# বাংলাদেশ-ভারত একি সময়ে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞার দাবী
বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে সুষ্ঠু প্রজনন, বংশ বিস্তার বাড়াতে সব ধরনের মাছ ধরায় ৬৫ দিনের (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই) পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আর এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে আর-ও দুই-দিন বাকি। কিন্তু এর’ই মধ্যে সাগরে নেমে পড়েছেন জেলেরা। সময় ঘনিয়ে আসায় মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও তাদের আর চোখ রাঙ্গাচ্ছেনা। আর এই সুযোগে সাগরে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন অনেক জেলে। তাদের দাবি, বন্ধে সরকার যে চাল সহায়তা দিয়ে থাকে সেটা প্রত্যেকের কপালে জোটেনি। ইউনিয়ন পরিষদে যেতে যেতেই চাল কমে যায়। ৬৫ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ওজনে কমে ১০ কেজি। এছাড়া মৎস্য কার্ড আছে এমন অনেক জেলে পরিবার সরকারের সহায়তা থেকে বঞ্চিত। এই নিষেধাজ্ঞায় সরকার দুই কিস্তিতে ভিজিএফ চাল দিয়ে থাকে। প্রতি বরাদ্দে পরিবার প্রতি ৬৫ কেজি দ্বিতীয় বরাদ্দে ৩৫ কেজি। কিন্তু প্রথম বরাদ্দ পেলেও দ্বিতীয় বরাদ্দ পায়নি জেলেরা। এ নিয়ে তাদের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বেঁধে দেওয়া সময় শেষ না হতেই সাগরে নেমেছে অনেক জেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার সাগরে মাছ ধরতে দেখা যায় অনেক ট্রলারকে। তারা সাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট মাছ ভর্তি ট্রলার নিয়ে ফিরছে। তা অবশ্য প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে।
শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় তরতাজা মাছের ভান্ডার। সকালে বাহারছড়া বাজারে সাগরে ফাঙ্গাস (বাংলা মাছ) পোয়া মাছ, লইট্যা, সুন্দরী, মাইট্যা, তাইল্যাসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাজারে বাংলা মাছ বিক্রি করা জমির বলেন, বড়শী দিয়ে মাছ ধরেছি। প্রতি কেজি মাছ ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। এক কেজির নিচে ৪০০ টাকা করে বিক্রি করছি।
আরেক মাছ বিক্রেতা নুরুল আমিন বলেন, আর কয়দিন বাকি আছে। স্যারেরা অনেক জ্বালাইছে। এখন আর ধরে না। আমরাও পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি, কিভাবে সংসার চলে আল্লাহ ভালো জানে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকারিতার বিষয়ে প্রশ্নও তুলেছেন জেলেরা। তাদের দাবি, বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরছে ভারতীয় জেলেরা। ভারতে আর বাংলাদেশে একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের বিভিন্ন ধাপে ১৪৭ দিন নিষেধাজ্ঞার ফলে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। জেলেরা যে সরকারি সহায়তা পান, তা অনেক কম। ফলে জীবন কাটে চরম দুর্দশায়।
জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা ইচ্ছে করেই বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে প্রতিনিয়ত মাছ শিকার করে। তারা উন্নত মানের ফিশিং বোট নিয়ে মাছ শিকার করে। নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ডের দেখলেই দ্রুত নিজেদের জলসীমায় পালিয়ে যায়।
মৎস্য অফিস জানায়, প্রতিবছর আশ্বিন মাসে (৭-২৮ অক্টোবর) গভীর সাগর থেকে মা ইলিশ উপকূলের দিকে এসে ডিম ছাড়ে। কয়েক বছর ধরে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। পাশাপাশি ৬৫ দিন বন্ধেও মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া বঙ্গোপসাগরে ৪৩৫ প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সম্পদ রয়েছে, যা সংরক্ষণ ও প্রজননের স্বার্থে এবং সমুদ্র নির্ভরশীল অর্থনীতির টেকসই উৎপাদন ও বাস্তবায়নের জন্য সরকার ৬৫ দিনের জন্য সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে। তবে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে সরকার প্রত্যেক জেলে পরিবারকে ৬৫ কেজি করে চাল (এলাকা ভেদে) দিয়ে থাকে। নিবন্ধিত জেলেদের এসব চাল দেওয়া হয়।
জলিল নামে একজন বলেন, অনেক জেলে যারা নিবন্ধন করাতে পারেননি। অথচ অনেক ভুয়া লোক জেলে দাবি করে সরকারের সাহায্য নিচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ গরিব জেলেরা সাগরে নামতে না পারলে খাবে কি? তাই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে অনেক জেলে জেল জরিমানার ভয় উপেক্ষা করে মাছ ধরতে যায়। নিষেধাজ্ঞা শুধু তাদের দিলে হবেনা- পাশের দেশ মিয়ানমার, ভারত, মাছ ধরার জাহাজ ও ট্রলার যেন বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্যও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তারাপদ চৌহান বলেন, ৬৫ দিন ইলিশ বন্ধ রাখার জন্য মৎস্য বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নৌ-বাহিনীর হাতে। তারা বহিরাগতের নিয়ন্ত্রণ করবে। আমরা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বলেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধে মাছের সংখ্যা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলেরা সবচেয়ে উপকৃত হবে। তাদের জন্য সরকার চাল সহায়তা দিয়ে থাকে। যদিও তা একটি পরিবারের জন্য কম।
Leave a Reply