আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদ। আর এই ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। কুষ্টিয়ায় বিভিন্ন জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরী করছে তারা। যেটা খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা কর্তাবাবুরা। তাই অভিযান না থাকায় বহাল তবিয়তে সেমাই তৈরি করে যাচ্ছে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরেজমিন কুষ্টিয়া বড় বাজার এসসিবি রোড এলাকায় গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন মিল প্রতিষ্ঠানে অস্বাস্থ্যকর নোংড়া পরিবেশে সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। সেই সেমাই আবার ওই প্রতিষ্ঠানের ছাদের উপর খোলা আকাশের নীচে বাঁশের আড়ার উপর শুকাতে দেয়া হয়েছে। যেখানে শহরের দূষিত বায়ু, পশু পাখির মল, ধুলাবালি এবং বিষাক্ত পোকা মাকড়ের বিষ্ঠা সেমাইয়ের সাথে মিশে যাচ্ছে। এই সেমাইগুলো শুকিয়ে বস্তাবন্দি করে বাজারজাতকরণের জন্য মজুত রাখা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, এখানকার কারখানাগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি করা হয়। এগুলো প্রশাসন দেখে না। বিধায় এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা নির্বিঘেœ খোলামেলা পরিবেশে সেমাই তৈরি করছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। এখানে রয়েছে ময়দা ও আটা তৈরির জন্য অনেকগুলো মিল। যার মধ্যে জাফর ফ্লাওয়ার মিল, মুনমুন ফ্লাওয়ার মিল, আশরাফ ফ্লাওয়ার মিল অন্যতম। এরমধ্যে চোখে পড়ে পুরাতন একটি বিল্ডিংয়ে নাবিল ফ্লাওয়ার মিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে তৈরি করা হচ্ছে সেমাই। যেখানে মূলত তৈরি করার কথা ময়দা ও আটা। বিভিন্ন দপ্তরের লাইসেন্সও রয়েছে ময়দা ও আটা তৈরির জন্য। পাশাপাশিসেমাই তৈরিরও রয়েছে কাগজপত্র। মিলে ঢুকে দেখা যায়, ৬জন শ্রমিক সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত। সেমাই তৈরির মেশিনের আশেপাশে পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও কোন রকম চলে যাচ্ছে কারখানা। সেমাই মেশিনের নীচে রাখা আছে পলিথিনের বড় কাগজ, পাশে বাঁশের তৈরি চিকন লাঠি। আর এ লাঠিতে করে বিল্ডিংটির ছাদে খোলা আকাশের নীচে শুকানো হয় ভোজন পিপাসু মানুষের ঈদ আয়োজনের খাবার সেমাই। কথা হয় এই নাবিল ফ্লাওয়ার মিল মালিক আমিরুল ইসলাম নান্নুর সাথে। তিনি কোন কিছুর গুরুত্ব না দিয়েই অকপটে সবকিছু স্বীকার করে দেখালেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের বৈধ কাগজপত্র। যার মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া পৌরসভা কর্তৃক বিশুদ্ধ খাদ্য উৎপাদনের লাইসেন্স, কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের লাইসেন্স, বিএসটিআই-এর সিএম লাইসেন্স। আমিরুল ইসলাম নান্নু বলেন,৮বছর সেমাই তৈরি করছি। মূলত ময়দা তৈরির মিল হলেও তা বন্ধ রেখে সেমাই তৈরি করি। তবে এটা সারা বছর না। রোজার ঈদ এলে তার ১০দিন আগে সেমাই তৈরি শুরু করি। রোজা শেষ হলে তা বন্ধ করে দিই। আবহাওয়া ভাল থাকলে প্রোডাকশন করা হয়। মেশিনের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ বস্তা সেমাই উৎপাদন করা করা হয়ে থাকে। তাতে ৩৭ কেজি আটা লাগে। একটি বস্তায় ১০ কেজি সেমাই ধরানো হয়। এক বস্তা সেমাই পাইকারি ৪৮০টাকা দরে বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, আগে সেমাই বিক্রি করে লাভ হতো। বলতে গেলে এখন আর লাভ বেশি হয় না। ৫% কাস্টমস সহ এ দপ্তর ও দপ্তরের কাগজপাতি করতে হয়। আবার ব্যবসা নির্বিঘেœ চালাতে কর্তাবাবুদের অপ্রাসঙ্গিক ম্যানেজও করতে হয়। তাই তারা এদিকে নজর দেন না। নোংড়া পরিবেশে সেমাই তৈরি ও খোলা আকাশের নীচে তা শুকানো নিয়ম কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা কোন বিষয় না। এভাবেই সেমাই তৈরি করি। কেউ কিছু বলবে না। কারন আমার সব লাইসেন্স করা আছে । অপরদিকে এভাবে সেমাই তৈরিতে স্বাস্থী ঝুঁকি আছে কিনা এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন মোঃ আকুল উদ্দিন বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এখাদ্যগুলো তৈরি করলে অবশ্যই স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। এ সেমাই খেলে ডায়রিয়া, পেটে পিড়া, বমিসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। এছাড়া যে বিভিন্ন কেমিক্যাল খাদ্যে ব্যবহার করা যায় না, সে কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকলেও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তবে এসব নিয়ন্ত্রনে যে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের উচিত তাদের দেখভাল করা। অন্যদিকে কুষ্টিয়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সুচন্দন মন্ডল জানেন না কুষ্টিয়ার কোথায় কি তৈরি হয় বা বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই কয়েকটি সেমাই কারখানা দেখেছি এবং জরিমানাও করেছি। তবে বড় বাজারের দিকে আমাদের যাওয়া হয়নি ওদিকেও আমরা যাব। আমরাতো সব একবারে পারবো না। আস্তে আস্তে দেখা হবে। কোন অসঙ্গতি পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অপরদিকে একই সুরে তাল মিলিয়ে কুষ্টিয়ায় অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত নিরাপদ খাদ্য কর্তপক্ষের নিরাপদ খাদ্য অফিসার সজিব পাল বলেন, আমরা কোন অভিযান করিনা। আমরা কারখানাগুলো মনিটরিং করে থাকি। খাদ্যকে নিরাপদ রাখার জন্য অবহিত করে থাকি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খাদ্যে কোথায় কি সমস্যা হচ্ছে এবং মানুষ যাতে নিরাপদ খাদ্যপেতে পারে সে বিষয়ে অবহিত করি এবং পরবর্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকি। আমরা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ থেকে তাদেরকে এবং জনসাধারনের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা জন্য আমাদের নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ অনুযায়ি তাদেরকে বিভিন্ন মনিটরিং কার্যক্রম করে থাকি। সে অনুযায়ি যদি কোন অসঙ্গতি দেখা য়ায় , তাহলে সেই মনিটরিং সাপেক্ষে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যেহেতু কারখানাগুলোতে যায়নি, সেহেতু বলতে পারবো না। দেখতে হবে তারা সেমাইতে কি কি উপকরন ব্যবহার করছে। একই সাথে তারা কিকি উপকরন দিচ্ছে, সেখানে তাদের প্রসেসটা কেমন । তারা নিয়ম মেনে তৈরি করছে কিনা। এ বিষয়গুলো দেখার পরে বোঝা যাবে এ খাদ্যগুলো নিরাপদ কিনা বা অনিরাপদ অবস্থায় তৈরি করা হচ্ছে কিনা।
Leave a Reply