাতন কর্মীদের বাদ দিয়ে নতুন লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী, লালমনিরহাট, পাকশী, সৈয়দপুরের অধিনে লোকো, ক্যারেজ, ডিএস(ডব্লিউ) পদে ৪৭৩ জন আউটসোর্সিং লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৬ টি প্যাকেজে ৬ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উক্ত নিয়োগের কাজ পায়। ৬ টি প্রতিষ্ঠান হলো মর্ডাণ এন্টারপ্রাইজ, জামান এন্টারপ্রাইজ, জাকি এন্টারপ্রাইজ, জান্নাত এন্টারপ্রাইজ, এইচ এন্ড এইচ এন্টারপ্রাইজ, শাহ আমানত এন্টারপ্রাইজ।
সেই নিয়োগে কাজ পেয়েও চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও ডেপুটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের মোটা অংকের উৎকোচ দিতে হয়েছে বলেও একটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন। পাকশী ডিবিশনের ডেপুটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারি মমতাজ উদ্দিন তাঁর ডিবিশনে অনেকজনকে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তিনি দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৪টি লটে কাজ দেন। পান্না’র প্রতিষ্ঠান জামান এন্টারপ্রাইজ কাজ পায় তিনটি। জাকি এন্টারপ্রাইজের খসরু পায় ১ টি। উক্ত ৪ লটে নিয়োগ পাওয়া প্রতিজনকে দিতে হয়েছে অর্থ। এমনকি ঠিকাদারকে পুরাতন আউটসোর্সিং এর তালিকায় নতুনদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ আছে।
একইভাবে লালমনিহাট ডিবিশনেও হয় অর্থ বানিজ্য। সৈয়দপুর ও রাজশাহীর আউট সোর্সিং এ নিয়োগ প্রাপ্ত অনেকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
রেলের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করে বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পেয়েও মাত্র ২ জন লোক নিয়োগ দিতে পেরেছেন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাকী সব লোক নিয়োগ দেন চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও তাঁর অফিসের লোকজন। প্রায় ৪৭৩ জন লোক নিয়োগে প্রায় ৩ কোটি টাকা বানিজ্য হয়েছে বলেও সুত্রটি নিশ্চিত করেছেন।
বাদ পড়া পুরাতন কয়েকজন আউট সোর্সিং কর্মী জানান, নতুন হোক পুরাতন হোক নিয়োগ পেতে সবাইকেই টাকা দিতে হয়েছে। নতুনদের দিতে হয়েছে এক থেকে দুই লাখ টাকা। পুরাতনরা দিয়েছে ৫০ হাজার করে। টাকা দিতে না পারায় অনেক পুরাতন অভিজ্ঞ কর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের পূর্বশর্ত ছিলো পুরাতনরা অভিজ্ঞতার অগ্রাধিকার বলে আগে নিয়োগ পাবেন। কিন্তু সেই শর্ত টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।
রেলের অপর আরেকটি বিশ্বাস্ত সুত্র জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলো প্রায় অসহায় তাদের এই কাজে। প্রতিষ্ঠান মালিকরা ভয়ে মুখ খুলতেও নারাজ। মুখ খুললেই অফিসার ব্লাক লিস্টে দিয়ে দিবে লাইসেন্স। এমনকি তাদের কাজ পাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন ভয়ে আছেন প্রতিষ্ঠান গুলো। একদিকে অফিসারদের অর্থ প্রদান অন্যদিকে ঠিকাদারকে কাজের কমিশনসহ এককালীন (সিকিউরিটি ছাড়া) অর্থ দিতে হয়েছে ভুক্তভোগী আউটসোর্সিং এ নিয়োগ প্রাপ্তদের।
জানতে চাইলে ডেপুটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পাকশী) মমতাজ উদ্দিন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব নিয়োগ টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার তাদের বিধিমতে দিয়েছেন। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। শুধু পুরাতনদের তালিকা আমরা দিয়েছি। তাও সেটা করেছে সিএমই পশ্চিম মহোদয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কুদরত ই খুদা বলেন, নিয়ম মাফিক নিয়োগ হয়েছে। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নাই। আপনি পারলে অফিসে আসেন বিস্তারিত আরও বলা যাবে। পরে অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
কথা বললে পশ্চিম অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। ঠিকাদার মোট অর্থের ৫% পাবেন। বাকী টাকা কর্মীরা পাবেন। ঠিকাদারের তালিকা অনুযায়ী লোক নিয়োগ হবে। পুরাতন আর নতুনের কোনো বিষয় নাই।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com