ঘটনার পরই চেয়ারম্যানসহ অভিযুক্ত সবার নামেই ধামরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও মামলা নিচ্ছিলেন না ধামরাই থানা পুলিশ। নানা নাটকীয়তা মেষে পাঁচদিন পরে মামলা নিলেন ধামরাই থানা পুলিশ। রাস্তা থেকে হাসেমকে রশি দিয়ে বেঁধে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে তুলে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে অবশেষ গতকাল রবিবার রাতে চেয়ারম্যান লুৎফরসহ ওই পাঁচ জনের নামে ধামরাই থানায় মামলা রুজু হয়।আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি পরিবার।
এলাকাবাসি ও ভুক্তভোগি পরিবার জানান, জমি-জমার বিষয় নিয়ে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের খাতরা গ্রামের মৃত গোলাম আলীর ছেলে হাসেম আলীকে গত ৫ মার্চ রাত ১০ টার দিকে রশি দিয়ে বেঁধে জোরপূর্বক রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ও তার দুই ছেলে রিপন, মুমিন, ইউপি সদস্য বোরহান উদ্দিন, স্থানীয় মাতাব্বর আব্দুল হক, জাহিদ এবং খাতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম। বড় চন্ডাইল এলাকায় চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে বা
বাড়ির প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে হাসেমের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে চেয়ারম্যান লুৎফর ও তার দুই ছেলে রিপন এবং মুমিন। একপর্যায়ে মারধর করে হাসেমের বাম হাত ও বাম পা ভেঙে ফেলে। এছাড়াও তার কোমড়, মুখ, ডান পায়ে পিটিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধর করে মারাত্মক জখম করে।
এদিকে হাসেমের স্ত্রী, ভাই এবং এলাকাবাসি চেয়ারম্যানের বাড়ির ফটকের বাহির থেকে অনেক আকতি মিনতি করার পরও হাশেমের ওপর নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় স্বজনরা ৯৯৯ এ ফোন দেয়। পরে ধামরাই থানার এস আই ওয়াসিম বিশ্বাস ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসেমকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। পরিবার তখন হাসেম কে মৃত ভেবেই দ্রুত ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেয়ার জন্য রেফার করা হয়। সেখানে কয়েক দিন চিকিৎসা শেষে হাসেম কে আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানান ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ তিতাস আহমেদ।
এঘটনায় হাসেমের ভাই মো: জাহের আলী বলেন, চোরের অপবাদ দিয়ে রাস্তা থেকে রশি দিয়ে বেঁধে চেয়ারম্যান ও তার ছেলেরা আমার ভাইকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে বাড়িতে আটকে রেখে হাত ও পা ভেঙে ফেলেছে। আমরা অনেক অনুরোধ করেছে না মারার জন্য তবুও চেয়ারম্যান শুনে নাই। পরে ৯৯৯ এ ফোন দিলে পুলিশ আসে। পুলিশের সাথে আমরা বাড়ির ভিতর প্রবেশ করি। গিয়ে আমার ভাইয়ের অবস্থা দেখে মনে হয় মারা গেছে। তখন চেয়ারম্যান পুলিশের সামনে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করায় সবাইকে। কিন্তু আমি স্বাক্ষর না করায় আমাকে মারধর করে।
তিনি আরও বলেন,আমরা ভাইয়ের ওপর যে অমানুষিক নির্যাতন হয়েছে তার বিচার চাই। অনেক নাটকের পর মামলা হইলেও আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছেন না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, লুৎফর রহমান চেয়ারম্যান হওয়ার আগেও এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করতো। তার একাধিক ইটভাটা রয়েছে। জোরপূর্বক অন্যের জমির মাটি কেটে নেয়। ভয়ে কেউ কিছুই বলতে সাহস পায় না। হাসেমের ওপর নির্যাতনে এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সবাই মনে করছিল হাসেম মারা গেছে।
এ বিষয়ে কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, হাশেম এলাকায় অনেক চুরি করেছে তাই এলাকাবাসি তাকে মেরেছে।
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শীরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, এঘটনায় চেয়ারম্যানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply