শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে রেইনবো ই-কমার্স লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সারাজীবনের জমানো সঞ্চয় হারিয়ে এখন নিঃস্ব প্রায় দেড় হাজার পরিবার। মেয়াদ পূর্ণ হলেও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরৎ না দিয়েই উল্টো আরও অর্থ বিনিয়োগ করে অফিস ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রতারক চক্রের বেতনভূক্ত সদস্যরা। ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীদের এসব অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নামে আমাদের জাতীয় দৈনিক আমার সময়-এর অনুসন্ধানী টিম। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ১ম পর্ব দৈনিক আমার সময় মাল্টিমিডিয়া বিভাগে প্রচারিত হবার পর শত শত ক্ষতিগ্রস্থ ভূক্তভোগীরা অভিযোগ জানিয়েছেন আমাদের অনুসন্ধানী টিমকে। ডেসটিনি, ই-ভ্যালি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বন্ধু মিতালি কিংবা সমতা পারভীনের মতো রেইনবো ই-কমার্স লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটিও প্রতারণার শীর্ষে বলা জানান ভুক্তভোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক সুদমুক্ত অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে এসব অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘিসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায়। রেইনবোর প্রতারণায় পথে বসা এসব ভুক্তভোগীরা জানান, দুপচাঁচিয়ার ধাপ-সুখানগাড়ি রহমানিয়া মাদ্রাসার বড় হুজুর আব্দুর নুর ও তার স্ত্রী রেইনবোর এজিএম সেলিনার প্রলোভনে পড়ে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা তাদের হাতে তুলে দেন।
লিটন নামের একজন ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগী দৈনিক আমার সময়-কে জানান, আব্দুর নুর ও সেলিনা আকতারের মিষ্টি মিষ্টি কথায় সে রেইনবো ই-কমার্স লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখেন। চাকুরীজীবি থেকে শুরু করে রেইনবোর প্রতারণার হাত থেকে বাদ যায়নি- গ্রামের সহজ সরল কৃষক, চাষা, ভ্যানওয়ালা, প্রতিবন্ধী, গৃহিণী, বিধবা কিংবা ব্যবসায়ী।
মোস্তফা নামের ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান চালক একজন প্রতিবন্ধী দৈনিক আমার সময়-কে বলেন, মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জমিয়েছিলেন তিনি। সেই টাকা সরল বিশ্বাসে সেলিনা আকতারের কথামতো রেইনবোতে রেখে চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ঘুরেও টাকা আর ফেরৎ পাচ্ছেন না!
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত গুলিবিদ্ধ মিলন দৈনিক আমার সময়-কে বলেন, বড় হুজুর আব্দুর নুর ও তার স্ত্রী সেলিনার কথাতে টাকা রেখে এখন মেয়াদ পূর্ণ হলেও টাকা ফেরৎ পাচ্ছেন না। টাকার অভাবে তিনি চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
ভুক্তভোগীরা জানান, রেইনবো ই-কমার্স লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আমিরুজ্জামান পিন্টুর ইশারায় প্রায় দেড় হাজার বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের মূল সহযোগী বড় হুজুর আব্দুর নুর ও তার স্ত্রী সেলিনা আকতার।
ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগীরা দৈনিক আমার সময়-কে বলেন, গ্রাহকদের এসব অর্থ আত্মসাৎ করে রেইনবোর চেয়ারম্যান বগুড়ার আমিরুজ্জামান পিন্টু এবং দুপচাঁচীয়ার ধাপ-সুখানগাড়ীর আব্দুর নুর-সেলিনা দম্পতি নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদের পাহাড়।
আলমগীর নামে একজন দৈনিক আমার সময়-কে বলেন, তার বাবা আব্দুর রহমান একজন বিনিয়োগকারী। তার বাবা জমানো অর্থ বারংবার উত্তোলোনের চেষ্টার পরও ব্যর্থ হয়ে স্ট্রোক করে মারা যান বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এসময় তিনি আরও জানান- বিপুল পরিমান অর্থ বিদেশেও পাচার হয়েছে এবং এসব অর্থ লোপাটের সাথে জড়িত অপরাধীরাও যেকোন সময় বিদেশে পালিয়ে যাবেন।
