সাগরের নীল সাঁতারু কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। ইনস্টিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎসা ও প্রযুক্তি কেন্দ্রে সম্প্রতি এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
গবেষক দলে ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ও তোরাবুর রহমান। পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় এখন হ্যাচারিতে সাঁতারু কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন সম্ভব হবে এবং চাষাবাদ করা যাবে। ব্লু-ইকনোমি বা সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ অর্জনের ফলে দেশে কাঁকড়া চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে আশা করা হচ্ছে।
বিএফআরআই সূত্রে জানা গেছে যে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় তিন প্রজাতির সাঁতারু কাঁকড়া রয়েছে। এর মধ্যে স্বাদ ও খাদ্যমান বিচারে নীল সাঁতারু কাঁকড়ার চাহিদা ও বাজারমূল্যও বেশি। পুষ্টিমান বিবেচনায় নীল সাঁতারু কাঁকড়াতে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রোটিন থাকে। এই কাঁকড়া ফুল কাঁকড়া, নীল কাঁকড়া, নীল মান্না কাঁকড়া নামেও পরি
জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, মোজাম্বিক, কেনিয়া, ইসরাইল, লেবানন, তুর্কি, সাইপ্রাস, অস্ট্রেলিয়া এবং ফিজি বাণিজ্যিকভাবে নীল সাঁতারু কাঁকড়া আহরণ করে থাকে। বঙ্গোপসাগরে এই কাঁকড়া মূলত কক্সবাজারস্থ এলিফেন্ট পয়েন্ট, টেকনাফ, শাপলাপুর, সোনাদিয়া দ্বীপ, শাহ্পরীর দ্বীপ ও মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চলে মাছের সঙ্গে আহরিত হয়। বর্তমানে শীলা কাঁকড়ার পাশাপাশি নীল সাঁতারু কাঁকড়া বিভিন্ন গ্রেড অনুযায়ী রেস্তোরাঁয় বিক্রি হয় এবং জনপ্রিয় সি-ফুড হিসেবে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এটি খেতে সুস্বাদু এবং দক্ষিণ এশিয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রাকৃতিক জলাশয়ে এর উৎপাদন ক্রমহ্রাসমান। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গত দুই বছর যাবত্ নীল সাঁতারু কাঁকড়া নিয়ে কক্সবাজার কেন্দ্রে গবেষণা পরিচালনা করেন।
এ প্রসঙ্গে গবেষক দলের প্রধান ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেন, নীল সাঁতারু কাঁকড়া স্বজাতিভোজী বৈশিষ্টে্যর হওয়ায় এর পোনা বাঁচিয়ে রাখাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, বিশ্বে এ পর্যন্ত এই কাঁকড়ার পোনা বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ হার ৮ থেকে ৯ শতাংশ। পোনা বাঁচার হার বৃদ্ধির ওপর আরো
সাঁতারু কাঁকড়ার পোনা উত্পাদনে সফলতা প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রচলিত মৎস্যসম্পদের উন্নয়নের পাশাপাশি অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ সিউইড, কাঁকড়া, ওয়েস্টার, শামুক, ঝিনুক, কুঁচিয়া ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ সাঁতারু কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে সাফল্য পাওয়ায় পোনা প্রাপ্তি ও চাষাবাদ সহজতর হবে এবং উত্পাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদেশে এই কাঁকড়া আরো বেশি করে রপ্তানি করা যাবে।
Leave a Reply