1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. : admin :
কক্সবাজারে উদ্বাস্তুদের প্রাণের ঠিকানা খুরুশকুলে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়াণ প্রকল্প - দৈনিক আমার সময়

কক্সবাজারে উদ্বাস্তুদের প্রাণের ঠিকানা খুরুশকুলে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়াণ প্রকল্প

দিদারুল আলম সিকদার, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি
    প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩
৫ তালা বিশিষ্ট ১৩৯ বিশিষ্ট বহুতলা ভবন নির্মাণ  উপকারভোগী ৪৪০৯টি পরিবার এর মধ্য ৬ শত পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। তার মধ্যে শুটকি পল্লিও থাকছে। 
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের  জন্য সরকারের তরফ হতে আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।  কক্সবাজারের খুরুশকুলে   তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্বে এ রকম বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি করে দেয়ার  তথ্য নেই বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সরজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের বসবাস ও স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা ও এলাকায়  বসবাস করা উপকারভোগীরাসহ অনেকেই  সোজা কথার প্রতিবেদকে  জানান, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের  মতো  বিভিন্ন  ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে  আঘাত আনে বারবার বাংলাদেশ।  বাংলাদেশকে  দুর্যোগ  ও ঝুঁকিপূর্ণ  এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে  ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে আঘাতে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে  নিঃস্ব হয়ে পড়ে ।
নিঃস্ব হওয়ে  হাজার হাজার মানুষ অসহায় হয়ে মানবতার জীবন যাপন করছেন  । অবশেষে সরকার জনস্বার্থে  তাদের কথা চিন্তা করে কক্সবাজারের খুরুশকুলে সাগর  সাগর বেষ্টিত বিশাল  এলাকাতে   আশ্রয়ণ প্রকল্প নামের  বিশেষ আশ্রয়ান  প্রকল্প গ্রহন করে।
, বৈশ্বিক জলবায়ুু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙন ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের নিত্যনৈমিত্তিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাহা  মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে  আসছে।
জানা যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামান স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে দেশের প্রতিটি নাগরিকের বাসস্থান পাওয়ার অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা তারা  জানান, ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল-অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করেন।
তারই অংশ হিসেবে কক্সবাজার জেলার জলবায়ু উদ্বাস্তু ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে “খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প” গ্রহণ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আক্রান্ত উপকূলীয় অঞ্চল কক্সবাজারের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় ৫তলা বিশিষ্ট ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে ৪৪০৯টি জলবায়ুু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন করা হবে।৷ অধিকাংশ কাজ  সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকী  কাজের  দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সম্পন্ন হলে পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ুু উদ্বান্তু পুনর্বাসন প্রকল্প হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিতব্য মোট পরিবার ৪৪০৯টি। প্রকল্পের মোট জমি ২৫৩ দশমিক ৫৯ একর। এতে ব্যয় হবে ১,৪৬৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালের জুনে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে সিংহ ভাগ  সম্পন্ন হয়েছে।
কি কাজ সম্পন্ন করতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।  শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে।  তারা জানান, ৫তলা বিশিষ্ট মোট ভবন রয়েছে ১৩৯টি। প্রকল্প এলাকায় মোট জোন ৪টি, প্রতিটি ভবনে ফ্ল্যাটের সংখ্যা ৩২টি, প্রতিটি ফ্ল্যাটের আংতন (নীট ব্যবহারযোগ্য ৪০৬.৭ বর্গফুট), প্রতিটি তলায় কমন সার্ভিস সুবিধা রয়েছে। প্রকল্পে যাতায়াতের সুবিধার্থে বাঁকখালী নদীর উপর কক্সবাজার শহর থেকে খুরুশকুলের ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ।
প্রকল্পের প্রবেশ পথ ২টি, অভ্যন্তরীণ পাকা রাস্তা ২০ কিলোমিটার। উপকারভোগীদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য ১টি প্রাথমিক ও ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খেলার মাঠ ১৪টি, পুকুর ৩টি, মসজিদ ১টি ও মন্দির রয়েছে ১টি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল আফজাল হোসেন জানান, প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ২০টি ভবন নির্মিত হয়েছে। ৬০০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
পুনর্বাসিত পরিবারের জীবিকার সুবিধার্থে আধুনিক শুঁটকি মহাল, জীবন-মান উন্নয়নের জন্য ৯৫.০০ একর জায়গার উপর শেখ হাসিনা টাওয়ার স্থাপন ও তাদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
 তিনি জানান, প্রদত্ত ফ্ল্যাট হস্তান্তর ও রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধার্থে আলাদা নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও উপকারভোগীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ফাঁড়ি, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও বাফার জোন স্থাপন করা হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে আসার আগে কক্সবাজার সদরের ঈদগাহ এলাকায় তিন সন্তান নিয়ে বাস করতেন সেলিম মাঝি।
তিনি বলেন, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরকার আমাকে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে।
এখানে এক বেডরুম, একটি ড্রয়িং, ডাইনিং একটি রান্নাঘর ও একটি ওয়াশ রুম রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে সমুদ্রে মাঝি হিসেবে কাজ করছি। এয়ারপোর্টের পশ্চিম পাশে আমার নিজের টাকা দিয়ে ৫ গণ্ডা জমি কিনে বাড়ি করেছি। সেখানে গাছপালা লাগিয়েছিলাম।
এখন ৮/১০ দিনের জন্য সমুদ্রে চলে যাই। প্রতিটি টিপেই ৫ হাজার টাকা আয় হয়। আগে বিভিন্ন ঘুর্ণিঝড়ের সময় পরিবার পরিজনদের নিয়ে টেনশনে ছিলাম। নিজে সমুদ্রে থাকলেও পরিবার নিয়ে টেনশন করতে হয় না। এটা সরকারের জন্য সম্ভব হয়েছে। বাঁকখালী ভবনের বাসিন্দা আজিম বলেন, আইবিবি মাঠে লোড আনলোডের কাজ করতাম। বর্তমানে চায়ের দোকান দিয়ে সংসার ভালো চলছে। তিনি বলেন, আমাদের বিল্ডিংয়ের ৯ সদস্যের কমিটি আছে। তাদের সিদ্ধান্তে দোকান নেয়া হয়েছে। মাসে এক হাজার টাকা ভাড়া দেয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে বিল্ডিংয়ের আনুষাঙ্গিক কাজ করা হয়।
 অস্থায়ী দোকান দিয়ে তার সংসার চলে। পাঁচ সদস্যের সংসার তার। তিনি আরও বলেন, কুতুবদিয়া এয়ারপোর্টের ভিতরে আমার বাসা ছিল সেখানে তিন শতক জমি ছিল। সেখান থেকে আমাদের এখানে সরকার থাকার জায়গা দিয়েছে। বর্তমানে অনেক ভালো আছি।
সরকারের নেয়া কক্সবাজারের এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল  বলেন,বর্তমান সরকার কক্সবাজারবাসীর অনেক প্রত্যাশা পূরণ করেছে। তিনি বলেন, ঢাকার পরই সরকার সবচেয়ে বেশি মেগা প্রজেক্ট নিয়েছে আমাদের কক্সবাজারে। কক্সবাজার এখনো  আপন গৌরবে দাঁড়িয়ে আছে বলে সচেতন মহলেরা জানিয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com