1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. admin@dailyamarsomoy.com : admin :
সুন্দরবনে চোরা হরিণ ‍শিকারী রুখবে কে? - দৈনিক আমার সময়

সুন্দরবনে চোরা হরিণ ‍শিকারী রুখবে কে?

সিরাজুল ইসলাম, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :
    প্রকাশিত : সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫

‘সুন্দরবন থেকে ফাঁদে আটক জীবিত হরিণ উদ্ধার’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত ‍হয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছেÑপশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে শিকারী চক্রের পাতা ফাঁদ থেকে শনিবার দুপুরে একটি জীবিত হরিণ উদ্ধার করেছে বনকর্মীরা। নিয়মিত টহলের সময় সুন্দরবনের ক্যানমারী খালের পার্শ্ববর্তী বন থেকে ফাঁদে আটকে থাকা অবস্থায় হরিণটিকে উদ্ধার করা হয়। এসময় উক্ত খাল থেকে একটি ডিঙি নৌকা জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে বুড়িগোয়ালীনি স্টেশন এলাকায় নিয়ে উক্ত হরিণকে অবমুক্ত করা হয়েছে।এর আগে ১০ মার্চ বাগেরহাটের মোংলায় সুন্দরবনের চোরা শিকারিদের ফেলে যাওয়া ৩০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করেছেন বনরক্ষীরা। বৌদ্ধমারী বাজার থেকে এই মাংস উদ্ধার করেন সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের বনরক্ষীরা। ১০ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরায় সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে একটি মৃত হরিণ, ১৬ কেজি হরিণের মাংস ও ৫০০ ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার করা হয়। সাতক্ষীরা রেঞ্জের কদমতলা ফরেস্ট স্টেশন কার্যালয়ের সদস্যরা এ অভিযান চালান। গত ১৫ জানুয়ারি রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের সত্যপীরের খাল এলাকায় ৩টি বস্তায় থাকা ৮০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা। তবে এ সময় পালিয়ে যায় শিকারিরা।এর আগে, ৭ জানুয়ারি দুপুরে মোংলার ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে ১১কেজি হরিণের মাংসসহ ৬জনকে আটক করে কোস্টগার্ড। তার আগে, গত ৩জানুয়ারি সকালে খুলনার কয়রা উপজেলার কালনা বাজার এলাকায় প্রায় ৩০ কেজি হরিণের মাংসসহ ইকবাল নামে এক তরুণকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন।বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের হরিণ শিকারে মেতে উঠেছে কয়েকটি চক্র। সম্প্রতি বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার এসব চক্রগুলো। এদিকে, গরু ও খাসির মাংসের তুলনায় হরিণের মাংসের দাম কম হওয়ায় সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকায় এই বন্যপ্রাণীর মাংসের চাহিদা বাড়ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর এবং বাগেরহাটের মোংলা ও শরণখোলার মানুষ বেশি হরিণ শিকার করে বলে অভিযোগ রয়েছে।সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় হরিণের প্রতি কেজি মাংস ৫০০ থেকে ৬০০টাকা, জেলা শহরে প্রতি কেজি হরিণের মাংসের দাম ১,০০০টাকা থেকে ২,০০০টাকা দাম নেওয়া হয়। এদিকে, হরিণ শিকার বন্ধে তথ্য প্রদানকারীকে বনের ভেতরের জন্য ২০হাজার টাকা এবং বনের বাইরে ১০হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা দেওয়া আছে।২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) জরিপের তথ্য মতে, বর্তমানে সুন্দরবনে ১লাখ ৩৬,৬০৪টি হরিণ রয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে হরিণের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার। সেই হিসেবে ১৯ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে হরিণ বেড়েছে ৫৩,৬০৪টি।খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা ও জোড়শিং এলাকায় হরিণ শিকারি চক্রের আধিপত্য বেশি। আর হরিণ পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বজবজা ও খাসিটানা বন টহল ফাঁড়ি এলাকা। এছাড়া মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানি, হড্ডা, বানিয়াখালী, শেখেরকোনা ও তেঁতুলতলার চর; কয়রা সদর ইউনিয়নের ৪নম্বর, ৫নম্বর ও ৬নম্বর কয়রা; উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পাথরখালী, কাটকাটা; মহারাজপুর ইউনিয়নের পূর্ব মঠবাড়ি, মঠেরকোনা গ্রাম হরিণশিকারি চক্রের তৎপরতা রয়েছে। দাকোপ উপজেলার ঢাংমারী, খাজুরা, বানীশান্তা, সুতারখালী ও কালাবগি গ্রামের চিহ্নিত হরিণ শিকারিরা রাতে ও দিনে দলবদ্ধভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করে নিয়মিত হরিণ শিকার করে।কয়রা উপজেলার ৩০টির বেশি চোরাশিকারি চক্র সুন্দরবনের হরিণ নিধন করছে। সুন্দরবনের, ৪টি রেঞ্জ সংলগ্ন গ্রামগুলোয় দেড় শতাধিক শিকারি দল রয়েছে। বিশেষ করে খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর এবং বাগেরহাটের মোংলা ও শরণখোলার মানুষ বেশি হরিণ শিকার করে।বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ হলেও আইন অমান্য করে সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ চিত্রা হরিণ শিকার করছে কয়েকটি চক্র। যে পরিমাণ হরিণের মাংস ও চামড়া আটক হয়, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি পরিমাণ হরিণ শিকার করা হয়। মাঝে মধ্যে দুই একটি অভিযানে হরিণের মাংস, চামড়া, মাথা উদ্ধার হলেও মূল চোরাশিকারি ও পাচারকারীরা আটক হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হরিণের মাংস বহনকারীরাই ধরা পড়ে। আর যারা আটক হন, তারা দুর্বল আইনের কারণে কয়েকদিন পর জেল থেকে ফিরে একই কাজে লিপ্ত হন।বনবিভাগের ভাষ্যমতেÑ শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের ভেতরে খাল ও নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হরিণের বিচরণ বেড়ে যায়। যে কারণে চোরা শিকারিরা এ সময় তৎপর হয়। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু শিকারের ঘটনা ঘটলেও সেটা আগের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম। অল্প জনবল দিয়ে এত বড় বনে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় বনবিভাগের। সুন্দরবন আমাদের সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com