1. : admin :
করোনাকালে ঝুঁকির মাঝেও সেবাদানকারী এক মানবিক নার্স - দৈনিক আমার সময়

করোনাকালে ঝুঁকির মাঝেও সেবাদানকারী এক মানবিক নার্স

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
    প্রকাশিত : শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩
স্কুল জীবনেই ফাহিমা আক্তার অবগত হন মানুষকে সরাসরি সেবা দিতে অন্যান্য পেশায় পারিবারিক ও সামাজিক বাধা রয়েছে। তবে নার্স হিসেবে সেবা দিতে কোন বাধা নেই। বড় হয়ে নার্স হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ফাহিমা।
পড়াশোনা শেষে তার নার্স হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়। ফাহিমা আক্তার টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইলের মানবিক নার্স হিসেবে পরিচিত।
বাবা টাঙ্গাইল সদর উপজেলার উত্তর তারটিয়া গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হোসেন। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ২০০৩ সালে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং অ্যান্ড ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি শেষ করে ঢাকার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকরি নেন। সেখানে তিনি ১০ বছর চাকরি করেন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে নার্স পদে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে চাকরি শুরু করেন তিনি। ২০১৪ সালের জুনে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে যোগদান করেন। তারপর থেকে তিনি সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বিশ্বমহামারি করোনাকালীন সময়ে মৃত্যুর ভয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে অনেকেই দায়িত্ব পালন করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। কাউকে কোন দায়িত্ব দিলেও আতঙ্কের কারণে দায়িত্ব নিতে চায়নি। তবে ফাহিমা আক্তার করোনাকালীন সময়ে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি করোনাকালীণ টানা ১৫ থেকে এক মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বজনরা রোগির কাছে আসতে ভয় পেলেও ফাহিমা রাত দিন শত শত রোগিকে সেবা প্রদান করেছেন। তার সেবায় অসংখ্য রোগি সুস্থ হয়েছেন।
শুধু করোনাকালীন সময় নয়, বর্তমান সময়েও ঈদসহ যে কোন উৎসবের আনন্দ বাদ দিয়ে ফাহিমা হাসপাতালে রোগিদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পরিবারের আপন সদস্যদের মতো ফাহিমাও রোগির পাশে দাঁড়ান। যে কারনে টাঙ্গাইলে ফাহিমা মানবিক নার্স হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। সেবার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন ফাহিমা।
লাভলু মিয়া নামের এক রোগির স্বজন বলেন, গত দুই চার বছরে তিন বার টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে রোগি নিয়ে এসেছি। যতবার ফাহিমা আপার সাথে দেখা হয়েছে ততবার তার কাছ থেকে সর্বোচ্চ সেবা পেয়েছি। অনেক সময় দেখা যায়, নার্সরা রোগির স্বজনদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। কিন্তু ফাহিমা আপার ক্ষেত্রে সেটি কখনও পাইনি। তার উজ্জল ভবিষ্যত কামনা করি।
ফাহিমা আক্তার বলেন, করোনাকালীণ সময়ে মৃত্যুর ভয়ে অনেকেই দায়িত্ব নিতে চায়নি। তবে মনে হতো ঘরে থাকলেও তো আমার মৃত্যু হতে পারে। তাই আমি হাসপাতালে এসে রোগিদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পেছন থেকে আমার ম্যাডামরা অনেক সাহস দিয়েছেন। এছাড়াও আমাদের টিমের সদস্য সজীব হোসাইন, আন্তাজ আলী, সেলিম মিয়া ও হামিদ মিয়াও সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করেছেন। তাদের কারণেও সেবা দেওয়া আমার পক্ষে সহজ হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের নার্সিং সুপার ভাইজার হেলেনা খানম বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর যাবত লক্ষ করছি ফাহিমা দায়িত্ব নিতে পছন্দ করে। নিরিবিলিভাবে কাজ করে সেই দায়িত্ব বাস্তবায়নও করেন তিনি। আমি তার আরও সফলতা কামনা করি।
হাসপাতালের উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক খোদেজা খাতুন বলেন, করোনাকালীন সময়ে কেউ নিজে থেকে ডিউটি করার জন্য দায়িত্ব নিতে চাইতো না। তবে ফাহিমা নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন। তার অসুস্থ ছেলেকে বাসায় রেখে টানা কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে থেকে শত শত মানুষকে সততার সাথে সেবা দিয়েছেন। সে আসলেও একজন মানবিক নার্স।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com