1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. : admin :
কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিকভাবে আগামী পহেলা ডিসেম্বর থেকে চলবে দুইটি ট্রেন  - দৈনিক আমার সময়

কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিকভাবে আগামী পহেলা ডিসেম্বর থেকে চলবে দুইটি ট্রেন 

দিদারুল আলম সিকদার, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি
    প্রকাশিত : শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩
দেশের সর্ব দক্ষিণের বালুকাময় সমুদ্র নগরী পর্যটন জেলা কক্সবাজারে
আগামী পহেলা ডিসেম্বর থেকে চলাচল শুরু হচ্ছে ট্রেন এবং কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন আসা ট্রেনটি রাত ১০টা ৩০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে পরদিন ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে পৌঁছাবে। ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিটের এই যাত্রা পথে শুধু ঢাকা বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে থামবে।
কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে আগামী পহেলা ডিসেম্বর থেকে। শুরুতে ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে এক জোড়া করে মোট দুই জোড়া ট্রেন পরিচালনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেল সংযোগ উদ্বোধনের সময় ডিসেম্বর থেকে দুটি ট্রেন চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রেলওয়ের তথ্যমতে, ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে বিরতিহীন ট্রেন চালু করা হবে। ট্রেনটি রাত ১০টা ৩০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে পরদিন ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে পৌঁছাবে। ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিটের এই যাত্রা পথে শুধু ঢাকা বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে থামবে। ট্রেনটি একইওভাবে দুপুর ১টায় কক্সবাজার ছেড়ে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সম্প্রতি আনা উন্নত মানের নতুন ১৮টি কোচ সম্বলিত আন্তঃনগর ট্রেনটি চালানো হবে এই রুটে। এতে আসন থাকবে ৭৭৯ থেকে ৮২৪টি।
এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে চট্টলা এক্সপ্রেসের ১২টি কোচ সম্বলিত রেক দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করা হবে। এতে আসন থাকবে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০টি। ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ১০টা ২০ মিনিটে কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে। একইভাবে সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার ছেড়ে রাত ১০টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে। যাতায়াতের পথে যাত্রী ওঠানামার জন্য ট্রেনটি ষোলশহর, জান আলী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, রামু সহ মোট ৯টি স্টেশনে থামবে। চূড়ান্ত হওয়া দুটি ট্রেন ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে আরো একটি ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলওয়ে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই রুটে ট্রেন পরিচালনায় জন্য জনবল সংকট রয়েছে। নতুন এই রুটের নতুন ৯টি স্টেশন এবং ট্রেন পরিচালনায় মোট ১০০০ এর বেশি জনবল প্রয়োজন। তবে ডিসেম্বরে ট্রেন চালু করতে জরুরি ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক ২৪ জন লোকোমাস্টার নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অবসরে যাওয়া লোকোমাস্টারদের থেকে নিয়োগ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ জন স্টেশন মাস্টার, ২০ জন পয়েন্টসম্যান এবং দুই শতাধিক গেটম্যান অন্য জায়গা এবং প্রকল্প থেকে এনে এই রুটে পদায়নের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পূর্ব) মো. শহিদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “ঢাকা এবং চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন পরিচালনা জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের পদায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করছি, ট্রেন চালুর কয়েক দিন আগেই পদায়ন করা হবে। ট্রেন ক্রসিংয়ের জন্য কক্সবাজার স্টেশনের তিনটি রেললাইন, রামু স্টেশন এবং চকরিয়া স্টেশনের দুটি করে রেললাইন প্রস্তুত রয়েছে। শুরুতে এই তিনটি স্টেশন অপারেশনে যাবে।”
প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেল সংযোগটি গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। প্রকল্পটির অধীনে দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু এবং কক্সবাজার নতুন ৯টি স্টেশন নির্মাণ কাজ চলছে। এরমধ্যে শতভাগ পর্যটন সুবিধা প্রবর্তন হচ্ছে কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনটিতে। প্রকল্পটির মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এডিবি ও সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পটির এডিবির ঋণের পরিমাণ ১.৫ বিলিয়ন ডলার (১৩১১৫.৪০ কোটি টাকা); বাকি ৪৯১৯.০৭ কোটি টাকা সরকার দিয়েছে।
