•চৌফলদন্ডীর মোরশেদ খুনের আসামি পারভেজ সহ অন্যদের ফাঁসি দাবী
কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডীর টমটম চালক মোরশেদ হত্যার আসামীরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরাঘুরি করছে তারা। মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকী দিচ্ছে ভূক্তভোগী পরিবারকে। নিরুপায় এ পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়ার মোঃ শামসুল আলমের পুত্র টমটম চালক মোরশেদ আলম (২০) কে উপুর্যপুরি ছুরিঘাতে নির্মমভাবে খুন করা হয়। সে সাগর মনি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় কতিপয় দূর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসী হৃদয় বিদারক এ ঘটনা ঘটিয়েছে। হানাদাররা তার লাশও গুম করে ফেলে। ঈদগাঁও থানা পুলিশ গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জালালাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম মিয়াজী পাড়ার মৃত নুরুল কবিরের সুপারি বাগান থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন।
এ ঘটনায় নিহতের পিতা ঈদগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলার অজু করেন। মামলার নম্বর ৪/১৬। তারিখ ১১/২/২৩ ইংরেজি।
মামলায় ছয় জনের নাম উল্লেখ সহ আরো ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
মামলার বাদী মোঃ শামসুল আলম কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, মামলা দায়েরের পর থেকে আসামিরা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য তাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। মামলা প্রত্যাহার না করলে বাদী ও বাদীর পরিবারের সদস্যদেরকে মোরশেদের ন্যায় খুন করে লাশ গুম করে ফেলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আসামিরা স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার কেউই তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
নিহত মোরশেদের মাতা সুজিয়া বেগম স্থানীয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
পুত্র শোকে কাতর অবস্থায় তিনি জানান, আমার স্বামী স্থানীয় প্রশাসনের নিকট কোন ধরনের নিরাপত্তা ও আইনগত প্রতিকার পাচ্ছেন না। আসামিদের প্রভাব- প্রতিপত্তির জোর এ অবস্থা হয়েছে বলে মন্তব্য তার।
তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন,
আসামিরা এখনো এলাকায় বীরদর্পে ঘোরাফেরা করছে। প্রশাসন তাদের আইনের আওতায় আনছে না। উল্টো আসামিরা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হুঁশিয়ারি সংকেত পাঠাচ্ছে।
নিহত টমটম চালকের স্কুল পড়ুয়া বোন রিপা মনি জানায়, খুনিদের হুমকি-ধামকি অব্যাহত রয়েছে। তাদের হুমকিতে আমার শিক্ষা জীবন বিপন্নের পথে। স্কুলে যাবার পথে তারা প্রতিনিয়ত আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এজাহার নামীয় কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা।
খুনের শিকার মোরশেদের ছোট ভাই মনসুর আলম জানায়, আমি ও আমার পরিবারের সকল সদস্য চরম আতঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছি। আমরা অতিসত্বর এসব দূর্বৃত্তদের আটকের আবেদন জানাচ্ছি।
নিহত মোরশেদের পরিবারের সদস্যরা আরো জানান, তারা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চান। আসামিদের ফাঁসি চান। প্রশাসনের কাছে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
আসামিদের অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার পেতে প্রধানমন্ত্রীসহ আইন-শৃঙ্খলার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন শোকাতুররা।
এদিকে এ হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের অতিসত্বর আইনের আওতায় আনতে উপর্যুক্ত প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের চট্টগ্রামের ডিআইজি, র্যাব- ১৫ কক্সবাজার এর অধিনায়ক এবং কক্সবাজার পুলিশ সুপার বরাবর এ অভিযোগটি পাঠান নিহত টমটম চালকের পিতা মোঃ শামসুল আলম।
এতে উল্লেখিত আসামিদের মধ্যে রয়েছে নুরুল হকের পুত্র মোঃ পারভেজ, মৃত সোনা আলীর পুত্র বশির আহমদ, মোঃ বাহাদুল্লাহ ও নজির আহমদ, বশির আহমেদের স্ত্রী সমিরা, আনোয়ারা বেগম ও মোঃ হারুনসহ অজ্ঞাতনামা আরো ছয়/ সাতজন।
আসামিরা সবাই একই ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
অভিযোগদাতা উল্লেখ করেন, ১ নম্বর অভিযুক্ত মোঃ পারভেজের নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় তার ছেলেকে পৈশাচিক কায়দায় খুন করা হয়। খুনিরা তার ছেলেকে ২৪/২৫ টি ধারালো ছুরিকাঘাতে জর্জরিত করেছে। আমার ছেলের কি অপরাধ ছিলো? পরিবারের অন্যতম উপার্জনকারী এ ছেলেকে কেন এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হলো? নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের এতদিন পার হলেও পুলিশ এ পর্যন্ত একজন আসামিকেও আইনের আওতায় আনতে পারেনি। তাই আসামিরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। প্রধান অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ একাধিক অপরাধে বহু ফৌজদারী মামলা রয়েছে। তার প্রভাবে অন্য আসামীরা এলাকায় যে কোনো অপরাধ করতে দ্বিধা করছে না।
ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ গোলাম কবিরের নিকট এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার মোবাইলে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে প্রধান অভিযুক্ত মোঃ পারভেজকে হুমকি- ধামকির বিষয়টির ব্যাপারে অনেকবার মোবাইল করেও রিসিভ না করায় তার প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।
অন্যতম আসামি বশির আহমদের ০১৬৪৩-১৯৮৩৩৮ নম্বর মোবাইলে যোগাযোগ করে বন্ধ পাওয়া যায়।
Leave a Reply