ইউসুফ নামের আরেক স্ট্রোক করা ভূক্তভোগী দৈনিক আমার সময়-কে বলেন, তার পরিবারের সদস্যদের বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমান ৬০ লক্ষ টাকারও বেশী। বর্তমানে বিনা চিকিৎসায় পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পার করছেন তিনি। চিকিৎসার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা চেয়েও তিনি টাকা পাননি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ইউসুফের মতো অসুস্থ মাজে কিংবা স্বামীহারা বিধবা, বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী মোস্তফা এবং গুলিবিদ্ধ মিলনের মতো দেড় হাজারেরও বেশী বিনিয়োগকারী রেইনবোর প্রতারণার হাত থেকে রেহায় পায়নি। সারা জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে এখন নিঃস্ব তারা সকলেই। মাসের পর মাস ঘুরেও বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরৎ না পাওয়ায় চরম হতাশায় দিন কাটছে এসব বিনিয়োগকারীদের। টাকা ফেরৎ পাবার আশায় দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন তারা। এসময়, তাদের মাঝে চরম ক্ষোভও দেখা যায়।
আদমদীঘি, বিহিগ্রাম এবং চাঁপাপুর ঘুরেও রেইনবোর কোন অফিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। বগুড়া ও দুপচাঁচিয়ায় রেইনবো ই-কমার্স লিমিটেডের অফিসেও তালা ঝুলছে। রেইনবো হাসপাতালে গিয়েও সন্ধান পাওয়া যায়নি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আমিরুজ্জামান পিন্টুর। মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি, ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া মেলেনি। বিকল্প উপায়ে রেইনবো ই-কমার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান তথ্য জানানোর কথা বললেও কোনপ্রকার তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করেননি।
তবে, এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির এজিএম সেলিনার দেয়া তথ্য জানা যায়- কোটি কোটি টাকা গ্রাহকরা পাবে। প্রতিষ্ঠানটি যদি গ্রাহকেরা ধরে রাখতো তাহলে ৬০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে পারতো। আদমদীঘি, বিহিগ্রাম এবং চাঁপাপুরে রেইনবোর অফিস বন্ধ হয়ে গেছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
এসকল অভিযোগের সত্যতা জানতে মাদ্রাসার বড় হুজুর আব্দুর নুরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজী হননি। আব্দুর নুর দৈনিক আমার সময়-কে বলেন, গ্রাহকরা আইনগত ব্যবস্থা নিলে তার কোন আপত্তি নাই। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি মিথ্যা বলে জানান। তবে, গ্রাহকরা টাকা পাবে এটাও স্বীকার করে বলেন, খুব সমস্যা। গ্রাহকরা জমানো টাকা পাবে কিন্তু প্রতিষ্ঠান দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়ার পথে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাত করে বিপুল পরিমান সম্পদ গড়ে তুলেছেন এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন- এসব সম্পত্তি তার স্ত্রীর বেতনের টাকা ও স্ত্রীর বাপেরবাড়ির সম্পদ বেচে জায়গা-জমি, বাড়ি, মার্কেট, দোকানপাট, ছেলেকে তেলের মিল বসিয়ে দিয়েছেন। এগুলো সব তার স্ত্রীর বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে, এসব লেনদেন নিয়ে সংবাদে তার স্ত্রীর নাম লেখার কথা জানালেও তার নিজের নাম না লেখার জন্য বলেন তিনি।
এসময়, সংবাদে তার নাম আসলে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রোটেকশন নেয়ারও হুমকি দেন আব্দুর নুর।
থানা সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে, ভূক্তভোগীরা বলছেন ভিন্ন কথা। ক্ষতিগ্রস্থদের বিনিয়োগকারীদের মাঝে হতাশা, ক্ষোভ এবং চরম উত্তেজনা দেখা গেছে। আমাদের অনুসন্ধানী টিমের অনুসন্ধানে রেইনবো ই-কমার্স লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটির নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও ভয়ঙ্কর প্রতারণার মতো আরও চমকপ্রদ ব্যাপক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সে সব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে চোখ রাখুন জাতীয় দৈনিক আমার সময়-এর পাতায়।
(উক্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট অভিযোগ, তথ্য, প্রমাণ, সাক্ষাৎকার, অডিও-ভিডিওচিত্র, দলিলপত্রসহ সকল তথ্যাদি কর্তৃপক্ষের নিকট সংরক্ষিত রহিয়াছে! যা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে!
Leave a Reply