গাজীপুরের শ্রীপুরে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের দাপট উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। সাপগুলো কখনো বাড়ির আঙিনায় আবার কখনো ঘরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। বিষধর সাপের ভয়ের সাথে এর কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অ্যান্টিভেনম না দেওয়ার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
বুধবার (৮ আগস্ট) দুপুরের দিকে উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে ও বেশ কয়েকটি সুত্রে জানা গেছে,’ বর্ষায় পানি জমে থাকা জায়গা, ধানখেত, খোলা মাঠ ও বসতবাড়ির আশপাশে সাপের উপস্থিতি বেড়েছে। যেগুলো মাঝেমধ্যেই মানুষের বাড়িতে ঢুকে যাচ্ছে। কোনো কোনো সময় কামড়ে দিচ্ছে। তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাপে কাটা রোগীরা প্রথমে স্থানীয়ভাবে ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে চিকিৎসায় বিলম্ব হচ্ছে এবং রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটছে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এ উপজেলায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বিষধর সাপের কামড়ে মারা গেছেন ৩জন।
এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের দাবি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম সংরক্ষণ এবং স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক মাইকিং ও প্রচার কার্যক্রম চালানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ড কড়ইতলা গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন,’ গত সপ্তাহ ধরে আমার বাড়িতে সাপের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। থাকার ঘর থেকে পরপর ২টি সাপ পাওয়া গেছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে খুবই ভয় ও আতংকে আছি।
উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের মিজান মিয়া বলেন, ‘বর্ষার সময় বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যায় এবং সাপের গর্তে পানি উঠে। এতে সাপ দিশেহারা হয়ে ঘরবাড়ি ও ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।’
গাজীপুর ইউনিয়নের পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা রবিন মন্ডল বলেন,’ কিছুদিন আগে আমাদের গ্রামের এক বৃদ্ধ সাপের কামড়ে মারা যায়। হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম না থাকায় সময়মতো চিকিৎসা হয়নি। পরে আমরা ওই সাপটিকেও মেরে ফেলি। মানুষের সচেতনতায় প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।’
শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন,’ সাপ প্রকৃতির বন্ধু এবং পরিবেশের ইকো সিস্টেমের একটি অংশ। ইতোমধ্যে আমাদের বন বিভাগের লোকজন কয়েকটি সাপ অবমুক্ত করেছেন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন,’কেউ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হলে ঝাড়ফুঁকে সময় নষ্ট না করে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে অ্যান্টিভেনম নিতে হবে। আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে চিকিৎসা দেওয়ার অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে। এখন সমস্যা হলো এটা দেওয়ার পর যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটে তার চিকিৎসা সেখানে নেই। যেমন আইসিও সাপোর্ট লাগতে পারে। সেখানে তো এটা নেই। আর এখন সাপের কামড়ে মৃত্যুকে আর গ্রহণযোগ্য বলা যায় না।”
Leave a Reply