গাজীপুরের শ্রীপুরের ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড নামক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবী করতে গিয়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের গাড়িতে আগুনের ঘটনায় ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা সবাই ওই কারখানার শ্রমিক বলে জানা যায়। সোমবার (১৫ মে) বিকেলের দিকে তাদেরকে আটক করার বিষয়টি দৈনিক আমার সময়কে নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এ এফ এম নাসিম।
তিনি আরও বলেন, রোববার সন্ধ্যার দিকে সরকারি কাজে বাঁধা ও পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়ার অপরাধে সোমবার সকালের দিকে অভিযান চালিয়ে তাদের ৭জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের নাম পরিচয় পরে জানানো হবে। বাকী অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। এ ঘটনা মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
এদিকে সোমবার দুপুরের দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই কারখানার সামনে ছুটির নোটিশ লাগানো। তাতে লিখে জানানো হয়েছে, “১৫ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত অনিবার্য কারণে কারখানা বন্ধ থাকবে”। এছাড়াও কারখানার সামনে ও ভিতরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ নিয়োজিত আছে।
কারখানায় কাজে যোগ দিতে আসা শফিকুল, রাকিব,আমেনা, মাসুদসহ একাধিক শ্রমিকের দাবী, বকেয়া বেতন নিয়ে তালবাহানা করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে মালিক পক্ষ। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী বকেয়া বেতনের টাকা চাইতে গিয়ে আহত হয়েছে। এখন আবার পুলিশ শ্রমিকদেরকেই ধরছে।
কহিনুর নামের এক নারী শ্রমিক বলেন,”গরীবের ওপরই সব বিপদ। আমরা পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে আজকে আমরাই ভিক্টিম। মাছুম মিয়া নামের একজন বলেন, “সকালে গেইটের দিকে যেতে গিয়ে দূর থেকে দেখি পুলিশ আর পুলিশ। পরে বাড়ি চলে গেছি। কারণ গিয়ে আবার কোনো বিপদে পড়ি “।
কবির নামের আরেক শ্রমিক বলেন,” আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তৃতীয় কোনো পক্ষের উস্কানিমূলক আচরণে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে পুলিশ অন্যায় ভাবে আমাদের ওপর হামলা করে। এখন আবার আমরাই আসামী। ভিক্ষা চাইতে গিয়ে কুত্তা সামলানোর দশা আমাদের “।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে কারখানার মূল ফটকে গেলে ভেতরে কেউ নেই বলে জানানো হয়। পরে কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের শ্রীপুর জোনের ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানান, সোমবার বিকেলের দিকে প্রশাসনের সকল পর্যায়ের প্রতিনিধি মালিকের সঙ্গে আলাপ করে শ্রমিকদের বেতন ভাতার বকেয়ার ব্যাপারটি সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে হামলা চালিয়ে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
গাজীপুরের এএসপি (কালিয়াকৈর সার্কেল) আজমির হোসেন দৈনিক আমার সময়কে জানান, পুলিশের ওপর হামলা ও শিল্প পুলিশের গাড়িতে আগুনের ঘটনা জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। কারখানার শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশপাশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান রয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, ৩ মাসের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধের দাবীতে ১৩ মে শনিবার বেলা ১১টা থেকে কাপাসিয়া-জয়দেবপুর আঞ্চলিক সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের ধলাদিয়া এলাকায় ডাট কম্পোজিটের শ্রমিকেরা। সেসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের মাধ্যমে শ্রমিকদের জানানো হয় যে, রোববার সকাল ১০টার দিকে মালিক নিজে এসে শ্রমিকদের বেতন-ভাতার বিষয়ে সমাধান দেবেন। এতে ৫ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ থাকলে দাবী পূরণের আশ্বাস পেয়ে ঘরে ফিরে যায় শ্রমিকরা। রোববার সকাল থেকে কর্ম বিরতি দিয়ে কারখানার ভেতর শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচী পালন করে শ্রমিকরা। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মালিক কারখানায় এসে শ্রমিকদের ৪২ জন প্রতিনিধি নিয়ে দ্বিতীয় তলায় আলোচনায় বসে। আলোচনা চলাকালে একপর্যায়ে বাইরে কয়েকজন শ্রমিকের সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় শ্রমিকদের ওপর টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। শ্রমিকরাও ইটপাটকেল ছুঁড়ে। এতে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে পুলিশের লাঠিচার্জে ৮-১০ জন শ্রমিক আহত হয়।
Leave a Reply