1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. admin@dailyamarsomoy.com : admin :
এই শহরে এমএ পাস একজন চাওয়ালার গল্প - দৈনিক আমার সময়

এই শহরে এমএ পাস একজন চাওয়ালার গল্প

নিজেস্ব প্রতিবেদক
    প্রকাশিত : বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০২৫

“মাস্টার্স পাস একজন যুবক চায়ের দোকান দিবেন”—শুনলেই অনেকে অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকেছেন। অনেকে বলেছিলেন, ‘কফি শপ বা আধুনিক কোনো ক্যাফে হলে মানাতো, কিন্তু চায়ের দোকান?’ কিন্তু সেই সব সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাহ্য করে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, সৎ উপার্জন ও আত্মসম্মানের কাছে সমাজের কথার কোনো মূল্য নেই।
শিক্ষাজীবন থেকে সংগ্রামের পথ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সহিদুল রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। আবেদন করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত চাকরি জোটেনি। তবুও হাল ছাড়েননি।
এক সময় তিনি ফ্রিজের দোকান খোলেন। কিছুটা সময় সেই ব্যবসা চালালেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পরে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতা করতে করতে আবারও স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি অনলাইন স্কুল গড়ে তোলার। সেই স্বপ্ন নিয়েই পথ চলছিল, কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবতার চাপে তা বেশিদূর এগোয়নি।
নতুন স্বপ্নের নাম ‘এমএ পাস চাওয়ালা’
এই দীর্ঘ সংগ্রামের পর সহিদুল নতুন সিদ্ধান্ত নেন। ভেবেচিন্তে ঠিক করেন চায়ের দোকান দেবেন। তবে এই সিদ্ধান্তও সহজ ছিল না। অনেকেই আপত্তি তোলেন। পরিবার থেকেও বলা হয়েছিল, যদি করতেই হয় তবে অন্তত ‘ক্যাফে’ জাতীয় কিছু করা হোক। কিন্তু সহিদুল নড়েননি।
অক্টোবরের শুরুতে রাজধানীর ভাটারা কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে যাত্রা শুরু করে ‘এমএ পাস চাওয়ালা’। দোকান ভাড়া করতে গিয়েও তাকে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়। মালিকেরা যখনই জানতে পারতেন দোকানটি হবে চায়ের, তখনই ভাড়া দিতে অনীহা প্রকাশ করতেন। কেউ কেউ ফোনেই কথা বলা বন্ধ করে দিতেন। কিন্তু সহিদুলের জেদ আরও বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, “এই নামের পেছনে দুটি কারণ আছে। প্রথমত, নাম শুনেই যেন সবাই আকৃষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত, শিক্ষিত বেকার তরুণরা যেন অনুপ্রাণিত হয় এবং কোনো কাজকে ছোট না ভাবে।”
সাজানো দোকান আর বিচিত্র স্বাদের চা
সহিদুলের দোকান সাজানো হয়েছে বেশ যত্ন নিয়ে। তামার তৈরি আরবি কেতার কেটলি, নানা রকম চা তৈরির সরঞ্জাম, পরিপাটি আসবাব—সব মিলিয়ে দোকানটি আলাদা আমেজ তৈরি করেছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরা নিয়মিত ভিড় করছেন এখানে।
চায়ের তালিকাও বেশ বৈচিত্র্যময়। ইরানি জাফরান চা, ইরানি দুধ চা, স্পেশাল মাসালা দুধ চা, গরুর দুধ চা এমন সব নতুন নাম ও স্বাদের চা মিলছে একেবারে কম দামে এম এ পাস চা ওয়ালার দোকানে। সঙ্গে থাকছে মাংসের স্পেশাল শিঙাড়া। আরো আছে আইস টি,মকটেল,জুস,লাচ্ছি,মিল্ক শেক,ফ্রেঞ্চ ফ্রাই,মটু শর্মা,মটকা মিট বক্স।

স্থানীয়দের প্রশংসা
পাশের মুদি দোকানের কর্মী মানিক বলেন, “এমএ পাস চাওয়ালা নামটাই আলাদা। এতে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক উৎসাহ পাবে। বসে না থেকে নিজের মতো কিছু করবে।”
মানিকের মতে, অনেকেই উচ্চশিক্ষা নিয়ে ছোটখাটো কাজ করলে তা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চান না। কিন্তু সহিদুল সেই মানসিকতার বেড়াজাল ভেঙে ফেলেছেন। তাই তিনি অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।
সহিদুলের এই সংগ্রামের পেছনে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর স্ত্রী শ্যামলী আক্তার। তিনি স্বামীর সিদ্ধান্তকে সবসময় সমর্থন করেছেন। সংকটের সময়ে ভরসা ও সাহস যুগিয়েছেন। শহীদুলও তা অকপটে স্বীকার করেন।
অনুপ্রেরণার আলো
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ‘এমএ পাস চাওয়ালা’ আলোচনায় এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা। অনেকেই মনে করছেন, সহিদুলের উদ্যোগ শিক্ষিত বেকার যুবকদের নতুন দিশা দেখাবে। প্রমাণ করবে, কোনো কাজ ছোট নয় অসৎভাবে আয় করাই লজ্জার।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com