ঢাকার ধামরাইয়ের রঘুনাথপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন মমতাজ বেগম। তাঁর স্বামী ডা. আমিনুর রহমান ছিলেন সভাপতি। স্বামী কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। স্বামীর দেওয়া নিয়োগে তিনি ২০০৩ সাল থেকে ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত অধ্যাপনা করেছেন।
দায়িত্ব পালনকালে তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিকবার তদন্তে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নামে স্বামীর দান করা জমির দলিলটিও ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে।
এসব অভিযোগ তদন্ত করেছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকা, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী কর্তৃক তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন প্রতিষ্ঠানের নামে ২০০৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ১২২৪ নম্বর দলিলমূলে আমিনুর রহমান ১০০ শতাংশ জমি দান করেন এবং তাঁর স্ত্রী মমতাজকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু জমির দলিলটি ভুয়া। তিনি চলতি বছরের ৩১ মার্চে অবসরে যান। তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ ব্যাপারে সর্বশেষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি ইউএনও হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী। কমিটিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে আহ্বায়ক করা হয়।
গত ২ নভেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যক্ষ মমতাজ প্রতিষ্ঠানের তহবিল এবং ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংক ধামরাই শাখায় প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বরের অনুকূলে এফডিআর ১৫ লাখ টাকার মুনাফাসহ ২২ লাখ ৬৭ হাজার ২০৯ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ও ফরম ফিলাপের এক কোটি ৫৭ লাখ ছয় হাজার টাকাসহ মোট প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করেছে তদন্ত কমিটি।
অপরদিকে চলতি বছরের ৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোনালিসা হক তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক অধ্যক্ষ মমতাজ বেগমের অর্থ আত্মসাৎসহ বিল রেজিস্টার, চেক রেজিস্টার, চেক বই, ব্যয়ের ভাউচারসহ সব তথ্য উদ্ধারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন।
এর আগে ২০১৭ সালের ৪ জুলাই স্বাক্ষরিত কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি) অশোক কুমার বিশ্বাসের প্রতিবেদনেও দেখা যায়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ভুয়া খরচ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ।
কলেজের সভাপতি ইউএনও হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, প্রতিটি তদন্ত প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ মমতাজের অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ মিলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাবেক অধ্যক্ষ মমতাজ বেগমের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকার কল করা হলেও তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
Leave a Reply