1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. admin@dailyamarsomoy.com : admin :
Vবিলুপ্তির পথে সাতক্ষীরার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প - দৈনিক আমার সময়

Vবিলুপ্তির পথে সাতক্ষীরার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

সিরাজুল ইসলাম শ্যামনগর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
    প্রকাশিত : সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বিলুপ্তির পথে সাতক্ষীরার শত বছরের ঐতিহ্য মাটির তৈরী শিল্প বা মৃৎ শিল্প। একটা সময়ে গ্রাম বাংলার প্রতিটা ঘরের রান্না থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া আর অতিথি আপ্যায়নসহ প্রায় সব কাজেই মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করা হতো। স্বাস্থ্যকর ও সহজলভ্য ছিলো বলে সব পরিবারেই ছিলো এর ব্যবহার। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের এই মৃৎশিল্প।

এক সময় জেলার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, দেবহাটা, কলারোয়া ও পাটকেলঘাটা উপজেলা ঘুরে দেখা যেতো কুমোরপাড়াগুলো যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা একটি সোনালী ছবি। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এ মৃৎশিল্প।

শিল্পীর তুলির আঁচড়ের মতো যত্নে তৈরি হয় মাটির তৈরি জিনিস।

অসংখ্য কুটিরের নয়নাভিরাম মৃৎশিল্প দেখে সহজেই যে কারোর মন আনন্দে ভরে উঠতো। এক সময় এই কুমোরপাড়াগুলো মৃৎ শিল্পীর জন্য বিখ্যাত ছিল। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা প্রযুক্তির উন্নয়ন নতুন নতুন শিল্প সামগ্রীর প্রসারের কারণে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকুল বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।

জানা যায়, মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ পাল সম্প্রদায়ের প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় অর্থ-সামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণিভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবন্ধ ছিল। পরে অন্য সম্প্রদায়ও মৃৎশিল্পকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন।

 

তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধাতব, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের পণ্য সহজে বহনযোগ্য আর সস্তা হওয়ায় বাজার এ গুলো সয়লাব হয়ে গেছে। ফলে ক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সঙ্গে ক্রয় করেন না। এতে করে প্রতি নিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। সে কারণে অনেক পুরানো শিল্পীরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন।

যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরানো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। আর এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প, তাদের জীবন যাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিন কাটালেও মৃৎশিল্পীরা এখনো স্বপ্ন দেখেন। কোন একদিন কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সেদিন হয়তো আবার তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখশান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।

তবে কুমারদের দাবী তৈরিকৃত মাটি, উপকরণ ও পোড়ানোর খরচ বেশি হওয়ায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন অনেকই। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখনো প্রায় ৪’শত পরিবার এ শিল্পের সাথে যুক্ত রয়েছে।

এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) সাতক্ষীরা কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাতক্ষীরা সদরের বাবুলিয়া এলাকার দিলীপ কুমার পাল জানান, আগে আমরা এখানে ২০-২৫টি পরিবার বিভিন্ন ধরনের মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ধাতব, ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বাজারে আসায় মাটির হাড়ি পাতিল এর চলন উঠে গেছে আগের মতন বেচাকেনা না থাকায় এ পেশা ছেড়ে অন্যের ক্ষেত-খামারে দিনমজুর দিয়ে ও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে অনেকেই।

একই এলাকার অঞ্জনা রানী পাল ও স্বপন পাল জানান, আমাদের মাটি দিয়ে এ সব তৈরি করার জন্য মাটিকে চটকিয়ে নরম করতে হয় বিভিন্ন সময় মাটিতে থাকা ঝিনুক, শামুক, ব্লেড ও কাঁচে আমাদের হাত পা কেঁটে যায়। সরকার যদি আমদের কাঁদা মাটি চটকানোর জন্য মেশিন দেয় তাহলে আমাদের খুব উপকার হতো।

তারা আরো জানান, যদি জাত পেশা না হতো তাহলে অন্য কাজ করতাম। আমাদের এখানে প্রায় ২৫টি পরিবার এই কাজ করতো কিন্তু  এখন ৬-৭টি পরিবার এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে বাকিরা অন্য কাজ করছেন।

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর পালাপাড়ার নলীতা রানী পাল ও জোছনা পাল জানান, মাটির তৈরী জিনিসপত্র তৈরি জন্য আমাদের বিভিন্ন স্থান থেকে এঁটেল মাটি, ও পোড়ানো জন্য জ্বালানী কাঁট কিনে আনতে হয়। দিন দিন এ সবের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের তেমন লাভ হয় না।

তারা আরো জানান, প্লাস্টিকের পণ্য বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। প্লাস্টিকের পণ্য সহজে বহনযোগ্য আর সস্তা হওয়ায় আমাদের এ ব্যবসা এখন আর ভালো নেই। অনেকেই এসে ছবি তুলে নিয়ে যায় কিন্তু কোনো ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা পায় না।

বিশিষ্টজনরা মনে করেন, বর্তমান সমায়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্পের তৈরীকৃত পণ্যের চাহিদা কম। এছাড়া বিজ্ঞান সম্মতভাবে প্রস্তুত করা জিনিস ব্যবহার করছেন সাধারণ ক্রেতারা, তাই মৃৎশিল্প দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা প্রাচীন সংস্কৃতিকে দিন দিন হারিয়ে ফেলছি। তাই  মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রেখে বাজার সৃষ্টি করা জরুরী।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাতক্ষীরার উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন জানান, সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৪’শ পরিবার এ মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে। একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হবে। এর ফলে তারা উন্নত মানের বিভিন্ন ধরনের মাটির হাড়ি, পাতিল, শো-পিচ তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি জন্য উপযোগী করতে পারবেন। তিনি আরো জানান, তাদের কাছে আবেদন করলে তারা সল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থাও করবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com