1. admin@gmail.com : দৈনিক আমার সময় : দৈনিক আমার সময়
  2. admin@dailyamarsomoy.com : admin :
সাতক্ষীরায় সোনালি মুকুলে দোল খাচ্ছে ১৪হাজার আম চাষীর স্বপ্ন - দৈনিক আমার সময়

সাতক্ষীরায় সোনালি মুকুলে দোল খাচ্ছে ১৪হাজার আম চাষীর স্বপ্ন

সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
    প্রকাশিত : রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

শীতের কুহেলি কেটে বসন্তের গানের মৌবনে বইছে ফাল্গুনী হাওয়া। বন মোদিত ফুলবাসে ফিরে আসার আহ্বানে মাতাল হাওয়ায় কুসুম বনের বুকের কাঁপনে, উড়াল মৌমাছিদের ডানায় ডানায়, নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে উঠবার আভাসে আর বনতলে কোকিলের কুহুতান জানান দিয়েছে —বসন্ত জাগ্রত দ্বারে…। তাই তো বনে বনে ফুল ফুটেছে, দোলে নবীন পাতা। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে আম্র মুকুল।

সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি জেলায় মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে আম বাগান। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পরাগের পাগল করা ঘ্রাণ। কবির ভাষায়— “ফাল্গুনে বিকশিত, কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত, আম্রমুকুল। চঞ্চল মৌমাছি, গুঞ্জরি গায়, বেণুবনে মর্মরে, দক্ষিণবায়।”

বাংলার প্রকৃতিতে সবে এসেছে বসন্ত। কিন্তু মাঘের মাঝামাঝিতেই ফলের রাজার মুকুল ফুটেছে গাছে গাছে। আমের মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুখরিত এখন সাতক্ষীরা। গাছে গাছে দুলছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে সেই মুকুলের উতাল করা ঘ্রাণ। শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্র আমগাছ তার মুকুল নিয়ে সোনালি রঙ ধারণ করে সেজেছে এক অপরূপ সাজে। তবে গতবছর প্রথম থেকেই বৈরি আবহাওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছিলেন আম চাষীরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সাতক্ষীরা জেলায় পাঁচ হাজার আম বাগান রয়েছে। আমের চাষ হয়েছে চার হাজার এক শত আঠারো হেক্টর জমিতে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

গত মৌসুমে জেলার আম বাগানগুলোর অধিকাংশ বাগানে আশানুরূপ আমের মুকুলের দেখা মেলেনি। গত মৌসুমের তুলনায় এবার জেলার আম বাগানগুলোতে দ্বিগুণ মুকুল এসেছে। আমের এই সোনালি মুকুলে জেলার প্রায় ১৫ হাজার আমচাষীর স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। তাই তারা আম বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে রয়েছে আরও কয়েক হাজার আমচাষি।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় ৪হাজার ১১৮হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। গড় ৬০টাকা কেজি ধরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিকটন আমের বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা।

জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ পর্যায়ের আম চাষীরা জানান, তাদের আম বাগানগুলোতে মুকুল শোভা ছড়াচ্ছে। মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে বাগানগুলো। প্রায় জেলার ৯৫ শতাংশ আমগাছ মুকুলে শোভা পাচ্ছে। এরমধ্যে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, লতা, আশ্বিনা, গোবিন্দভোগ, কালীভোগ, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে।

কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করছেন জানিয়ে আম চাষীরা জানান, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারণে সাতক্ষীরার বাগানগুলোতে আগাম মুকুল আসে। রাজশাহী অঞ্চলের বাগানগলোর অন্তত ১৫/২০ দিন আগে সাতক্ষীরা অঞ্চলের বাগানে মুকুল আসে। ফলে সাতক্ষীরা অঞ্চলের আমও রাজশাহী অঞ্চলের তুলনায় ২৫/২০ দিন আগে পাকে। এ কারণে সাতক্ষীরার আমের প্রতি আলাদা চাহিদা রয়েছে বাজারে।

আইয়ুব হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, পথিক হোসেন, ফারুক হোসেন ও রবিউল ইসলামসহ একাধিক আম চাষি জানান, মুকুল আসার আগে আম গাছের পরিচর্যা নিতে হয়। ইতোমধ্যে মুকুল সংরক্ষণ নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। এবার কিছুটা আগে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। গাছগুলোতে মুকুল আশাতেই সাতক্ষীরার বাইরের ব্যবসায়ীরা আসছেন এবং বাগানে বাগানে গিয়ে খবর নিচ্ছেন। আবার অনেকে আগাম আমবাগান কিনছেন।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এবার সাতক্ষীরা জেলার ৪হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হচ্ছে। যা থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষিবিভাগ। ইতোমধ্যেই আমের মুকুল এসেছে, এইসময়ে সাধারণত হুপার পোকা আক্রমণ করে। যার কারণে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়া বিচিং পদ্ধতিতে সেচ না দেওয়ার কারণে মুকুল শুকিয়ে ঝড়ে পড়ে। এগুলো থেকে রক্ষা পেতে ও ফলন ভালো পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমচাষিদের সবধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

জেলা জুড়ে রয়েছে আমের বাগান। শেষ মাঘের শীতেই সাতক্ষীরার গ্রাম শহর ও শহরতলীতে আসতে শুরু করেছে আমের মুকুল। বিভিন্ন বাগানের গাছে গাছে নানা জাতের আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ। সব গাছে এখনো মুকুল না এলেও অধিকাংশ গাছে এসেছে। কালবৈশাখীসহ কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চাষীদের আশা—এবার আমের ভালো ফলন হবে।

তবে প্রকৃতির নিয়ম মেনে শেষ মাঘে যেসব গাছে মুকুল আসবে সেসব গাছে মুকুল স্থায়ী হবে বলে জানান সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ। আমের মুকুল টিকিয়ে রাখতে এখন বাগানে বাগানে পরিচর্যায় ব্যস্ত মালিক ও ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ উন্নত পদ্ধতিতে আম চাষ ও রক্ষণাবেক্ষণের নানা পদক্ষেপ নিতে কাজ করছেন।

প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জাতের আমের ভালো রং দাম ও ফলন পাওয়া যায়। তবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষ করলে যেমন উৎপাদন বাড়বে, তেমন সার্বিকভাবে সংরক্ষণ, পরিবহন ও রপ্তানিসহ বাজারজাত করতে পারলে কৃষক ব্যাপক লাভবান হবেন। এমনটাই বলছেন কৃষি অফিসের কর্মকর্তাগণ। অন্যদিকে আম রপ্তানিতে সরকারের পৃষ্ঠপোঘকতা ও প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়ার আশা করছেন আম ব্যবসায়ীরা।

আবহওয়া ও জাতের কারণে মূলত নির্ধারিত সময়ের আগে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। তিনি আরো জানান, জেলাই ৫হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় সাতক্ষীরার আম রপ্তানি হয় বিদেশে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
© All rights reserved © dailyamarsomoy.com