বেইলি রোডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত সাংবাদিক অভিশ্র“তি শাস্ত্রীর আসল নাম বৃষ্টি খাতুন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বনগ্রামে। তার পিতার নাম শাবলুল আলম সবুজ। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের পরিবার, স্বজন ও বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ। তার বাবা শাবলুল আলম সবুজ ইসলাম ধর্মের অনুসারী এবং তার মা স্ত্রী বিউটি বেগমও ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তবে অভিশ্র“তির বায়োডাটায় দেখা গেছে তিনি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। বৃষ্টির মা বিউটি বেগম ও তার খালা সাবানা খাতুন বলেন, বৃষ্টি কবে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে জানিনা। সে মুসলিম পরিবারের মেয়ে। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। তার লাশ আমরা গ্রামের বাড়িতে দাফন করবো। বৃষ্টি যতই ভুল করুক না কেন, আমাদের সন্তান আমরা দাফন করবো। তামিম নামে বৃষ্টির কাজিন জানায়, বৃষ্টি ধর্মান্তরিত হয়েছিলো।
তারপর স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির সত্যতা মেলে। ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ বলেন, অভিশ্র“তি শাস্ত্রীর আসল নাম বৃষ্টি। সে মুসলিম। বৃষ্টি ইডেন কলেজে পড়াশোনা করতো। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রে তার নাম বৃষ্টি। এদিকে শুক্রবার বিকেলে অভিশ্র“তির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের সাথে কথা বলবেন, তাই হন্নে হয়ে নিজের ফোন খুজছেন মা বিউটি বেগম। কখনো ফোনের জন্য চিৎকার করে সারা বাড়ি মাতম করে ফিরছেন। ফোন পেলেই মেয়ে বৃষ্টি খাতুনের কাছে ঢাকায় যাবেন। ছোট মেয়ে বর্ষা মাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
প্রতিবেশীরা যেনো শোকে পাথর হয়ে গেছেন। নিহতের মাকে শান্তনা দেবার ভাষা হারিয়েছেন প্রতিবেশীরা। গ্রামের বাড়ি থাকেন মা বিউটি বেগম ও ছোট বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা। নিহত সাংবাদিকের বাবা শাবলুল আলম সবুজ রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারী কোম্পানিতে চাকুরি করেন। দরিদ্র পিতার তিনটিই কন্যা সন্তান। বৃষ্টি খাতুন সবার বড়। মেজো মেয়ে শারমিনা সুলতানা ঝর্ণা রাজবাড়ী সরকারী কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে বর্ষা পড়ে দশম শ্রেণিতে। বৃষ্টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছেন গ্রামের বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে। বিসিএস ক্যাডার হওয়া স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার ইডেন কলেজে দর্শন শাস্ত নিয়ে পড়ছেন। উচ্চ শিক্ষা শেষ করার আগে বিসিএস কচিং নিয়ে ব্যস্ত ছিল। নিহতের ছোট বোন শারমিনা সুলতানা ঝরনা বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে মায়ের সাথে বৃষ্টির শেষ বার মুঠো ফোনে কথা হয়।
বৃষ্টি সাংবাদিকতা করলেও বাড়ি থেকে মা টাকা পাঠাতেন। বড় বোনের মৃত্যুতে তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, দুই মাস আগে অভিশ্র“তি সর্বশেষ গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন। তবে তার বোন হিন্দু ধর্মে গ্রহণ করেছিলেন এমন প্রশ্নে ঝরনা বলেন, এটা হতেই পারে না। আমার বোন মনে প্রাণে একজন মুসলিম। সে কখনই নিজ ধর্ম ত্যাগ করেনি। তবে সম্প্রতি তার বোন অভিশ্র“তি শাস্ত্রী নামে ফেসবুক আইডি খুলেছিলেন এবং ওই নামেই সাংবাদিকতা করতেন বলে স্বীকার করেন ঝরনা।
বেতবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, ওই বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি করেন বৃষ্টি। স্বাধীন চেতা ছিল। ছোট বেলা থেকে সে সরকারী বড় চাকুরির স্বপ্ন দেখত। বৃষ্টির ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টি তিনিও অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মাস দুয়েক আগে ওর সাথে রাজধানীর ফার্মগেটে দেখা ও কথা হয়। তার দাবি ধর্মান্তরের যে কথাটি বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
Leave a Reply