সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধু আহরণের মৌসুম শুরু হওয়ার কথা আগামী ১ এপ্রিল থেকে। এ সময়ের মধ্যে খলিশা ও গরান ফুলের মধু পরিপূর্ণভাবে চাকে জমে ওঠে। এরপর আসে কেওড়া ফুলের মধু। তবে বন বিভাগের নির্ধারিত সময় শুরুর আগেই অসাধু ব্যক্তিরা জেলের বেশ ধরে বনে ঢুকে অপরিণত মধুর চাক কেটে নিচ্ছেন। এতে প্রকৃত মৌয়ালরা মৌসুমে কাঙ্খিত পরিমাণ মধু না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন|
সরেজমিনে সুন্দরবনসংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর, খুলনার কয়রা ও মোংলা এলাকার বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু ইতোমধ্যেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মধুর দাম ১,১০০ থেকে ১,২০০ টাকা। অথচ মৌসুম শুরুর আগে এভাবে মধু বাজারে আসার কথা নয়। প্রকৃত মৌয়ালরা বলছেন, মাছ ও কাঁকড়া ধরার অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করা কিছু অসাধু ব্যক্তি মধুর চাক কেটে বাজারজাত করছেন।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা এলাকার মৌয়াল কাশেম গাজী বলেন, আমরা সরকারি অনুমতি নিয়ে ১ এপ্রিল থেকে মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে প্রবেশ করব। অথচ এখনই বাজারে সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু পাওয়া যাচ্ছে। এর মানে হলো, কিছু লোক আগেভাগেই বনে ঢুকে অপরিণত মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করছে।
মধু সংগ্রহের মৌসুম শুরুর আগে অপরিণত চাক কেটে নেওয়ার কারণে মৌসুমের সময় মধুর উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন মৌয়ালরা। চাদনীমুখা গ্রামের অভিজ্ঞ মৌয়াল আব্দুল গফফার বলেন, একটি পরিপূর্ণ মধুর চাক থেকে পাঁচ থেকে সাত কেজি মধু পাওয়া যায়। কিন্তু আগাম মধু চুরি হওয়ায় এখন একটি চাক থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম মধু মিলছে। মৌসুম শুরুর সময় যদি এ অবস্থা থাকে, তাহলে আমাদের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ঋণ নিয়ে নৌকা ভাড়া করি, সরঞ্জাম কিনি, শ্রমিক নিই। কিন্তু যদি কাক্সিক্ষত পরিমাণ মধু না পাই, তাহলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। অনেক মৌয়াল এই মৌসুমেই ঋণের বোঝায় পড়ে যাবেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সুন্দরবনে চুরি করে মধু সংগ্রহের ঘটনা নতুন নয়। মাছ ও কাঁকড়া শিকারের আড়ালে একশ্রেণির ব্যক্তি নিয়মিত বনে ঢুকে মধু সংগ্রহ করছে। এ ছাড়া হরিণ শিকারসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমও চলছে। অথচ বন বিভাগ এসব বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
শ্যামনগরের এক মৌয়াল বলেন, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা সব জেনেও না জানার ভান করেন। তারা কিছু সুবিধা নিয়ে এসব চুরি চলতে দেন। যার কারণে প্রকৃত মৌয়ালরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তবে বন বিভাগ বলছে, তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সহকারী বন কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সুন্দরবনে বৈধভাবে মধু আহরণের অনুমতি দেওয়া হবে। মৌসুম শুরুর আগে কেউ অবৈধভাবে মধু সংগ্রহ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে মৌয়ালদের দাবি, শুধু মৌসুমের সময় নয়, সারাবছর বন বিভাগকে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। তা না হলে অসাধু চক্র আগাম মধু চুরি করে প্রকৃত মৌয়ালদের ক্ষতির মুখে ফেলবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে। অবৈধ অনুপ্রবেশ ও আগাম মধু চুরির বিরুদ্ধে কঠোর মনিটরিং এবং আইনি ব্যবস্থা না নিলে প্রকৃত মৌয়ালরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যা তাদের জীবিকা ও সুন্দরবনের প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
Leave a Reply