নিহত গৃহবধূর নাম বিনা খাতুন (২২)। তিনি উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রামের মাঠপাড়া এলাকার আমিন হোসেনের স্ত্রী ও যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামের বিল্লাল শেখের মেয়ে।
স্বজনদের ভাষ্য, যৌতুকের টাকা না শ্বাশুড়ি শিল্পী খাতুন (৪৫) ও ননদ মুক্তা খাতুন (২৫) মিলে বিনাকে মারধরের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। হত্যার পর হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়েছে অভিযুক্তরা।
জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে নন্দলালপুর গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেনের কলা ব্যবসায়ী ছেলে আমিনের সাথে বিয়ে হয় বিনা খাতুনের। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুকের টাকার জন্য বিনাকে মারধর করতো। মারধর সইতে না পেরে বিয়ের পরেও প্রায় এক বছর বাবার বাড়িতে থাকত বিনা খাতুন। এসব নিয়ে একাধিক বার সালিশী বৈঠক হয়। একপর্যায়ে দম্পত্ত জীবনে তাদের কোল জুড়ে একটি ছেলে সন্তান (৭ মাস) জন্ম নেয়। এরপর ২৫ হাজার টাকা যৌতুকসহ সন্তানটিকে নিয়ে গত শুক্রবার বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে যায় বিনা খাতুন। আর আজ দুপুরে শ্বাশুড়ি শিল্পী ও ননদ মুক্তা খাতুন তাকে মারধরের পর শ্বাঃসরোধ করে হত্যা করে এবং হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়ে যায়।
বিকেলের থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার বারান্দায় একটি কাঠের বেঞ্চে প্যাকেটে মোড়ানো রয়েছে মরদেহটি। থানার বাইরে স্বজনরা আহজারি করছে।
এসময় বাবা বিল্লাল শেখ বলেন, ‘ বিয়ের পর থেকে শ্বাশুড়ি শিল্পী ও ননদ মুক্তা ১০ লাখ টাকা ও একটি মোটরসাইকেলের জন্য নির্যাতন করত। আমি গরিব বলে টাকা দিতে পারিনি। মেয়ে আমার নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় এক বছর আমার বাড়িতেই ছিল। গত শুক্রবার ২৫ হাজার টাকাসহ শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম। তবুও আজ শ্বাশুড়ি আর ননদ মিলে হত্যা করে হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়েছে। আমি সুষ্ঠ বিচারের জন্য থানায় মামলা করব।’
বিকেলে সরেজমিন বিনার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেডে পাকা বাড়িতে সুনসান নিরবতা। দরজায় তালা ঝুলছে। দরজায় পাশে ইটের দেওয়াল একটুখানি ভাঙা। ঘরের ভিতরে কয়েক টুকড়ো ওড়নার কাটা অংশ পড়ে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী জানান, সকাল ১১ টার দিকে গৃহবধূ বিনাকে বাড়ির বাইরে বসে কাঁদতে দেখেন তিনি। তিনি বিনার কাছে কাঁদার বিষয় জিজ্ঞেস করেন। তখন বিনা তাকে বলেন, শ্বাশুড়ি – ননদ থাকে মারধর করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বয়োজ্যেষ্ঠ আরেক নারী জানান, দুপুরে ভ্যানে করে বিনাকে হাসপাতালের দিকে নিয়ে গিয়েছিল শ্বাশুড়ি আর ননদ। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি।
কুমারখালী থানার উপ পরিদর্শক ( এস আই) দিবাকর হলদার জানান, খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরহাল করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি থানায় রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তবে হাসপাতালে শ্বশুর বাড়ির কাউকে পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply