মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাজাপুর গ্রামের সিংহভাগ মানুষই ছিল তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত। গ্রামের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছার কদর ছিল দেশজোড়া। তবে বর্তমান সময়ে ইলেক্ট্রিক তাঁত ও মানুষের পোশাকে-আশাকে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় জৌলুস হারাতে বসেছে রাজাপুরের তাঁতশিল্পে।
তাঁতিরা জানান, সুতার দাম বেশি ও ইলেকট্রিক তাঁত না থাকায় তাদের বাপদাদার পৈতৃক ব্যবসা গোটাতে হচ্ছে। এ শিল্প এখন বাঁচাতে হলে চাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
সরোজমিন জানা দেখা যায়, আগের মতো আর কর্মব্যস্ততা নেই রাজাপুর গ্রামের তাঁতপল্লিতে। এ গ্রামে প্রায় চারশটি তাঁতি পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে বর্তমানে ২৫-৩০ শতাংশ মানুষ এখনও তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত। ১০-১৫ বছর আগেও তাঁতপল্লি ঘিরে ছিল চরম ব্যস্ততা। দেশের বড় বড় কাপড়ের বাজারসহ এতদঞ্চলের কাপড়ের সবচেয়ে বড় বাজার পোড়াদহের দখল ছিল রাজাপুরের তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছায়। বর্তমানে রাজাপুরের সেই অবস্থা আর নেই। কারণ বস্ত্র তৈরির ইলেকট্রিক আধুনিক যন্ত্রপাতি, ফ্যাশনে ভিন্নতা, পোশাকে-আশাকে আধুনকিতার ছোঁয়া হাতে তৈরি তাঁত শিল্পকে হার মানিয়েছে। এখন কেউ কেউ শুধু গামছা তৈরি করে বাপ-দাদার পেশাটি টিকিয়ে রেখেছেন। বাকি তাঁতিরা বাধ্য হয়ে রুটিরুজির তাগিদে পেশা বদল করেছেন। এমতাবস্থায় রাজাপুরের তাঁতিতের দাবি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বা স্বল্প সুদে ঋণ পেলে ইলেক্ট্রিক আধুনিক তাঁত কিনতে পারবে তারা। তাহলে সুদিন ফিরে আসবে রাজাপুরের তাঁতপল্লিতে।
গ্রামের বৃদ্ধ তাঁতি ইলিয়াস হোসেন দৈনিক আমার সময়কে বলেন, পরিবারের সবাই মিলে প্রতিদিন ১০টি গামছা বুনে ৫শ টাকায় বিক্রি করি। ৩শ টাকা খরচ বাদ দিলে ২শ টাকা থাকে। এতে মহাজনের কাছে ঋণী হয়ে যাচ্ছি। ফলে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাপদাদার আমলের তাঁত ব্যবসা গোটাতে হচ্ছে। আমরা অন্য কোনো কাজ বুঝি না বা জানি না তাই বাধ্য হয়ে পরিবারের সবাই মিলে ওই ২শ টাকা আয় করার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। এই টাকায় কোনো রকমে চাল, ডাল, রুটিরুজির ব্যবস্থা করে থাকি। লজ্জায় কারো কাছে হাত পাততে পারি না, কেউ কোনো সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে না।
গ্রাম উন্নয়নের নারী নেত্রী সেলিনা খাতুন বলেন, আমরা আদি কারিগর। বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক শিল্পের জন্য হস্তচালিত তাঁত বন্ধ হতে চলেছে। সরকারি সহায়তা পেলে তাঁত শিল্পের সুদিন আবার ফিরে আসত।
রাজাপুর গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের হস্তচালিত তাঁত কুটির শিল্পের কারণে এ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। এখন ইলেক্ট্রিক পয়েন্টের তাঁত শিল্পের যুগ। সরকার থেকে প্রণোদনা বা ঋণ দিয়ে যদি আমাদের ইলেকট্রিক পয়েন্টে তাঁতের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে এ শিল্প আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠত। আমাদেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতো।
মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, রাজাপুরের তাঁতিদের তৈরি কাপড় এলাকার ব্যাপক চাহিদা মেটাত। অথচ নানা কারণে তাঁতিরা এখন তাদের আদি পেশা বদল করছেন। অনেকেই পুঁজি হারিয়েছেন, ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এমতাবস্থায় আমি তাদের জন্য সরকারি ঋণ ও প্রণোদনা যাতে পায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেব। এছাড়া আমার ব্যক্তিগত সহায়তা তাদের জন্য থাকবে। যাতে তাঁতের সেই সুদিন আবার ফিরে আসে।
Leave a Reply