1. : admin :
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ - দৈনিক আমার সময়

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

শাহীনুর ইসলাম ধ্রুব নয়ন
    প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৩

অনিয়মিত পাঠদান, সরকারী বিদ্যালয়েই কোচিং বাণিজ্যে, স্বেচ্ছাচারিতা, কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের নির্যাতন সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সরকারী বিদ্যালয় থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছেন অভিভাবকরা। শুধু তাই নয়, প্রাতিষ্ঠানিক হিসেব-নিকেশে অস্বচ্ছতা, অসদুপায়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, এনসিটিবি বহির্ভূতভাবে পরীক্ষা নেওয়া, সহকারী শিক্ষকদের সাথে চরম দুর্ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে নিষ্পাপ কোমলমতি, ক্ষুদে শিশু ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকের এমন অত্যাচারে স্বয়ং বিদ্যালয়টির অন্যান্য শিক্ষকরাও চরম মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় ইতিমধ্যে মোহাম্মদপুর থানা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগপত্রও দাখিল করেছেন প্রধান শিক্ষক কর্তৃক  নির্যাতনের শিকার হওয়া এক অভিভাবক।  এছাড়াও সেই প্রধান শিক্ষকের এসব অনিয়ম নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানী মোহাম্মদপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নবযুগ আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার তার একক আধিপত্য ধরে রাখতে   শিক্ষার্থীদের শরীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। এসব বিষয়ে কোন  অভিভাবক জানতে চাইলে তাদের সাথেও অসদাচরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষকের এমন গর্হিত অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীশুণ্য হওয়ার আশঙ্খা করেছেন ভূক্তভোগী অভিভাবকবৃন্দ।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়- মোহাম্মদপুর শেরশাহ্ শাহী রোডে অবস্থিত নবযুগ আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে সেপ্টোম্বরে যোগদান করেন পারভীন আক্তার  নামে একজন প্রধান শিক্ষিক। যোগদানের পর থেকেই তিনি বেপরোয়া আচরণ শুরু করেন এবং কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে  একের পর এক অনিয়মের জন্ম দিয়ে বিদ্যালয়ে একক আধিপত্য এবং চরম স্বেচ্ছাচারীতায় যাচ্ছেতাই করে চলেছেন। প্রধান শিক্ষকের এমন কর্মকান্ডের কারণে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো, শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিদ্যালয় ঝাড়ু দেওয়া বাথরুম পরিস্কার করা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে- আয়া বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ভর্তির সময় ৩ শত থেকে ৫ শত টাকা আদায় ছাড়াও প্রতিমাসে টাকা দিতে বাধ্য করা হয় অভিভাবকদের। ভর্তি ফি ধার্য্য না থাকলেও ভর্তির সময় প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে ভর্তি ফি বাধ্যতামুলক করা হয়েছে।

জানা যায়, গত বছরও এ বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী ছিলো হেনা। বাথরুম পরিস্কার করানো, পড়া না পারার উছিলায় মারধরের কারণে তাকে বিদ্যালয় থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়। একই ভাবে গত বছরের ৩য় শ্রেনীর ছাত্রী মাহি আক্তার, ২য় শ্রেনীর ছাত্র ইকবাল সহ অনেকেই স্কুল ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এসব ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক বদমেজাজী ও লোভী মাহবুবা আক্তারের অমানুষিক নির্যাতন, আইন বহির্ভূত অর্থ দাবি ও আদায়, কোচিং করাতে হবে এমন বাধ্যতামূলক অনিয়মের কারণে তারা তাদের সন্তানদের অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এসময় তারা অভিযোগ করে বলেন- সরকারী স্কুলে এমন অনিয়ম, টর্চার চলে অথচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোন ব্যবস্থায় নেয়না।

অপরদিকে  মায়াবী আক্তার মায়া,জান্নাতুল বিথি ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী। তাদেরকে দিয়ে অফিস রুম পরিস্কার, ফ্লাের মোছানো কাজ করানো হয়। করতে না চাইলে স্কেল দিয়ে মারধর করে এবং প্রধান শিক্ষক নিজেই স্বপ্রনোদিত হয়ে অভিভাবককে  ফোনে বলে– আপনার সন্তান পড়াশুনা করছে না / পারছে না। ফলে সন্তানরা বাসায় এসে তাদের প্রতি অন্যায় ও কাজ করা মারধর করার বিষয়টি পিতা মাতাকে জানালে তারা বিশ্বাস করে না। কিন্তুু ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী হেনার বাবা বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রধান শিক্ষিকার কাছে জানতে চাইলে  প্রধান শিক্ষিকা অভিবাভকদের সাথেও খারাপ আচরণ করে  স্কুল থেকে বের করে দেয়। স্কুল কমিটি বিষয়টি অবগত হলেও প্রধান শিক্ষিকার তৈলে  কোন প্রতিবাদ আর হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি  প্রধান শিক্ষিকা কতৃর্ক ৩য় শ্রেনীর ছাত্র  বায়োজিদ সোহাদকে স্কেল দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেওয়ার ঘটনায় ফের আলোচনায় এসেছে প্রধান শিক্ষিকা পারভীন আক্তার। সহকারী শিক্ষকরা তাহার এহেন কর্মকান্ড প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষকের রোষানলে পড়তে হয় বলেও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে আমাদের অনুসন্ধানে। একারণে প্রকাশ্যে তার প্রতিবাদ না করে নিরবে সহে যাচ্ছেন সবাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সহকারী শিক্ষকরা জানান- প্রধান শিক্ষিকার কর্মকান্ড, খামখেয়ালীপনায় তাদেরকে রোষানলে পড়তে হয়েছে, মানষিক যন্ত্রনা পোহাতে হচ্ছে। ম্যানেজিং কমিটিকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চরম হতাশ বলে তথ্যচিত্র উঠে আসে। বর্তমানে স্কুলটিতে থাকা প্রতিটি শিক্ষার্থীই প্রধান শিক্ষকের বদমেজাজে হয়রানী সহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার বলে জানা গেছে। এসব নির্যাতন দ্রুত বন্ধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানান অভিভাবকবৃন্দ।

বিদ্যালয়ের অফিস রুমেই প্রাইভেট পড়ানো, প্রাইভেট না পড়লে বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের মারধর, শিক্ষার্থীদের দিয়ে  কাজ করানো, অভিভাবকদের সাথে রূঢ় আচরণ সহ শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগের  বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার ছাত্রছাত্রীদের শাসন করার বিষয়টি  স্বীকার করে দৈনিক আমার সময়-কে বলেন, আমার বিরুদ্ধে বাকি সব অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক।

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবা আক্তার মুঠোফোনে দৈনিক আমার সময়-কে জানান, এরকম কোন অভিযোগ আমরা জানতে পারিনি। তবে, আরো অনেক বিষয় আছে যা ফোনে বলা যাবে না। আমি এখন কামরাঙ্গীরচরে স্কুল ভিজিটে আছি। আপনি আগামিকাল অফিসে আসুন। সাক্ষাতে বিস্তারিত জানাবো। কিন্তু,  পরদিন (আজ বৃহস্পতিবার গিয়েও এ শিক্ষা কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।

আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে প্রধান শিক্ষকের আরো ব্যাপক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তার পূর্বের কর্মস্থলের কর্মকান্ড, বর্তমান প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম সহ আরও চমকপ্রদ তথ্য পরবর্তী পর্বে প্রকাশিত হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com