ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে সংঘটিত একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা জেলা।
অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় শনাক্তের পর মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে এই সাফল্য অর্জন করে পিবিআই। নিহত ব্যক্তি হলেন জালাল শিকদার (৪৬), যিনি পেশায় একজন অটোরিক্সা চালক।
গত ২৬/০৯/২০২৫ তারিখে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন শুভাঢ্যা পূর্ব পাড়া কামারপাড়া এলাকার একটি পরিত্যাক্ত ডোবা থেকে অজ্ঞাত এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের পরিচয় শনাক্ত করে পিবিআই জানতে পারে যে নিহত ব্যক্তি হলেন জালাল শিকদার, যিনি কেরাণীগঞ্জে বসবাস করতেন। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মোছাঃ হনুফা বেগম (৪২) বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ প্রাথমিকভাবে মামলাটির তদন্ত করলেও, ২৮/০৯/২০২৫ তারিখে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটি গ্রহণ করে। পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মোস্তফা কামাল এবং পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মোঃ কুদরত-ই-খুদা পিপিএম-সেবা এর তত্ত্বাবধানে পিবিআই-এর একটি চৌকস দল ছায়া তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে জানা যায়, নিহত জালাল শিকদার পেশায় অটোরিক্সা চালক হলেও, রাতে তার দলসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন।
পিবিআই তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত ১১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে হত্যায় সরাসরি জড়িত প্রধান অভিযুক্ত মোঃ শেখ নুরু (৫০) এবং চুরি ও ছিনতাইকৃত অটোরিক্সা ক্রয়-বিক্রয়ে সহায়তাকারী অপর অভিযুক্ত মোঃ মোজাম্মেল ম্যোল্লা (৪৩)-কে ঢাকা ও কদমতলী এলাকার ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী, গত ২৬/০৯/২০২৫ তারিখ রাতে ভিকটিম জালাল ও অভিযুক্ত মোঃ শেখ নুরু অটোরিক্সা নিয়ে চুরি-ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হন। কোনো কিছু চুরি করতে না পারায়, অভিযুক্ত শেখ নুরু ভিকটিম জালালের অটোরিক্সাটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। তিনি চুনকুটিয়ার একটি দোকানে জালালকে জুসের মাধ্যমে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ান। জালাল ঘুমিয়ে পড়লে শেখ নুরু তাকে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের শুভাঢ্যা পূর্ব পাড়া কামারপাড়া এলাকায় নিয়ে যান এবং তার সঙ্গে থাকা গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর লাশটি পরিত্যাক্ত ডোবার পানিতে ফেলে দেন।
হত্যা শেষে অভিযুক্ত শেখ নুরু ভিকটিমের অটোরিক্সাটি চালিয়ে রায়েরবাগ এলাকায় সহযোগী মোঃ মোজাম্মেল মোল্লার নিকট মাত্র ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকায় বিক্রি করে দেন। পরে অভিযুক্ত মোঃ মোজাম্মেল মোল্লার হেফাজত থেকে মিশুক অটোরিক্সাটি উদ্ধার ও জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামিই বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা অনুযায়ী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। এর মাধ্যমে পিবিআই ঢাকা জেলা ১৫ দিনের মধ্যে এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়।
Leave a Reply