২০১০ সালের ৬ জুলাই প্রকল্পটির ডিপিপি অনুমোদন দেয় একনেক। তবে অর্থায়ন সংক্রান্ত জটিলতায় ঝুলে ছিল ছয় বছর। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল প্রকল্পটির সংশোধন করে আবারো অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর তা ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তবে রেল সংযোগ বাস্তবায়নে প্রধান বাধা ছিল ৯২ বছর বয়সী জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু। গত তিন মাস ধরে সেটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে সংস্কার চলছে। বর্তমানে সেতুটি ট্রেন চলাচলে উপযোগী। তবে এই সেতুর ওপর ১০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলবে এবং নতুন রেললাইনে চলবে ৬০ কিলোমিটার বেগে।
ট্রেনের ভাড়া
এদিকে নতুন এই রুটের ট্রেনের ভাড়া রেলওয়ের মার্কেটিং শাখা থেকে গত ৬ নভেম্বর চূড়ান্ত করা হয়েছে। তা রেলওয়ের মহাপরিচালক অনুমোদন দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তবে বাণিজ্যিক দূরত্ব হচ্ছে ১৮৯ কিলোমিটার। মূলত ৬টি সেতুর জন্য এই বাড়তি ৩৮ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দূরত্ব ধরা হয়েছে। একে রেলওয়ে পন্টেজ চার্জ বলা হয়। বর্তমানে রেলে কিলোমিটারপ্রতি এসি শ্রেণির ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। নন-এসি শ্রেণির ভাড়া ১ টাকা ১৭ পয়সা। দেশে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তঃনগর-এই চার ধরনের ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ভাড়ার হার কিছুটা কমবেশি আছে। এছাড়া আন্তঃনগর ট্রেনেও বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। এগুলো হলো শোভন চেয়ার, এসি চেয়ার, এসি সিট ও এসি বার্থ (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন)। লোকাল ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা এবং আন্তঃনগরে ৩৫ টাকা। তবে সেতু ও উড়ালপথ থাকলে সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ে।
এখন পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনা করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে নিয়ামনুয়ায়ী,লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেনেরও ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে শোভন চেয়ার (নন-এসি) ৫৫০ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি) ১০৫১ টাকা, এসি সিট ১২৬০ টাকা এবং এসি বার্থ ১৮৯২ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আর চট্টগ্রাম কক্সবাজার রুটে শোভন (নন-এসি) ১৭০ টাকা, শোভন চেয়ার (নন-এসি) ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি) ৩৮৬ টাকা, এসি সিট ৪৬৬ টাকা এবং এসি বার্থ ৬৯৬ টাকা।
চাঁদপুরের মেঘনা, ঢাকার তূর্ণা এক্সপ্রেসও কক্সবাজারে নেয়ার পরিকল্পনা
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট হবে কক্সবাজার। দেশের প্রধান এই পর্যটন কেন্দ্রে বছরে ৬০-৭০ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। ভোগান্তির পাশাপাশি সড়কপথটি মাত্র দুই লেনের। ফলে পদে পদে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। আর নিয়মিত দুর্ঘটনাও ঘটে। এছাড়া সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রবন্দর, পাওয়ার হাব, লজিস্টিক হাব, অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন জোন সহ বাণিজ্যিক হাব রূপ দেয়ার কাজ চলছে। ফলে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে ট্রেনের চাহিদা বাড়বে। অন্যদিকে বাসের চেয়ে অর্ধেক ভাড়ায় ট্রেনে ভ্রমণ করা যাবে। এসব কারণে এই রুটটি যাত্রী টানবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই রুটে মোট সাত জোড়া ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ৪ জোড়া এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের দুই জোড়া।  চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের মেঘনা এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের তূর্ণা এক্সপ্রেসও ভবিষ্যতে কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
রেলওয়ের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পূর্ব) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “চট্টগ্রাম থেকে সকালের ট্রেনে কক্সবাজার পৌঁছে সারা দিন ঘুরতে পারবেন পর্যটকরা। আইকনিক স্টেশনে লকারসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। এরপর সন্ধ্যার ট্রেনে ‍উঠে রাতের মধ্যে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে পারবেন। সেখানে পৌঁছে ঢাকার ট্রেনও ধরতে পারবেন যাত্রীরা। যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ট্রেনের সময়সূচি সাজানো হচ্ছে।
এই নতুন রেল সংযোগের কারণে ভবিষ্যতে কক্সবাজারের পর্যটক বাড়ার পাশাপাশি পযটন বিকাশে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সে সঙ্গে এগিয়ে রাখবে অর্থনিতি চাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ মাত্রা যোগ হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com