মিয়ানমারের রাখাইনে গোলাগুলি, সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। তবে তারা যাতে ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক পাহারায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এরপরও নাফ নদীর ওপারে অর্ধশতাধিক নৌকায় দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
তবে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ বাসিন্দাদের দাবি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড কার্যত অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারছে না। নাফ নদীতে কড়া নজরদারি ও পাহারা থাকলেও দেশের চলমান পরিস্থিতির সুযোগে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে।
বিজিবি ও কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের দাবি, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা সামান্যই। রোহিঙ্গা বোঝাই অনেক নৌকাকে অনুপ্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং অনেক রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পরপরই অস্থিরতা তৈরিতে সুযোগ নেন রোহিঙ্গারা। মাঠ প্রশাসন না থাকায় সীমান্তের কিছু দালাল টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের নাফনদী পাড়ি দিতে সহোযোগিতা করার অভিযোগ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
সর্বশেষ টেকনাফ গেল ৫ আগস্ট রাতে দালালের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকালে শাহপরীরদ্বীপের কাছাকাছি রোহিঙ্গাবুঝাই দুইটি ট্রলারডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩১ রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পরপরই দেশে অস্থিরতা তৈরিতে সুযোগ নেন সীমান্তের কিছু দালাল। ৫থেকে ১০হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে সুযোগ করে দিচ্ছে। সরকার পতনের দিন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে বোড ডুবে ৩১ রোহিঙ্গার মরদেহ ভেসে আসে।এসময় দুইজকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। নাফনদীতে এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষা করছে।
টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসাইন খোকন বলেন, কিছু অসাধু লোক সাগর পথে মিয়ানমারে প্রতিনিয়ত পাচার করছে জ্বালানি তেলসহ নানা পণ্য। তারা যে বোট দিয়ে এসব পণ্য নিয়ে যায় ফিরার পথে রোহিঙ্গা নিয়ে আসে।এইরকম আমি শতাধিক রোহিঙ্গা বোটসহ আটক করেছি।
টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, গত কয়েক দিনে ১৫-২০টি মরদেহ টেকনাফের বিভিন্ন জায়গায় ভেসে আসে।তবে মরদেহ গুলো কোথায় থেকে আসছে সেটি সম্পর্কে সুষ্পষ্ট কোন তথ্য পাইনি। কোটা সংস্কার আন্দোলন চালাকালে সীমান্তে কোন ধরনের প্রভাব পড়েনি।তবে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল পরে তাদের আটক করে প্যাুশব্যাক করা হয়েছে। নাফনদীতে অনেক মায়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে ঢুকার অপেক্ষায় আছে।তবে বিজিবি সর্তক অবস্থানে আছেন।
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে এইরকম কিছু রোহিঙ্গার খোঁজ পাই প্রতিবেদক।
টেকনাফ লেদা ২৪ নম্বর ক্যাম্পে অনুপ্রবেশ করা মায়ানমারের নাগরিক আসমত উল্লাহ এর সাথে কথা হয়।তিনি জানান, ৬আগস্ট টেকনাফ নয়াপাড়া সীমান্তে দিয়ে বাংলাদেশে আসেন।রফিক নামে এক বাংলাদেশী জেলেকে ৮হাজার টাকা দিয়ে তার পরিবারের ৩ সদস্য নাফনদী পাড়ি দিয়ে লেদা ক্যাম্পে আসেন।এবং এই মূহুর্তে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, কিছু জেলে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে সহোযোগিতা করছে।এবং প্রতিদিন অনেক রোহিঙ্গা বিনা বাঁধায় প্রবেশ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
Leave a Reply